গাইবান্ধা প্রতিনিধি ॥
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গাইবান্ধার পাঁচটি সংসদীয় আসনে নির্বাচনি তৎপরতা তুঙ্গে উঠেছে। সাতটি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই জেলার আসনগুলো দীর্ঘদিন ধরে জাতীয় পার্টি ও আওয়ামী লীগের দখলে থাকলেও, আসন্ন নির্বাচনে সেগুলো নিজেদের দখলে নিতে এবার মরিয়া হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জামায়াতে ইসলামী।
জেলার পাঁচটি আসনেই নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি, পাশাপাশি জামায়াতও প্রতিটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত জাতীয় পার্টি, এনসিপি বা অন্যান্য বড় দলগুলো কোনো প্রার্থী ঘোষণা করেনি। তবে বামপন্থি দলগুলো তাদের প্রার্থী ঘোষণা করে ইতোমধ্যে ভোটের মাঠে নেমে পড়েছে।
মাঠের খবরাখবর অনুযায়ী, প্রধান দুই দল বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থী, কর্মী ও সমর্থকরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিবিড় গণসংযোগ চালাচ্ছেন। তারা কর্মিসভা করছেন, দলীয় বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন এবং দলীয় প্রতীকে ভোট ও দোয়া চাইছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও প্রার্থীদের পক্ষে ব্যাপক প্রচার চালানো হচ্ছে। তাদের এই প্রচার-প্রচারণায় হাটবাজার, মাঠঘাট এখন সরগরম। প্রার্থীরা ভোট প্রার্থনা করে নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। গাইবান্ধার সাধারণ ভোটারদের মতে, এই নির্বাচন মূলত বিএনপি ও জামায়াতের প্রার্থীর মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে।
আসনের চিত্র ও প্রার্থীদের পরিচিতি
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ)
এই আসনে ১৯৭৩ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) দুইবার, জাতীয় পার্টি ছয়বার, বিএনপি একবার, জামায়াত একবার, স্বতন্ত্র একবার এবং মুসলিম লীগ-আইডিএল প্রার্থী একবার বিজয়ী হন।
বিএনপি প্রার্থী: জেলা বিএনপির সহসভাপতি প্রফেসর ডা. জিয়াউল ইসলাম মোহাম্মদ আলী। তিনি এই আসনে প্রার্থী হিসেবে নতুন মুখ।
জামায়াত প্রার্থী: জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মাজেদুর রহমান।
গাইবান্ধা-২ (সদর)
এই আসনে ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছয়বার, জাতীয় পার্টি দুবার, বিএনপি একবার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী তিনবার বিজয়ী হয়েছেন।
বিএনপি প্রার্থী: বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির গ্রাম সরকারবিষয়ক সম্পাদক আনিসুজ্জামান খান বাবু। জেলার পাঁচটি আসনের মধ্যে তিনি প্রভাবশালী প্রার্থী হিসেবে পরিচিত।
প্রার্থী বক্তব্য: আনিসুজ্জামান খান বলেন, “এবার গণসংযোগের সময় প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। ঐক্যবদ্ধভাবে নেতা-কর্মীরা ধানের শীষের পক্ষে কাজ করছেন। এ আসনে বিএনপির জয় সুনিশ্চিত।”
জামায়াত প্রার্থী: জেলা জামায়াতের আমির ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল করিম সরকার।
প্রার্থী বক্তব্য: আবদুল করিম সরকার বলেন, “আমি ইউপি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলাম। বিগত সরকারের আমলে বিনা দোষে ২৬ মাস কারাভোগ করেছি। এতে আমার ও দলের প্রতি মানুষের আস্থা বেড়েছে।” তিনি আগামী নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।
গাইবান্ধা-৩ (পলাশবাড়ী-সাদুল্যাপুর)
এই আসনে এ পর্যন্ত ১২টি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ চারবার, জাতীয় পার্টি ছয়বার ও বিএনপি প্রার্থী দুবার বিজয়ী হন।
বিএনপি প্রার্থী: জেলা বিএনপির সভাপতি ও চিকিৎসক মইনুল হাসান সাদিক।
প্রার্থী বক্তব্য: মইনুল হাসান সাদিক বলেন, “চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে দুই উপজেলায় আমার জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ ছাড়া দলীয় নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে আমার পক্ষে কাজ করছেন। বিজয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।”
জামায়াত প্রার্থী: জেলা জামায়াতের কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম (লেবু মাওলানা)।
গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ)
এই আসনে ১২টি জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ চারবার, জাতীয় পার্টি তিনবার, বিএনপি তিনবার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী দুবার বিজয়ী হন।
বিএনপি প্রার্থী: উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মোহাম্মদ শামীম কায়ছার লিংকন। তিনি বিএনপির প্রয়াত সংসদ সদস্য আবদুল মোত্তালিব আকন্দের ছেলে এবং বাবার মৃত্যুর পর উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।
জামায়াত প্রার্থী: জেলা জামায়াতের সাবেক আমির ও কেন্দ্রীয় মজলিসের শুরা সদস্য মো. আবদুর রহিম। তিনি চিকিৎসক হওয়ার সুবাদে এলাকায় বেশ সুপরিচিতি লাভ করেছেন।
গাইবান্ধা-৫ (ফুলছড়ি-সাঘাটা)
আসনটিতে এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ প্রার্থী পাঁচবার, জাতীয় পার্টি পাঁচবার, বিএনপি একবার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী একবার বিজয়ী হয়েছেন।
বিএনপি প্রার্থী: জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও ব্যবসায়ী ফারুক আলম সরকার।
জামায়াত প্রার্থী: জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মো. আবদুল ওয়ারেছ।
স্বতন্ত্র প্রার্থী: এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন জেলা বিএনপির বহিষ্কৃত সহসভাপতি নাহিদুজ্জামান নিশাদ।
বিএনপি প্রার্থীর মন্তব্য: এ প্রসঙ্গে ফারুক আলম সরকার বলেন, “নাহিদুজ্জামানের সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁর প্রার্থিতা আমার নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না।”