সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৩৬ অপরাহ্ন
২৪শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
শিরোনাম :
‎‎তিস্তা নদীতে সরকারি বাঁধের নিচে অবৈধ বালু উত্তোলন: ধ্বংসের মুখে কোটি টাকার স্প্যার বাঁধ ঢাবির ভোটকেন্দ্রে মোবাইল, ব্যাগসহ যেসব জিনিস বহনে নিষেধাজ্ঞা ফটিকছড়িতে সেনাবাহিনীর অভিযানে অস্ত্রসহ আটক ১ বান্দরবানে জশনে জুলুছে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (সা.) উদযাপন আমিন মডেল টাউন ও আমিন গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রতারককে সহযোগিতা ও ন্যায় বিচারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ ৪ ; মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভুক্তভোগী জাতীয় সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ: গেজেট প্রকাশ করলো নির্বাচন কমিশন বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী: ধামরাইয়ে বর্ণাঢ্য র‍্যালি ও আলোচনা সভা ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: তারেক রহমানসহ সব আসামি খালাস, হাইকোর্টের রায় বহাল রাখলেন আপিল বিভাগ সাংবাদিককে ছবি তুলতে বাধা: কুড়িগ্রামে সাবেক ডিসির আইনজীবীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জাতীয় নির্বাচনে আসছে নতুন নিয়ম: পোস্টার নিষিদ্ধ, বিলবোর্ডে প্রচারের অনুমতি

আমিন মডেল টাউন ও আমিন গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রতারককে সহযোগিতা ও ন্যায় বিচারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ ৪ ; মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভুক্তভোগী

Coder Boss
  • Update Time : শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ৭ Time View

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা, ধামরাই ॥
০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ঢাকার ধামরাইয়ে অবস্থিত আমিন মডেল টাউনের বিরুদ্ধে একটি জমি ভাড়া সংক্রান্ত গুরুতর প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মো. মিরন খন্দকার মূল ভাড়াটে ফারুক এবং জমির মালিক আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মিরনের অভিযোগ, আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষ ফারুকের প্রতারণার বিষয়টি জানা সত্ত্বেও তাকে সহযোগিতা করেছে এবং আপস-মীমাংসার সময় তাকে বাদ দিয়ে অন্যায়ভাবে ফারুককে লাভবান করেছেন।

ঘটনার বিবরণ
ঘটনার সূত্রপাত হয় ২০২৩ সালের ২৩শে মার্চ, যখন আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষ একটি বাজার স্থাপনের জন্য ফারুক গংদের সঙ্গে একটি ভাড়া চুক্তি করে। এই চুক্তির মেয়াদ ছিল ২০২৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে, ২০২৫ সালের ১৭ই আগস্ট, দুই পক্ষের মধ্যে একটি আপসনামা স্বাক্ষরিত হয়। এই আপসনামার মাধ্যমে আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষ নগদ টাকা ও চেকের মাধ্যমে ফারুক গংদের সঙ্গে চুক্তিটি বাতিল করে। এই আপসনামা দলিলগুলোর স্ট্যাম্প নম্বর হলো: গঙ ৬৭৩৪১৩১, গঙ ৬৭৩৪১৩২, ও গঙ ৬৭৩৪১৩৩।

মিরনের অভিযোগ: প্রতারণা ও অধিকার লঙ্ঘন
এই আপস-মীমাংসার মূল বিতর্কটি শুরু হয় যখন মিরনকে বাদ দিয়েই ফারুক গংদের সঙ্গে আপসনামার চুক্তি করা হয়। মিরন দাবি করেন, তিনি আপস-মীমাংসার প্রায় তিন-চার মাস আগেই (২০২৫ সালের ১০ই মে) বাজার ক্রয়-সংক্রান্ত সব কাগজপত্র আমিন মডেল টাউনের অ্যাডমিন অফিসার শফিক সাহেবের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের (আইন উপদেষ্টা আমির হোসেন চৌধরির) কাছে পাঠিয়েছিলেন।

মিরন খন্দকার একাধিকবার আমিন মডেল টাউনের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম আমিনকে অনুরোধ করেছিলেন যেন আপস-মীমাংসার সময় তাকে উপস্থিত রাখা হয়। মিরন ও আমিন সাহেবের কথোপকথনের ভয়েস রেকর্ডে শোনা যায়, চেয়ারম্যান তাকে উপস্থিত রাখবেন বলে বারবার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বাদ দিয়েই ফারুক গংদের সঙ্গে আপস করেন।

শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত চুক্তিপত্র
মিরন খন্দকার ফারুকের কাছ থেকে মোট তিনটি দলিলের মাধ্যমে বাজারের শেয়ার ক্রয় করেছিলেন। দলিলগুলোর বিবরণ নিচে দেওয়া হলো:

১. প্রথম দলিল (বাতিলকৃত): ২০২৪ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি, স্ট্যাম্প নম্বর খল ০৩৯২৬১৩, খল ০৩৯২৬১৪, ও খল ০৩৯২৬১৫ ব্যবহার করে মিরন খন্দকার ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ফারুক হোসেনের কাছ থেকে ১০% শেয়ার ক্রয় করেন। পরবর্তীতে এই চুক্তিটি বাতিল করা হয়।

২. দ্বিতীয় দলিল: ফারুক হোসেনের ফ্যামেলি সমস্যা ও কেস-মামলা সংক্রান্ত বিষয়ে আর্থিক সংকটের কথা বলে ২০২৫ সালের ১০ই জানুয়ারি, উক্ত প্রথম দলিলের চুক্তিপত্র বাতিল করে একটি নতুন দলিলে (স্ট্যাম্প নম্বর খহ ৬৭০২৩৪১, খহ ৬৭০২৩৪২, ও খহ ৬৭০২৩৪৩) ফারুক হোসেন প্রথম চুক্তিপত্র দলিলের ৫ লক্ষ টাকার সঙ্গে সমন্বয় করে আরও ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা বাড়তি নিয়ে মোট ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে মিরন খন্দকারের কাছে তার ১৫% শেয়ার বিক্রি করেন।

৩. তৃতীয় দলিল: তৃতীয় দলিলের সময় উক্ত সমস্যা সমাধানে ফারুক হোসেনের আরও টাকার প্রয়োজন হলে অনুরোধক্রমে ২০২৫ সালের ২৭ শে ফেব্রুয়ারি তারিখে সে নতুন করে আরো একটি দলিলের (স্ট্যাম্প নম্বর গক ৯১২৪৯২৮, গক ৯১২৪৯২৯, ও গক ৯১২৪৯৩০) মাধ্যমে ফারুক হোসেন আরও ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে তার আরো ২১% শেয়ার মিরন খন্দকারের কাছে বিক্রয় ও হস্তান্তর করেন।

এই দুটি দলিলের (দ্বিতীয় ও তৃতীয়) মাধ্যমে ফারুক হোসেন মোট ১৪ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ৩৬% শেয়ার মিরন খন্দকারের কাছে বিক্রি করেন। এই দুটি চুক্তিতে ফারুক হোসেন তার বিক্রি করা শেয়ারের লাভ্যাংশ ও মূলধন সহ সম্পূর্ণ ভোগ দখলের অধিকার মিরন খন্দকারের কাছে হস্তান্তর করেন।

এছাড়াও, তৃতীয় দলিলের চুক্তি অনুযায়ী, ফারুক হোসেন তার অবশিষ্ট শেয়ার ও আর্থিক লেনদেনের দায়িত্ব মিরন খন্দকারের কাছে হস্তান্তর করেন। একই সঙ্গে, তিনি মো. মিরন খন্দকারকে প্রতি মাসে ইব্রাহিম শেখ হাসমতের সমান সম্মানী দেওয়ার লিখিত চুক্তিপত্রে অঙ্গীকার করেন।

আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
মিরন খন্দকার প্রশ্ন তুলেছেন যে, ফারুক একজন “প্রতারক” জেনেও কেন আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষ মিরনের প্রাপ্য টাকা ফারুক হোসেনকে দিয়েছে। তিনি বলেন, “ফারুক একজন প্রতারক, এটা জানা সত্ত্বেও আপনারা কীভাবে আমার প্রাপ্য টাকা তাকে দিলেন?”

মিরনের মতে, ফারুক দুটি গুরুতর অন্যায় করেছেন:
১. আমিন মডেল টাউনের অনুমতি ছাড়াই বাজারটি মিরনের কাছে বিক্রি করা।
২. মিরনের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের টাকা চেকের মাধ্যমে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা।

চাঞ্চল্যকর তথ্য ও অনিয়মের অভিযোগ
এই বিষয়ে আরও তদন্ত করে জানা যায়, ফারুক গংদের সঙ্গে আমিন সাহেবের দুটি আন-রেজিস্টার্ড দলিল সম্পন্ন হয়েছিল:

১. প্রথম দলিল: ২০২১ সালের ২১শে মার্চ স্বাক্ষরিত এই দলিলে (স্ট্যাম্প নম্বর খঘ ০৪৬৬৯২৭, খঘ ০৪৬৬৯২৯, ও খঘ ০৪৬৬৯৩০) আমিন সাহেবের সঙ্গে ফারুক হোসেন, খয়বার আলী, ইব্রাহিম শেখ হাসমত, ও হাবিবুর রহমান চুক্তিবদ্ধ হন।

২. দ্বিতীয় দলিল: ২০২৩ সালের ২৩শে মার্চ স্বাক্ষরিত এই দলিলে (স্ট্যাম্প নম্বর খদ ০৯৯৪৪৯৮, খদ ০৯৯৪৪৯৯, এবং খথ ১১৭৯৭৬৬) ইব্রাহিম শেখ হাসমতের নাম বাদ দিয়ে নূর মোহাম্মদ নামে নতুন এক ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তৎকালীন সময় হাবিবুর রহমান বাজার থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে অ্যাক্সিডেন্ট করেন এবং পঙ্গুত্ব বরণ করেন, ফলে তাকেও ফারুক হোসেন গং বাজারের মালিকানা থেকে বাদ দেন।

অভিযোগ অনুযায়ী, প্রথম দলিলে ইব্রাহিমের নাম থাকা সত্ত্বেও অত্যন্ত চতুরতার সাথে আমিন সাহেব ও তাঁর অফিসের সিনিয়র ম্যানেজার আলহাজুর রশিদ সোহান এবং ফারুক গং সহ অন্যরা মিলে ইব্রাহিম শেখ হাসমতের সঙ্গে প্রতারণা করেছিলেন। নতুন দলিল তৈরির সময় ইব্রাহিম শেখ হাসমতের নাম বাদ দিয়ে তাঁকে বাজারের মালিকানা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছিলো

উল্লেখিত আন-রেজিস্টার্ড দলিলগুলোর ১৪ নম্বর শর্তে (অসাধারণ দায়িত্বের কথা) উল্লেখ আছে যে, ভাড়াটিয়ারা রোডস অ্যান্ড হাইওয়ের সরকারি জায়গা ব্যবহার করতে পারবে এবং সেই জায়গা ব্যবহারের উপযোগী করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষের

রাজনৈতিক যোগসূত্র নিয়ে অভিযোগ
রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের তথ্য অনুসন্ধান করার সময় আমিন গ্রুপ সম্পর্কে আরো নতুন নতুন ‘অফেন্স’ এর তথ্য পাওয়া যায় যে, গত ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থানে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আশুলিয়া থানায় দায়ের করা (একাধিক মামলার) ৫২ নং মামলার অভিযুক্তদের মধ্যে আমিন সাহেব ও তার বিয়াই বেনজীর আহমেদও রয়েছেন। তৎকালীন আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে বেনজীর আহমেদ ঢাকা ২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ছিলেন এবং এই মামলার ১ নম্বর আসামি, আর আমিন গ্রুপের চেয়ারম্যান আমিন সাহেব ৯ নম্বর আসামি হিসেবে নথিভুক্ত রয়েছেন। মামলার নথিপত্রের লিখিত অভিযোগ অনুযায়ী তারা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নেতা এবং দলীয় অর্থ-দাতা ও ডোনার হিসাবে কাজ করছেন। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে আমিন সাহেব অবৈধ ভাবে বিয়াই সাহেবের ক্ষমতা ব্যবহার করে, আইনের তোয়াক্কা না করে, বিভিন্ন অন্যায় ও ভূমি দখল করে, হাউজিং ব্যবসা চালিয়েছেন।

রবিবার (০৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) পর্যন্ত এই অভিযোগ সম্পর্কে জানতে গেলে আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102