বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৩১ অপরাহ্ন
৯ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৪ঠা রজব, ১৪৪৭ হিজরি
শিরোনাম :
জলবায়ু অভিযোজনে বিনিয়োগ করলে ২০৩০ সালে পোশাক রপ্তানি ছাড়াবে ১২ হাজার কোটি ডলার তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: আজ ঢাবি ছাত্রদলের আনন্দ মিছিল নির্বাচনে নাগরিকদের অংশগ্রহণ বাড়াতে জাতিসংঘের নতুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘ফিউচার বাংলাদেশ’ ধামরাইয়ে বাজারে লুটপাটের অভিযোগ নিয়ে ধূম্রজাল: ব্যবসায়ীদের দাবি ‘ঘটনা সাজানো’ কেরানীগঞ্জে ফরমালিন দিয়ে ফল পাকানোর দায়ে ৯ ব্যবসায়ীকে অর্থদণ্ড সালথায় ৪০ পেঁয়াজ চাষিকে প্রকাশ্যে ঋণ দিল কৃষি ব্যাংক ওসমান হাদীর খুনিদের ফাঁসির দাবিতে আইএইচআরসি’র প্রতিবাদী সমাবেশ ধামরাইয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে নবনিযুক্ত ওসির মতবিনিময় সভা বিজয় দিবসে জাতীয় সম্মিলিত ফোরাম (জেএসএফ) বাংলাদেশের শুভেচ্ছা ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস: শ্রেষ্ঠ আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়

জলবায়ু অভিযোজনে বিনিয়োগ করলে ২০৩০ সালে পোশাক রপ্তানি ছাড়াবে ১২ হাজার কোটি ডলার

Coder Boss
  • Update Time : মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৫
  • ১০ Time View

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ॥
জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ ও প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ নিশ্চিত করা গেলে আগামী দশকে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের রপ্তানি আয় ১২ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। তবে এই অভিঘাত মোকাবিলায় ব্যর্থ হলে বিপুল আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি কর্মসংস্থানেও বড় ধরনের বিপর্যয় নামার শঙ্কা রয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ্লোবাল লেবার ইনস্টিটিউট’-এর সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

রপ্তানি আয়ের সম্ভাবনা ও ঝুঁকি
গবেষণার তথ্যমতে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলায় সফল হলে ২০৩০ সালে পোশাক খাতের রপ্তানি আয় ১২ হাজার ২০১ কোটি মার্কিন ডলারে পৌঁছানো সম্ভব। কিন্তু যদি অভিযোজন ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হয়, তবে এই আয় কমে ৯ হাজার ৫৩৫ কোটি ডলারে নেমে আসতে পারে। অর্থাৎ, কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে সম্ভাব্য আয়ের প্রায় ২১ দশমিক ৮৫ শতাংশ হারানোর ঝুঁকি রয়েছে।

দীর্ঘমেয়াদী প্রক্ষেপণে দেখা যায়, ২০৫০ সাল নাগাদ ঝুঁকি আরও প্রকট হবে। সঠিক পদক্ষেপে রপ্তানি আয় ১ লাখ ৩ হাজার ৮২২ কোটি ডলারে পৌঁছানোর সম্ভাবনা থাকলেও, ব্যর্থতার ক্ষেত্রে তা মাত্র ৩২ হাজার ৮১১ কোটি ডলারে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে। এটি সম্ভাব্য আয়ের প্রায় ৬৮ দশমিক ৪০ শতাংশের সমান।

তাপমাত্রা বৃদ্ধি ও উৎপাদনশীলতায় প্রভাব
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গত দুই দশকে ঢাকায় ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রার দিনের সংখ্যা ৫৬ দশমিক ১ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ও কর্মঘণ্টার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ‘ওয়েট বাল্ব গ্লোব টেম্পারেচার’ (WBGT) সূচক অনুযায়ী, ২০৩০ সাল নাগাদ ঢাকায় বছরে গড়ে ৬৪ দশমিক ৮১ দিন এবং ২০৫০ সালে ১০৪ দশমিক ৪৮ দিন অসহনীয় তাপমাত্রা বিরাজ করতে পারে। চট্টগ্রামে এই সংখ্যা ২০৩০ সালে ৫০ দশমিক ১০ দিন এবং ২০৫০ সালে ৮৪ দশমিক ৮৬ দিন হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, তাপমাত্রা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে প্রতি ১ ডিগ্রি বাড়লে উৎপাদন গড় ১ দশমিক ৫ শতাংশ হারে হ্রাস পায়।

কর্মসংস্থানে বড় ধাক্কার আশঙ্কা
জলবায়ু পরিবর্তন কেবল আয়েই নয়, কর্মসংস্থানেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালে অভিযোজন ব্যবস্থা থাকলে পোশাক খাতে ৪৮ লাখ ৩০ হাজার কর্মসংস্থান হবে। তবে উদ্যোগহীনতায় প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার শ্রমিক কাজ হারাতে পারেন। ২০৫০ সালের চিত্র আরও ভয়াবহ; যেখানে অভিযোজন থাকলে ৬৩ লাখ ১০ হাজার কর্মসংস্থান সম্ভব, সেখানে উদ্যোগের অভাবে ১২ লাখ ৭০ হাজার মানুষ নতুন করে বেকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকবেন।

বন্যা ও অতিবৃষ্টির চ্যালেঞ্জ
প্রতিবেদনে বৃষ্টির ধরনের পরিবর্তনের ওপরও আলোকপাত করা হয়েছে। গত কয়েক দশকে ঢাকায় ভারী বৃষ্টির তীব্রতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। এক শতাব্দীতে একবার হতে পারে এমন তীব্র বন্যায় বাংলাদেশের প্রায় ২৭ শতাংশ উৎপাদন ইউনিট বা কারখানা পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে, যা সামগ্রিক ব্যবসায়িক সরবরাহ চেইনকে বড় ধরনের ব্যাঘাতের মুখে ফেলবে।

সুরক্ষায় গবেষণার সুপারিশমালা
বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের বিশ্বের অন্যতম জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে গবেষকরা বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ করেছেন:

কারখানায় আধুনিক ‘কুলিং সিস্টেম’ ও অভিযোজন প্রকল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি।

তাপ ও বন্যাজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকিকে শ্রমিকের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান।

শ্রমিকদের জন্য পেইড লিভ ও উন্নত চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করা।

ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ বন্ধ রাখার অধিকার প্রদান (কোনো দণ্ড বা বেতন কাটা ছাড়াই)।

সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক জলবায়ু মোকাবিলায় বাধ্যতামূলক মানদণ্ড নির্ধারণ।

উপসংহার
গবেষণাটি সতর্ক করেছে যে, বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা টিকিয়ে রাখতে এবং শিল্পের দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব নিশ্চিত করতে জলবায়ু অভিযোজন এখন আর বিলাসিতা নয়, বরং সময়ের দাবি। সঠিক সময়ে বিনিয়োগ ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা গেলে পোশাক খাত দেশের অর্থনীতির চাকা আরও বেগবান করতে সক্ষম হবে।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102