অনলাইন ডেস্ক, নিজস্ব প্রতিবেদক॥
দীর্ঘ ১৮ বছরের নির্বাসিত জীবনের অবসান ঘটিয়ে আজ প্রিয় মাতৃভূমিতে পা রাখছেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তাঁর এই ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তনকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকা ও সিলেটসহ সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোতে গড়ে তোলা হয়েছে নজিরবিহীন ও সর্বোচ্চ নিরাপত্তা বলয়। প্রিয় নেতাকে বরণ করে নিতে রাজপথে লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর ঢল এবং উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে।
নিরাপত্তার চাদরে রাজধানী
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও দলীয় সূত্র নিশ্চিত করেছে, বুধবার সন্ধ্যা থেকেই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে। বিশেষ করে বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত যাতায়াতের পুরো রুটটি কঠোর নজরদারির আওতায় আনা হয়েছে। গুলশান, বনানী ও বারিধারা এলাকায় ইতিমধ্যে ৯টি বিশেষ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে, যা পরিস্থিতির প্রয়োজনে আরও বাড়ানো হতে পারে। তাঁর ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য বিশেষ বুলেটপ্রুফ গাড়ির ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
প্রত্যাবর্তনের সময়সূচি
লন্ডনের স্থানীয় সময় বুধবার সন্ধ্যায় পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন তারেক রহমান। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী:
সকাল ৯:৫৫ মিনিট: তাঁর বহনকারী ফ্লাইটটি প্রথমে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
সকাল ১০:৫৫ মিনিট: এক ঘণ্টার যাত্রাবিরতি শেষে সিলেটের মাটি ছুঁয়ে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবেন।
সকাল ১১:৪৫ মিনিট: হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছাবেন তিনি।
বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা ও সংবর্ধনা কর্মসূচি
বিমানবন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জে তারেক রহমানকে স্বাগত জানাবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যবৃন্দ। বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পর রাজধানীর পূর্বাচলের ‘৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে’ (৩০০ ফিট) এলাকায় আয়োজিত বিশাল গণসংবর্ধনায় যোগ দেবেন তিনি। কুড়িল মোড় সংলগ্ন সড়কের উত্তর পাশে নেতাকর্মীদের জন্য তৈরি করা হয়েছে বিশাল এক মঞ্চ। সেখানে সমবেত জনতার উদ্দেশে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য রাখার কথা রয়েছে তাঁর।
মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ ও গন্তব্য
সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে তারেক রহমান সরাসরি এভারকেয়ার হাসপাতালে যাবেন তাঁর অসুস্থ মা, সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে। সেখান থেকে বিমানবন্দর সড়ক ও কাকলী মোড় হয়ে তিনি গুলশান-২ নম্বরে অবস্থিত নিজ বাসভবনে ফিরবেন।
প্রেক্ষাপট: দীর্ঘ ১৮ বছরের প্রতীক্ষা
উল্লেখ্য, ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসার পর গ্রেপ্তার হয়ে প্রায় ১৮ মাস কারাবন্দী ছিলেন তারেক রহমান। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর উন্নত চিকিৎসার জন্য তিনি সপরিবারে লন্ডনে পাড়ি জমান। পরবর্তী দেড় দশকে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অসংখ্য মামলা ও আইনি জটিলতার কারণে তাঁর দেশে ফেরা বাধাগ্রস্ত হয়। আজ সেই দীর্ঘ ১৮ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে এক ভিন্ন প্রেক্ষাপটে স্বদেশে ফিরছেন বিএনপির এই শীর্ষ নেতা।