নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা ॥
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ঢাকার ২০টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৩টিতে আগেই প্রার্থী ঘোষণা করেছিল বিএনপি। যে সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছিল, বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর ২০২৫) এর চারটিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। তবে ঢাকার তিনটি আসনে এখনো বিএনপির প্রার্থী নেই।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আরও ৩৬টি আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এর আগে গত ৩ নভেম্বর জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭টিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছিল বিএনপি।
প্রথম দফায় ঢাকার ঢাকা-৭, ঢাকা-৯, ঢাকা-১০, ঢাকা-১৩, ঢাকা-১৭, ঢাকা-১৮ এবং ঢাকা-২০ আসনগুলো ফাঁকা রাখা হয়েছিল।
ঘোষিত চার আসনে যাঁরা প্রার্থী
আজ বিএনপি যে চারটি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে, তাঁরা হলেন:
ঢাকা-৭ (লালবাগ, চকবাজার, বংশাল, কামরাঙ্গীরচর ও কোতোয়ালি আংশিক): দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য হামিদুর রহমান।
ঢাকা-৯ (সবুজবাগ, খিলগাঁও ও মুগদা): ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ।
ঢাকা-১০ (ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, কলাবাগান ও হাজারীবাগ): দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম।
ঢাকা-১৮ (বৃহত্তর উত্তরা ও বিমানবন্দর এলাকা): দলের ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন।
এর ফলে, এখন বিএনপি ফাঁকা রাখল ঢাকা-১৩, ঢাকা-১৭ ও ঢাকা-২০ আসন।
জোটের সমর্থন ও সমঝোতা
যে তিনটি আসন এখনো ফাঁকা আছে, তার মধ্যে দুটিতে বিএনপি জোটের শরিকদের সমর্থন দিচ্ছে:
ঢাকা-১৩ (মোহাম্মদপুর, আদাবর, শেরেবাংলা নগর আংশিক): বিএনপি জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজকে সমর্থন দিচ্ছে।
ঢাকা-১৭ (ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ও গুলশান-বনানী এলাকা): বিএনপি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিভ রহমান পার্থকে সমর্থন দিচ্ছে।
তাঁরা দুজনই ইতিমধ্যে বিএনপির ‘সবুজসংকেত’ পেয়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচার-প্রচারণাও শুরু করেছেন।
ফাঁকা রইল যে আসন
ঢাকা-২০ (ধামরাই উপজেলা) আসনে এখনো বিএনপি প্রার্থী দেয়নি। এ আসনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী চারজন হলেন: ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি তমিজ উদ্দিন, যুবদলের ঢাকা জেলা সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস (মুরাদ), মহিলা দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ এবং ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান (অভি)।
আলোচনা ও বিতর্কের অবসান
নতুন করে প্রার্থী ঘোষণার মধ্য দিয়ে ঢাকার কয়েকটি আসন ঘিরে চলা আলোচনা ও বিতর্কের অবসান হলো।
ঢাকা-৭: আসনটি বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হককে ছেড়ে দেওয়ার আলোচনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সমঝোতা হয়নি। মনোনয়ন পেলেন হামিদুর রহমান।
ঢাকা-৯: এ আসনে মির্জা আব্বাসের স্ত্রী ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে ‘এক পরিবার থেকে একজনকে প্রার্থী’ করার নীতির কারণে তিনি বাদ পড়েন। তাঁর স্বামী মির্জা আব্বাসকে ঢাকা-৮ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে। অন্যদিকে, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারাও এ আসন থেকে নির্বাচন করছেন।
ঢাকা-১০: সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীমও এখানে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার প্রার্থী হওয়ার আলোচনাও ছিল, যা এখন শেষ হলো।
ঢাকা-১৮: জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধর ভাই মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধর মনোনয়ন পাওয়ার আলোচনা ছিল, কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে প্রার্থী করা হয়নি।
এক পরিবারে একাধিক প্রার্থী
এবারের নির্বাচনে বিএনপি এক পরিবার থেকে একজনকে প্রার্থী করার নীতি নিলেও টাঙ্গাইলের একটি পরিবারের ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম ঘটেছে। প্রথম দফায় টাঙ্গাইল-২ আসনে সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুকে প্রার্থী করা হয়েছিল। এবার দ্বিতীয় দফায় টাঙ্গাইল-৫ আসনে তাঁর ছোট ভাই, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে প্রার্থী মনোনীত করা হয়েছে।
ঢাকার বাইরে ৩৬ আসনে প্রার্থী যাঁরা
সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঢাকার বাইরের আরও ৩৬টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন।
রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ
ঠাকুরগাঁও-২: ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সাবেক মহাসচিব আবদুস সালাম।
দিনাজপুর-৫: তারেক রহমানের আইন উপদেষ্টা এ কে এম কামরুজ্জামান।
নওগাঁ-৫: জাহিদুল ইসলাম ধলু।
নাটোর-৩: উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক মো. আনোয়ারুল ইসলাম (জুনাইদ আহ্মেদ পলকের চাচাশ্বশুর)।
সিরাজগঞ্জ-১: উপজেলা (কাজীপুর) বিএনপির সাবেক সভাপতি সেলিম রেজা।
খুলনা ও বরিশাল বিভাগ
যশোর-৫: এম ইকবাল হোসেন।
নড়াইল-২: জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলাম।
খুলনা-১: জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক আমির এজাজ খান।
পটুয়াখালী-২: সাবেক সংসদ সদস্য মো. শহিদুল আলম তালুকদার।
বরিশাল-৩: জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি জয়নুল আবেদীন (এ আসনে সেলিমা রহমানও মনোনয়ন চেয়েছিলেন)।
ঝালকাঠি-১: দলের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম জামাল।
ময়মনসিংহ ও ঢাকা বিভাগ
ময়মনসিংহ-৪: দলের বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. আবু ওয়াহাব আখন্দ খালিদ।
কিশোরগঞ্জ-১: জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মাজহারুল ইসলাম।
কিশোরগঞ্জ-৫: বাজিতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শেখ মজিবর রহমান ইকবাল।
মানিকগঞ্জ-১: দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য এস এ জিন্নাহ কবির।
মুন্সিগঞ্জ-৩: দলের সমাজকল্যাণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান।
গাজীপুর-১: দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য মো. মজিবুর রহমান।
রাজবাড়ী-২: জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. হারুন অর রশীদ।
ফরিদপুর-১: জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের সহসভাপতি খন্দকার নাসির উল ইসলাম।
মাদারীপুর-১: নাদিরা আক্তার (আগে স্থগিত করা হয়েছিল)।
মাদারীপুর-২: জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাহান্দার আলী খান।
সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগ
সুনামগঞ্জ-২: সাবেক সংসদ সদস্য নাসির হোসেন চৌধুরী।
সুনামগঞ্জ-৪: আইনজীবী নুরুল ইসলাম।
সিলেট-৪: সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী।
হবিগঞ্জ-১: সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া অর্থনীতিবিদ রেজা কিবরিয়া।
কুমিল্লা-২: শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান ও বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিম ভূঁইয়া।
চট্টগ্রামের দুটি আসনে এখনো নেই প্রার্থী
চট্টগ্রামের ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে দুই দফায় ১৪টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। এখনো চট্টগ্রাম-১৪ (চন্দনাইশ) ও চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।
চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের দ্বিতীয় দফায় ঘোষিত নতুন প্রার্থীরা হলেন:
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ): সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তফা কামাল পাশা।
চট্টগ্রাম-৬ (রাউজান): দলের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী।
চট্টগ্রাম-৯ (চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১৪ ওয়ার্ড): নগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান।
চট্টগ্রাম-১৫ (লোহাগাড়া ও সাতকানিয়া আংশিক): দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য নাজমুল মোস্তফা আমিন।
কক্সবাজার-২ (কুতুবদিয়া ও মহেশখালী): বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আলমগীর মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ।