নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
আসন্ন ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ উত্তরের গণভোটকে ঘিরে দেখা দিয়েছে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ, যা এর ফলাফলকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে বলে মনে করছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল। মূল চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে-অধ্যাদেশ জারি হলেও সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখনো কোনো প্রচারণা শুরু না হওয়া, দলগুলোর মধ্যে প্রচার পরিকল্পনার অভাব, এবং সবচেয়ে উদ্বেগজনকভাবে, ৯২ ভাগ মানুষ এখনো গণভোটের প্রশ্ন সম্পর্কে অবগত নন।
যদিও সরকার এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনই এই গণভোট অনুষ্ঠিত হবে, তারপরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল দিনক্ষণ নিয়ে তাদের অনড় অবস্থানে রয়েছে।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা নিয়ে প্রশ্ন
সামনে মাত্র তিন মাসেরও কম সময়। এর মধ্যে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে কীভাবে একটি সুষ্ঠু গণভোট করা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাদের মতে, সরকার, নির্বাচন কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমন্বয় করে ব্যাপক প্রচারণা চালালে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন হবে না।
অন্যদিকে, শক্তিশালী রাজনৈতিক দলগুলো গণভোটের দিনক্ষণ নিয়ে এখনো অনড়। তাদের বক্তব্য-একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হলে ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হবে এবং নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
অধ্যাদেশ জারি, কিন্তু প্রস্তুতি কোথায়?
সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হবে। এর আলোকে ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।
এর আগে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ নম্বর-৬৭ জারি করেন। এতে বলা হয়েছে, জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) বাস্তবায়ন আদেশ, ২০২৫ অনুসারে সংবিধান সংস্কার সম্পর্কিত কয়েকটি প্রস্তাবের বিষয়ে জনগণের সম্মতি রয়েছে কি না, তা যাচাইয়ে গণভোটের বিধান প্রণয়নকল্পে এই অধ্যাদেশ প্রণীত হয়েছে। এতে ভোটকেন্দ্র বিষয়ে ৪ ক্রমিকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
৯২ ভাগ মানুষই জানে না প্রশ্ন কী
রাজনৈতিক দলের নেতারা দাবি করেছেন, গণভোটের জন্য তৈরি করা চারটি প্রশ্ন সম্পর্কে সাধারণ জনগণের ৯২ ভাগ এখনো অবগত নন। তারা জানান, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এখনো এ নিয়ে স্পষ্ট কোনো ভূমিকা নেওয়া হয়নি এবং গ্রাম পর্যায়ে কোনো প্রচারণাও শুরু হয়নি। কবে থেকে এই উদ্যোগ নেওয়া হবে, সে সম্পর্কেও জনগণ অন্ধকারে।
এ পরিস্থিতিতে গণভোট বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে তারা আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক এ প্রসঙ্গে বলেন, “গণভোট অনুষ্ঠান নিয়ে বহুমাত্রিক চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তবে সরকার ও নির্বাচন কমিশন চাইলে আগামী দুই মাসের মধ্যে সেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সুষ্ঠু গণভোট অনুষ্ঠান করতে পারে। তবে কয়েকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ কথাবার্তা ও নির্বাচনের বিরোধিতা করা হচ্ছে, যা ব্যক্তিগতভাবে মনে করি আগামী নির্বাচনকে ব্যাহত করতে পারে।”
রাজনৈতিক দলগুলোর অনড় অবস্থান
দলীয় অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। রবিবার রাজশাহীর মাদ্রাসা ময়দানে আট দলীয় বিভাগীয় সমাবেশে তিনি বলেন, “একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট অনুষ্ঠিত হলে ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি তৈরি হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।”
অন্যদিকে, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশন আয়োজিত গণভোট ও আসন ভোটের মক ডেমোনস্ট্রেশন সফল হয়নি। কী কী বিষয়ের ওপর গণভোট এবং কীভাবে ভোটটা দেবে-এ নিয়ে জনগণকে সচেতন করা জরুরি।”