অনলাইন ডেস্ক ॥
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) আবেদন করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে প্রাথমিক যাচাইয়ে দলটির আবেদনে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ ত্রুটি বা ঘাটতি চিহ্নিত করেছে ইসি। এসব ত্রুটি সংশোধনের জন্য এনসিপিকে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং আগামী ৩ আগস্টের মধ্যে সঠিক তথ্য ও দলিল জমা দিতে বলা হয়েছে।
নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন অপরিহার্য। এই প্রক্রিয়ায়, আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী বিভিন্ন শর্ত পূরণ করতে হয়। মোট ১৪৪টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে, যার মধ্যে এনসিপি অন্যতম। ইসির কর্মকর্তারা আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করছেন। আবেদনে কোনো তথ্যগত ঘাটতি থাকলে, সেগুলো পূরণের জন্য সাধারণত ১৫ দিন সময় দেওয়া হয়। এরপর শর্ত পূরণকারী দলগুলোর তথ্য মাঠপর্যায়ে যাচাই করা হয়।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামকে পাঠানো চিঠিতে যে ত্রুটিগুলোর কথা উল্লেখ করা হয়েছে, সেগুলো হলো:
দাপ্তরিক তথ্যে ঘাটতি: দলের কার্যকর জেলা দপ্তরগুলোর পূর্ণাঙ্গ ঠিকানাসহ তালিকা দেওয়া হয়নি। এছাড়া, ঢাকা ও সিলেট জেলা দপ্তরের ভাড়া চুক্তিপত্রে দলের নাম উল্লেখ নেই।
উপজেলা ও থানা পর্যায়ের অসঙ্গতি: সকল উপজেলা ও থানা দপ্তরের তালিকা এবং ঠিকানার অভাব রয়েছে। ২৫টি উপজেলা বা থানায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোটার সদস্য (ন্যূনতম ২০০ জন) পাওয়া যায়নি। কিশোরগঞ্জের ইটনা এবং ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলা কার্যালয়ের ভাড়া চুক্তিপত্রে দলের নাম ও ঠিকানার অনুপস্থিতি রয়েছে।
তহবিল সংক্রান্ত অসম্পূর্ণতা: এনসিপির আবেদনে তহবিলের পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি, এমনকি সংযুক্ত তহবিলের উৎসের বিবরণীতেও এর পরিমাণ উল্লেখ নেই।
কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তপত্রে স্বাক্ষর: নিবন্ধনের বিষয়ে দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সিদ্ধান্তের অনুলিপির শেষ পৃষ্ঠায় আহ্বায়কের স্বাক্ষর নেই।
গঠনতন্ত্রে ত্রুটি: দলের গঠনতন্ত্রে ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, উপজেলা বা জেলা কমিটির সদস্যদের নিয়ে প্রস্তুত প্যানেল থেকে দলের কেন্দ্রীয় সংসদীয় বোর্ড কর্তৃক সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়ন চূড়ান্ত করার বিধান রাখা হয়নি।
সাংবিধানিক প্রত্যয়নপত্রের অভাব: দলের কোনো দলিল বা কার্যক্রম সংবিধান পরিপন্থী নয় এবং দলে ‘কোলাবোরেটর (স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল) অর্ডার ১৯৭২’ ও ‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস (ট্রাইব্যুনাল) অ্যাক্ট ১৯৭২’ এর অধীন দণ্ডিত কোনো ব্যক্তি নেই—এই মর্মে কোনো প্রত্যয়নপত্র আবেদনপত্রের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়নি।
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব জানিয়েছেন, তারা ইসির চিঠি পেয়েছেন এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রয়োজনীয় তথ্য ও দলিল জমা দেবেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ত্রুটিগুলো দ্রুত সংশোধন না হলে এনসিপির নিবন্ধন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে, যা তাদের আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণের স্বপ্নকে অনিশ্চয়তার মুখে ফেলবে।