নিজস্ব প্রতিবেদক ।।
ফরিদপুর জেলাধীন মধুখালী থানায় ২৩/০৪/২০২৪ ইং তারিখে পঞ্চপল্লীতে ২ (দুই) জনকে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশাল বিপ্লব সমাবেশ করেন সাধারন জনগন। এ সময় ডিউটিরত ছিলেন পুলিশ। এক পর্যায়, জন সাধারণ উত্তেজিত হলে পুলিশ বাধা দেয় এবং মির্জা মিলন তার লোকজন নিয়ে পুলিশের উপর আক্রমন করে এবং পুলিশের গাড়ি ভাংচুর করেন। পুলিশের কাজে বাধা ও পুলিশের গাড়ি ভাংচুর করায় মধুখালী থানার পুলিশ বাদি হয়ে মির্জা মিলনসহ একাধিক ব্যক্তির নামে মামলা করেন। সে মামলা হবার পর ফরিদপুর ডিবি পুলিশ মির্জা মিলনকে গ্রেফতার করেন। সুত্রে জানা যায়, সন্ত্রাসী মিলন বর্তমানে জেল হাজতে আছে।
কে এই কুখ্যাত সন্ত্রাসী মির্জা মাজহারুল ইসলাম মিলন? অনুসন্ধানে জানা যায়, মির্জা মিলনের সব ভয়ংকার সন্ত্রাসী কার্যক্রমের তথ্য। মধুখালী থানার গোন্দারদিয়া গ্রামে জন্ম। তার বাবার নাম মির্জা আকরাম। মির্জা মিলনসহ তারা দুই ভাই। বড় ভাইয়ের নাম মির্জা লোটাস। বড় ভাই লোটাস মির্জা কোন চাকুরি করেন না। কোন ধরনের ব্যবসাও নাই। ৭/৮ বছর পূর্বে একজন চায়ের দোকানদারকে গরম পানি ঢেলে দেয় এবং সেই ঘটনায় মামলাও হয়। পরে তিনি বিদেশ পাড়ি জমান।
মিলনের বিষয় অনুসন্ধানকালে জানা যায়, মির্জা মিলন মাধ্যমিকও পাশ করেনি। মিলনের শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলেও ক্ষমতার বলে সন্ত্রাসী চাঁদাবাজি করে অবৈধ ভাবে টাকার পাহাড় বানিয়ে হয়ে যান মিলন থেকে মির্জা মাজহারুল ইসলাম মিলন। শুধু তাই নয়, মিলন মির্জার শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় জীবনে বড় কোনো সরকারী চাকুরি পাননি, তিনি ফরিদপুর মধুখালীতে অবস্থিত ফরিদপুর সুগার মিলস লি. এ চাকুরি পেয়েছিলেন ট্রলির হেলপার হিসাবে। একজন হেলপারের বেতন ছিলো ছয় হাজার টাকা। আরও খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোন দিন তিনি হেলপারের ডিউটি ঠিক মতো পালন করতেন না। কিন্তু সে প্রতিমাসে সুগার মিলের বেতন ঠিকঠাক উত্তোলন করতেন। আরও জানা যায়, তার চাচা মরহুম মির্জা মনিরুজ্জামান বাচ্চু থানা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং মিলনের বাবা মির্জা আকরাম হোসেন সে সময় সুগার মিলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। বাবা ও চাচার সহযোগিতায় সুগার মিলে হেলপারের চাকুরি প্রাপ্ত হন মিলন। ছয় হাজার টাকার বেতনের চাকুরি করে কিভাবে হলো কোটি কোটি টাকার মালিক এই প্রশ্ন সাধারণ জনগনের মনে !
একাধিক সূত্রে জানা যায়, মিলনের অবৈধ টাকার মালিক হবার পিছনের কিছু তথ্য। মির্জা মিলন অনেক বছর আগে থেকেই দলীয় ও স্থানীয় প্রভাব বিস্তার শুরু করে। মির্জা মিলনের বাড়ি মধুখালী বাজার কেন্দ্রীক হওয়ায় বাড়ির মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ সহজেই করতে পারতো। প্রথমে মাদক ব্যবসা শুরু করেন, পরে গড়ে তোলেন বিশাল এক সন্ত্রাসী বাহিনী। এরপর শুরু হয় মাস্তানি, চাঁদাবাজি, জমি দখল ও বড় ধরনের চুরিসহ ভয়ংকার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। অল্পদিনেই হয়ে যান কোটি কোটি টাকার মালিক। সাধারণ জনগন মিলন বাহিনীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েন। কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না, কারন মিলনের আপন চাচা মির্জা মনিরুজ্জামান বাচ্চু আওয়ামীলীগের নেতা, তার চাচার ছত্রছায়াতেই চালাতো সব ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড। কেউ যদি কোন ধরনের কোন বিষয়ে প্রতিবাদ করতো তাহলে মিলন বাহিনী তার পার্সনাল আদালতে ধরে নিয়ে চালাতো নির্মম শারীরিক নির্যাতন। তার আদালতের নাম ছিল টর্চার সেল। যেটা একটা টিভি চ্যানেলের প্রতিবেদনে প্রতিদিন সন্ধ্যায় দেখানো হতো। টিভি চ্যানেলের নাম ছিলো বিজয় টিভি। সে সময় যদি মিলেনর বাহিনরীর কোনো সদ্যসের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতো তাহলেও সেই প্রতিবাদকারীকে ধরে নিয়ে করা হতো অমানুষিক শারীরিক নির্যাতন এবং দাবি করা হতো মোটা অংকের টাকা। যদি কেউ টাকা দিতে না পারতো তাহলে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দিতো। এমনকি খুনও পর্যন্ত করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করতো না।
তখন মধুখালী বাসী এতটা অসহায় হয়ে পড়ে যে, সাধারন মানুষ তাদের স্বাধীনতাটুকু হারিয়ে ফেলেন। মির্জা মিলনের বড় শক্তি ছিলো তৎকালীন জননেতা জনাব আব্দুর রহমান (এমপি)। তখন এমপি এবং চাচা উপজেলা চেয়ারম্যান অথ্যাৎ মিলনের চাচার নামের উপর ক্ষমতা বিস্তার করে চালাতো সব ধরনের অপরাধ। মির্জা মিলন বাহিনীর সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাতে যাতে কোন বাধা না আসে সেই কারনে এমপি আব্দুর রহমানের সঙ্গে লোক দেখানোর জন্য বিভিন্ন মিটিং মিছিলসহ সো-ডাউনে নিজের কিছু বাহিনী নিয়ে যেত এবং আব্দুর রহমানের সঙ্গে ছবি তুলে ফেইসবুকে প্রচার করতো প্রিয় অভিভাবক সম্বোধন করে। যা (এমপি) জননেতা জনাব আব্দুর রহমান কিছুই জানতেন না। কিন্তু অবশেষে সব সত্য চলে আসে সাধারণ জনগনের সামনে।
বিগত একট্রাম জননেতা জনাব আব্দুর রহমান এমপি নমিনিশন পেলেন না। ঠিক সেই মুহুর্তে মির্জা মিলন ও তার চাচা তখনকার মধুখালী উপজেলার চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান বাচ্চু মিলে আব্দুর রহমানকে বাদ দিয়ে নিজেদের স্বার্থে তখন (এমপি) বুলবুল আহমেদ এর সঙ্গে যোগ দেন। মির্জা পরিবারটা বরাবরই সুবিধাবাদী। কেননা মির্জা মিলন সর্বদা ক্ষমতাশীল লোকের সাথে সঙ্গ দেন। ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে নাম না বলা শর্তে মধুখালী পৌরসভার এক কমিশনার বলেন, মিলন আমাকে বলেছিল এবছর আব্দুর রহমান নমিনেশন পাবে না। তাই এবার দোলন সাহেবের সঙ্গে থাকবেন এবং মধুখালী থানা হতে দোলনকে জয়ী করবেন। কিন্তু ঘটনা ঘটলো বিপরীত। দলীয় নমিনেশন পেলেন আব্দুর রহমান। তখন মিলন আব্দুর রহমানের হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা হিসাবে পোস্টার ব্যানার এবং সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহার শুরু করে। রাতারাতি স্যোসাল মিডিয়ায় বনে যায় প্রিয় অভিভাবক আব্দুর রহমান। অথচ দোলনের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে চুক্তি করেন মধুখালী উপজেলা হতে দোলনকে জয়ী করার। কিন্তু মিলনের সেই স্বপ্ন পুরন হয়নি।
বর্তমানে মির্জা মিলন মধুখালী বনিক বাজার সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন। বাজার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, আমরা আজ সবকিছু হারিয়ে সর্বশান্ত। কেননা বাজারের বড় বড় দোকান গুলো মিলনের নেতৃত্বে রাতে চুরি করা হয়। প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও আমরা প্রশাসনের কাছে মুখ খুলতে পারি না। আজ কিছু বললে আগামী কাল আমার মৃত দেহ কোথায় পরে থাকবে আল্লাহ ভালো জানেন। অন্যদিকে প্রশাসনও তেমন কোন পদক্ষেপ নেননি। ফরিদপুর সুগার মিলস লি. এর বর্তমান সাধারণ সম্পাদক এই মির্জা মিলন। তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হবার পর মিলের পুরাতন ক্যাজুয়াল শ্রমিকদের চাকুরিচ্যুত করেন এবং অর্থের বিনিময়ে নতুন লোক নিয়োগ দেন। চাকুরিচ্যূত শ্রমিকদের মধ্যে কিছু সংখ্যক শ্রমিক কোর্টে মামলা করেছে বলে জানা যায়।
মধুখালী থানায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মির্জা মিলনের নামে ডজনের বেশি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একাধিক হত্যা মামলাও রয়েছে। মামলা নং হলো- জিআর-৯২/২০২৪; জিআর-১৪২/২০০৯; জিআর-৫৩/২০০৭; জিআর-৯২/২০১০; জিআর-৬৪/২০১৪।
প্রশ্ন হলো মির্জা মিলনের নামে এতো গুলো মামলা থাকার পরও দিনের পর দিন বছরের পর বছর কি ভাবে প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করেন? জানা যায়, চাচা মির্জা মনিরুজ্জামান বাচ্চু ইন্তেকালের পর মিলনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড প্রকাশ্যে কিছুটা কম দেখা যায়। তবে গোপনে ঠিকই তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড অব্যাহত রেখেছেন। মির্জা মিলনের পরিবারের খবর জানতে গিয়ে বের হয় আরও অজানা তথ্য। বৈধ্য সম্পর্কের জের ধরে রয়েছে মিলনের একাধিক স্ত্রী। সন্ধ্যার পর নিজ বাড়ি বা হোটেল অথবা অন্য কোন স্থানে নারী নিয়ে মাদক সেবনে মেতে উঠেন। মিলনের নজরে পড়া কোন নারী রক্ষা পেয়েছে এমন কোন ঘটনা ঘটেনি।
এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে নিজ স্ত্রী অথবা পতিলয়ের নারীদের দিয়ে বিত্তশালীদের ব্ল্যাকমেল করে বড় অংকের অর্থ হাতিয়ে নেয়। এছাড়াও বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করেন, এমন প্রমাণও পাওয়া যায়। ২০১৪ সালে মধুখালী উপজেলার গোন্দারদিয়া রাজন হত্যার মুল আসামী মির্জা মিলন। রাজন মার্ডারের মামলা হলে সে সময় হাজার হাজার সাধারন মানুষ এবং স্থানীয় নেতারা রাজন হত্যার মুল আসামী র্মিজা মিলনের ফাঁসির জন্য রাজ পথে মিছিল সহ মানব বন্ধব করেন।
একটা সময় মিলন পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গেলেও পরে জামিনে বের হয়ে শুরু করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড এবং এই হত্যা মামলার বাদীকে বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলা তুলে নিতে বলেন। বাদী রাজী না হলে, দেশের বিভিন্ন জেলায় অনেকগুলো মিথ্যা মামলা দিয়ে বাদীকে হয়রানি করা হয়।
বাদী বলেন, শুধু আমাকেই নয় আমার ছেলেকেও বিভিন্ন মামলা দিয়ে ফাঁসানো হয়। এর পরও কেন মিলনের কিছু হয় না? এখন সাধারণ মানুষের প্রশ্ন হলো এতো সব অপরাধ করার পরও মিলনের কিছুই হয় না কেন? বাজারে একজন মুদি দোকানদার বলেন, মিলনের আর একজন ছোট চাচা মির্জা ইমরুল কায়েস, সে কিছুদিন আগে একজন পুলিশ সদস্য পিয়াজ বিক্রয়ের টাকা চাইতে গেলে পুলিশ সদস্যকে অনেক মারধর করেন, তখন সেই পুলিশ সদস্য তার হাইওয়ে এস.পি স্যারকে বিষয়টি জানালে পরে এস.পি স্যার মধুখালী থানায় আসেন এবং পুলিশের মাধ্যমে মির্জা ইমরুল কায়েস কে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায় এবং মামলা দায়ের পূর্বক তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি জামিনে বের হয়ে আসেন। যেখানে পুলিশকে মারার অভ্যাস এদের আগে থেকেই আছে। এখন ভাবার বিষয় হলো এতো দিন সাধারণ মানুষের উপর হামলা মামলা খুন চাঁদাবাজীর মতো ঘটনা ঘটানোর পরও মির্জা মিলনের কিছুই হয়না কেন? ইতিমধ্যে পুলিশের সংগে এতবড় ঘটনা ঘটালো। এখানে জনমনে প্রশ্ন, পুলিশ নিজেরাই যদি মিলন বাহিনীর হাতে হামলার শিকার হতে পারে তাহলে সাধারন মানুষের অবস্থা কি হতে পারে? পুলিশ প্রশাসন এতোদিন কেন নিরব ছিলেন, তাহলে কি কিছু দুষ্ট পুলিশ অফিসারের ছত্র ছাঁয়াতেই মির্জা মিলন সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাতো?
এক সংবাদের মাধ্যমে জানাযায় যে, বিগত ফরিদপুর জেলার পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান এস.পি থাকাকালীন মির্জা মিলনের অপরাধ গুলো আমলে নিয়ে তার নির্দেশনায় মিলনকে ধরতে মিলনের বাড়িতে কয়েক বাহীনির সমন্বয় বড় একটি অভিযান চালায়। কিন্তু পুলিশ মিলনের বাড়ির সামনে পৌঁছানোর আগেই তৎকালীন মধুখালী থানার ওসির বডিগার্ড ফারুক মিলকে ফোন করে পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল। যার কারণে সন্ত্রাসী মিলন সেদিন পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে প্রাণে বেঁচে যায়। এখন মধুখালী জনগণের একটাই প্রশ্ন, মিলনের কি কোন বিচার হবে না! মিলন কি টাকার জোরে সকল অপরাধ থেকে বেঁচে যাবে? তবে আইন ও দেশের সরকারের প্রতি সাধারন জনগণ ও মধুখালী বাসীর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা, এই কুখ্যাত সন্ত্রাসী খুনি চাঁদাবাজ মির্জা মিলনের ফাঁসি। সেই সংঙ্গে মধুখালীবাসি মাননীয় মন্ত্রী জনাব আব্দুর রহমান এর কাছে দাবী জানিয়ে বলেন, আমাদের বিশ্বাস মন্ত্রী সন্ত্রাস, খুনি ও চাঁদাবাজ মিলনকে কোন ধরনের সুযোগ না দিয়ে আইনের সহয়তায় ফাঁসি কার্যকর করে মধুখালীবাসীকে কলঙ্ক মুক্ত করবেন।