নিজস্ব প্রতিবেদক॥
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ফুটপাতের ক্ষুদ্র ও অনানুষ্ঠানিক ব্যবসায়ীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় ট্রেড লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের বিশাল অনানুষ্ঠানিক খাতকে বৈধতার আওতায় আনার এক গুরুত্বপূর্ণ সূচনা হতে যাচ্ছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) এসএমই ফাউন্ডেশন ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘ফরমালাইজ ইয়োর বিজনেস’ প্রশিক্ষণের সমাপনী অনুষ্ঠানে এই ঘোষণা দেন ডিএনসিসির প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বৈধকরণ ও আগারগাঁও মডেল প্রকল্প
ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ জানিয়েছেন, ব্যবসা বৈধকরণ সংক্রান্ত যেকোনো প্রয়োজনে উদ্যোক্তারা এসএমই ফাউন্ডেশন-এর মাধ্যমে যোগাযোগ করলে ডিএনসিসি সব ধরনের সহায়তা দেবে। তিনি উল্লেখ করেন, সরকার আগারগাঁও এলাকাকে একটি মডেল এলাকা হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে। এই প্রকল্পে সব ক্ষুদ্র ও অনানুষ্ঠানিক ব্যবসায়ীকে বৈধ করার উদ্যোগ নেওয়া হবে, যা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের জন্য একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে।
‘ফরমালাইজ ইয়োর বিজনেস’ প্রশিক্ষণ: অনানুষ্ঠানিক খাতকে মূলধারায় আনার উদ্যোগ
তিন দিনব্যাপী ‘ফরমালাইজ ইয়োর বিজনেস’ প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মূল লক্ষ্য ছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্তের অনানুষ্ঠানিক খাতে পরিচালিত খাবারের স্টল, কসমেটিকস ও বিউটি পণ্য, পোশাক, ই-কমার্স ও প্ল্যাটফর্মভিত্তিক উদ্যোক্তাদের ব্যবসা বৈধকরণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করা। একই সাথে, তাঁদের আইনি, আর্থিক ও প্রশাসনিক প্রক্রিয়ায় সক্ষম করে তোলাও এই প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্য ছিল। এই প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া বহু উদ্যোক্তা এতদিন ট্রেড লাইসেন্স বা কোনো প্রকার নিবন্ধন ছাড়াই তাঁদের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিলেন। তাঁরা এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ব্যবসা বৈধকরণ ও ট্রেড লাইসেন্সের প্রক্রিয়া, আয়কর ও ভ্যাটবিষয়ক নিয়মাবলি এবং খাদ্য ও পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন।
এসএমই ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন মো. মুসফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাপনী অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এসএমই ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ার হোসেন চৌধুরী।
অর্থনীতিতে এসএমই খাতের গুরুত্ব
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ক্ষুদ্র, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতের অবদান অপরিসীম। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৪ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষার প্রাথমিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অবদান প্রায় ৩২ শতাংশ। দেশে বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ সিএমএসএমই শিল্পপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। শিল্প খাতের মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৮৫ শতাংশ এই এসএমই খাতে, যেখানে তিন কোটিরও বেশি জনবল কর্মরত আছেন। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য এই খাতের আনুষ্ঠানিকীকরণ অত্যন্ত জরুরি।
ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের বৈধতা প্রদানের এই উদ্যোগ একদিকে যেমন তাঁদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বাড়াবে, তেমনি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকেও আরও সুসংহত করবে। এটি অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির একটি বড় অংশকে মূলধারায় ফিরিয়ে আনার এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ।