অনলাইন ডেস্ক ॥
যুগান্তরের একটি আলোচিত প্রতিবেদন শেয়ার করে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের সংগঠক সারজিস আলম। তিনি দাবি করেছেন, সাবেক স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার নির্দেশেই গোপালগঞ্জে এনসিপির শীর্ষ নেতাদের ওপর দফায় দফায় হামলা হয়েছে। দলটির ‘১৬ জুলাই: মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচি পণ্ড করতে বিভিন্ন স্থান থেকে সন্ত্রাসী হামলা চালানো হয়।
সারজিস আলমের অভিযোগ অনুযায়ী, একটি মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী হামলার দুদিন আগে থেকেই আশপাশের এলাকা থেকে হাজার হাজার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী গোপালগঞ্জ শহরে জড়ো হয়। তাদের মূল লক্ষ্য ছিল এনসিপিকে গোপালগঞ্জে প্রবেশ করতে দেওয়া হলেও জীবিত অবস্থায় তাদের বের হতে না দেওয়া।
গোয়েন্দা ব্যর্থতা ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা
এনসিপি নেতা সারজিস আলম সরকারের গোয়েন্দা ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, সরকারের গোয়েন্দারা কোনো সঠিক তথ্যই প্রশাসনকে সরবরাহ করতে পারেনি। প্রশাসনও ঘটনার পূর্বে তেমন প্রস্তুতি না নিয়েই এনসিপিকে নিরাপত্তা ছাড়পত্র দিয়েছিল। তার মতে, ঘটনার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যতটা তৎপর ছিল, পূর্বে ততটা তৎপর থাকলে এমন ঘটনা এড়ানো যেত। তিনি এই “রক্তপিপাসু, সন্ত্রাসীগোষ্ঠী”র বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার থাকা উচিত নয় বলেও মন্তব্য করেন।
শীর্ষ নেতাদের হত্যার পরিকল্পনা ও শেখ হাসিনার নির্দেশনা
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলাকারীদের মূল লক্ষ্য ছিল এনসিপির শীর্ষ নেতাদের হত্যা করা। এই মিশন সফল করতে স্বয়ং গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত থেকে মোবাইল ফোনে গোপালগঞ্জে একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলেন। এনসিপির বিরুদ্ধে জনগণকে উসকে দিতে তিনি বেশ কিছু অডিও বার্তাও পাঠিয়েছিলেন। পুরো পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত একাধিক সিনিয়র নেতা সমন্বয় করেন বলে জানা গেছে। এমনকি ভারতে পলাতক ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ফেসবুক লাইভে এসে সরাসরি হামলা চালানোর নির্দেশনা দেন।
যুগান্তরের হাতে আসা এমন একাধিক অডিও বার্তা নিয়ে শুক্রবার পত্রিকাটির প্রিন্ট সংস্করণে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ‘হাসিনার নির্দেশেই হামলা’ শীর্ষক এই প্রতিবেদনটি মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এই প্রতিবেদনের স্ক্রিনশট শেয়ার করে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের সংগঠক সারজিস আলম।
সারজিস আলমের ফেসবুক পোস্ট
সারজিস আলমের ফেসবুক পোস্টটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরা হলো:
“আওয়ামী আমলের সুবিধাভোগী বুদ্ধি বেচা, ফুটেজখোর, টকশোবাজ ও ক্ষমতার দালালরা লাস্ট দুইদিনে অনেক কথা বলেছেন। এ রিপোর্টটা পড়ুন। এটা জাস্ট একটা রিপোর্ট। বাস্তবতা এর চেয়ে অনেক বেশি হিংস্র ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বহিঃপ্রকাশ ছিল। সেদিন দেশ ও দেশের বাইরের আওয়ামী সন্ত্রাসীরা গোপালগঞ্জে একত্রিত হয়ে যে সশস্ত্র জঙ্গি হামলা করেছিল সেটা নিয়ে কথা না বলে ভিকটিম ব্লেমিংয়ের মতো ছোটলোকি মন-মানসিকতার পরিচয় অনেকে দিয়েছেন।
স্বয়ং হাসিনা পুরো হামলা কো-অর্ডিনেট করেছিল। এলাকার লোকজনকে ক্ষেপিয়ে তুলে হামলা চালাতে মাজার ভাঙার গুজব ছড়িয়ে দেয় তারা। মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে গুজব ছড়ায়। আমাদের গাড়ি বহরকে রাস্তার দুই পাশ থেকে আটকে দিয়ে গুলি বর্ষণ, ককটেল ও বোমা নিক্ষেপ করে। টার্গেট ছিল গণঅভ্যুত্থান ও এনসিপির শীর্ষ নেতৃত্বের সবাইকে একযোগে মেরে ফেলা। শুটারও ভাড়া করে আনা হয়।
প্রথমে প্ল্যান করছিল- যেখানে আমাদের অধিকাংশ নেতাকর্মী ছিল সেই পুলিশ সুপারের কার্যালয়কে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার। পরবর্তীতে অপেক্ষা করছিল সন্ধ্যা হওয়ার, সেজন্যই কালক্ষেপণ করতে রাস্তায় গাছ কেটে, বাঁশ ফেলে অবরোধ করা হয়। সরকারের গোয়েন্দা ব্যর্থতার কারণে কোনো সঠিক তথ্যই তারা সার্কুলেট করতে পারেনি প্রশাসনকে। আর প্রশাসনও ঘটনা ঘটার পূর্বে তেমন পূর্ব প্রস্তুতি না নিয়েই আমাদের সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স দেয়। ঘটনার পরবর্তীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যতটা তৎপর ছিল পূর্বে ততটা তৎপর থাকলে এমন ঘটনা নাও ঘটতে পারত। এই রক্তপিপাসু, সন্ত্রাসীগোষ্ঠীর বাংলাদেশে কোনো রাজনীতি করার অধিকার থাকতে পারে না, পারবে না।”