অনলাইন ডেস্ক ॥
রাজধানীর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রথমবারের মতো জাতীয় সমাবেশ করে শক্তি প্রদর্শন করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। শনিবার (১৯ জুলাই) বিকেলে উদ্যানের লাখো নেতাকর্মীর উপস্থিতি নজর কেড়েছে বিশ্বমিডিয়ারও। সামনের বছর অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনকে সামনে রেখে এই সমাবেশকে দলটির ‘শক্তি প্রদর্শন’ হিসেবে দেখছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো।
অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। আগামী বছর প্রত্যাশিত নির্বাচনের আগে দেশের বৃহত্তম ইসলামী দল জামায়াতে ইসলামীর লাখ লাখ সমর্থক রাজধানী ঢাকায় সমাবেশ করেছে।
এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জানিয়েছে, পরবর্তী নির্বাচন এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত হবে। তবে, সরকার ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়নি, যা বিএনপি এবং তার মিত্রদের একটি জোরালো দাবি ছিল।
প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেওয়া জামায়াতে ইসলামী এই সমাবেশের জন্য ১০ লাখ লোক জড়ো করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল।
এপি তার প্রতিবেদনে বলেছে, ২০০৯ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা শেখ হাসিনা গত বছর ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে চলে যান। তার শাসনামলে ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধ এবং অন্যান্য গুরুতর অপরাধের অভিযোগে জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল অথবা কারাগারে পাঠানো হয়েছিল।
ইউনূসের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের কাছে জামায়াতে ইসলামী একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করা, সব গণহত্যার বিচার, প্রয়োজনীয় সংস্কার এবং গত বছরের গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি সনদের ঘোষণা ও বাস্তবায়নের জন্য সাত দফা দাবি পেশ করেছে। তারা নির্বাচনে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা প্রবর্তনেরও দাবি জানিয়েছে।
এপির প্রতিবেদন অনুসারে, ১৯৭১ সালের পর এই প্রথম দলটিকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হলো। অনেক বিশ্লেষকের মতে, এই সিদ্ধান্ত ইউনূসের সরকারের সমর্থিত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইসলামপন্থীরা আরও গতিশীল হচ্ছে, যেখানে উদারপন্থী শক্তির সংকোচন ঘটছে। জামায়াতে ইসলামী ৩০০টি সংসদীয় আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি ও শেখ হাসিনার প্রাক্তন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পর দেশের তৃতীয় শক্তি হয়ে ওঠার আশায় অন্যান্য ইসলামপন্থী দল ও সংগঠনের সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা করছে।
এপি আরও জানিয়েছে, সমাবেশের আগে জামায়াতে ইসলামীর হাজার হাজার সমর্থক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাত কাটিয়েছিলেন। শনিবার সকালে তারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে এগিয়ে যান। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এই ঐতিহাসিক স্থানেই পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল, যা নয় মাসের যুদ্ধের অবসান ঘটিয়েছিল।
৪০ বছর বয়সী ইকবাল হোসেন এপিকে বলেন, “আমরা এখানে এমন একটি নতুন বাংলাদেশের জন্য এসেছি যেখানে ইসলাম হবে শাসনব্যবস্থার মূলনীতি, যেখানে ভালো ও সৎ লোকেরা দেশ শাসন করবে এবং কোনো দুর্নীতি থাকবে না। প্রয়োজনে আমরা এই লক্ষ্যে আমাদের জীবন উৎসর্গ করব।”
সমাবেশে ২০ এবং ৩০ এর কোঠায় বয়সী অনেক তরুণ সমর্থকও উপস্থিত ছিলেন। ২০ বছর বয়সী ছাত্র মহিদুল মোরসালিন সায়েম বলেন, “জামায়াতে ইসলামীর অধীনে এই দেশে কোনো বৈষম্য থাকবে না। সকল মানুষের তাদের অধিকার থাকবে। কারণ আমরা পবিত্র গ্রন্থ কুরআনের পথ অনুসরণ করি।” তার মতে, “যদি সমস্ত ইসলামী দল শিগগিরই হাত মেলায়, তাহলে কেউ আমাদের কাছ থেকে ক্ষমতা কেড়ে নিতে পারবে না।”