বিশেষ প্রতিনিধি, অনলাইন ডেস্ক ॥
ঢাকা : জাতীয় নির্বাচনের আগেই গণভোট আয়োজনের দাবিতে নিজেদের অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছে যুগপৎ আন্দোলনে থাকা জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা আটটি রাজনৈতিক দল। দলগুলোর পক্ষ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, নির্বাচনের আগে গণভোটের আয়োজন ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করার দাবিতে আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে ৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তারা ঢাকা বাদে অন্য সাত বিভাগীয় শহরে সমাবেশ করবে।
বুধবার (১৯ নভেম্বর ২০২৫) সন্ধ্যায় রাজধানীর পল্টনে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আট দলের লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে আট দলের পক্ষে সমাবেশের এই ঘোষণা দেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা ইউসুফ আশরাফ।
সমাবেশের কর্মসূচি
ঘোষিত কর্মসূচি অনুসারে, বিভাগীয় শহরগুলোতে সমাবেশ হবে:
৩০ নভেম্বর: রংপুর, ১ ডিসেম্বর: রাজশাহী’ ২ ডিসেম্বর: খুলনা, ৩ ডিসেম্বর: বরিশাল, ৪ ডিসেম্বর: ময়মনসিংহ, ৫ ডিসেম্বর: সিলেট ও ৬ ডিসেম্বর: চট্টগ্রাম
এই সমাবেশগুলোতে আট দলের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেবেন বলে জানানো হয়েছে।
গণভোট ও অন্যান্য দাবি
ব্রিফিংয়ে মাওলানা ইউসুফ আশরাফ বলেন, “আমরা এখনো গণভোট আলাদা দিনে আয়োজনের দাবি জানিয়ে যাচ্ছি।” তিনি একইসঙ্গে গণভোটে ‘হ্যাঁ’-এর পক্ষে জনমত গঠন ও প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায় এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশে তাদের দাবির আংশিক পূরণ হয়েছে। তবে জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য অপরাধীর বিচার, স্বৈরাচারের দোসর হিসেবে জাতীয় পার্টিসহ অন্য দলগুলোকে নিষিদ্ধ করা এবং নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির দাবিগুলো এখনো পূরণ হয়নি।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি
ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন লিয়াজোঁ কমিটির সদস্য ও জামায়াতে ইসলামী সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ। নির্বাচনী প্রস্তুতির ভেতর আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “আমাদের দাবি থেকে আমরা সরিনি। আমরা সরকারকে (নির্বাচনের আগে গণভোট আয়োজনের) বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বলেছি। বলেছি বিকল্প পথ বের করেন; আলোচনার দরজা বন্ধ করবেন না।”
একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট আয়োজনের ব্যবস্থাপনার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পাওয়া যায়নি বলেও মন্তব্য করেন জামায়াত নেতা আযাদ। তিনি বলেন, “আজকে আমরা ইলেকশন কমিশনে গিয়েছিলাম। কোনো সদুত্তর পাইনি… তার মানে সরকারও এখনো সুস্পষ্টভাবে একই দিনে কিভাবে (দুটি) ভোট নেবে সেই পরিকল্পনা ঠিকভাবে স্থির করতে পারেনি।”
আযাদ আরও জানান, আন্দোলনে থাকা আট দল সমঝোতার ভিত্তিতে নির্বাচনে যাবে বলে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা সমঝোতার ভিত্তিতে ইলেকশনে যাব-এ রকম একটা আলোচনা হয়েছে। চূড়ান্ত ফয়সালাটা শীর্ষ বৈঠকের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আসবে।” তিনি যোগ করেন যে, ফ্যাসিবাদবিরোধী ইসলামী, গণতান্ত্রিক, দেশপ্রেমিক সব শক্তিকে নিয়ে তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চান এবং এই দরজা উন্মুক্ত আছে।
উপস্থিত ছিলেন যারা
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমাদের পরিচালনায় এই প্রেস ব্রিফিংয়ে আরও উপস্থিত ছিলেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হুসাইন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম ও মাওলানা ফজলে বারী মাসউদ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা শরাফত হুসাইন, জাগপার সিনিয়র সহ-সভাপতি ও মুখপাত্র রাশেদ প্রধান এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইকবাল হোসেন, নেজামে ইসলাম পার্টির সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী ও মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব ইউসুফ সাদেক হক্কানী ও প্রেসিডিয়াম সদস্য মাওলানা তাওহিদুজ্জামান, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টির দপ্তর সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শহিদুল আলম ও অর্থ সম্পাদক রিয়াজ হোসেন প্রমুখ।