বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:২১ অপরাহ্ন
৯ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৪ঠা রজব, ১৪৪৭ হিজরি
শিরোনাম :
জলবায়ু অভিযোজনে বিনিয়োগ করলে ২০৩০ সালে পোশাক রপ্তানি ছাড়াবে ১২ হাজার কোটি ডলার তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: আজ ঢাবি ছাত্রদলের আনন্দ মিছিল নির্বাচনে নাগরিকদের অংশগ্রহণ বাড়াতে জাতিসংঘের নতুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘ফিউচার বাংলাদেশ’ ধামরাইয়ে বাজারে লুটপাটের অভিযোগ নিয়ে ধূম্রজাল: ব্যবসায়ীদের দাবি ‘ঘটনা সাজানো’ কেরানীগঞ্জে ফরমালিন দিয়ে ফল পাকানোর দায়ে ৯ ব্যবসায়ীকে অর্থদণ্ড সালথায় ৪০ পেঁয়াজ চাষিকে প্রকাশ্যে ঋণ দিল কৃষি ব্যাংক ওসমান হাদীর খুনিদের ফাঁসির দাবিতে আইএইচআরসি’র প্রতিবাদী সমাবেশ ধামরাইয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে নবনিযুক্ত ওসির মতবিনিময় সভা বিজয় দিবসে জাতীয় সম্মিলিত ফোরাম (জেএসএফ) বাংলাদেশের শুভেচ্ছা ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস: শ্রেষ্ঠ আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়

পদ্মায় ভয়াবহ ভাঙন: বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি, আতঙ্কে ৬০০ পরিবার

Coder Boss
  • Update Time : মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫
  • ৭৪ Time View

শরীয়তপুর প্রতিনিধি॥
টানা তিন দিনের বৃষ্টি এবং পদ্মা নদীর তীব্র স্রোতে শরীয়তপুরে ভাঙনের তীব্রতা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। এর ফলে নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দারা তাদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) গাফিলতির কারণেই পদ্মাপাড়ের মানুষ এই ভয়াবহ ভাঙনের শিকার হচ্ছেন।

পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধের ২০০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবায় পদ্মা সেতু প্রকল্পের রক্ষা বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার অংশ পদ্মা নদীতে ধসে পড়েছে। ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হলেও তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছে না। স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত একটি স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা না হলে পুরো এলাকা বিলীন হয়ে যাবে। সোমবার (৭ জুলাই) দুপুর ৩টা থেকে ভাঙন শুরু হয়ে বিকেল ৪টার পর ভয়াবহ রূপ নেয়। এতে একের পর এক দোকানপাট ও স্থাপনা নদীতে বিলীন হতে থাকে। মঙ্গলবারও বেশ কিছু বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং একটি পাকা বিল্ডিং নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে, যা স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

বারবার ধসের শিকার পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধ
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় সেতুর পূর্ব পাশে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকাজুড়ে ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছিল। এর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল নদীশাসনের বাঁধও। গত বছরের নভেম্বর মাসে নাওডোবার জিরো পয়েন্ট এলাকায় প্রথম ধস দেখা যায়। চলতি বছরের ৮ জুন সকালেও পদ্মা সেতু রক্ষা বাঁধের প্রায় ২০০ মিটার অংশ নদীতে ধসে পড়েছিল।

সোমবারের ধসের ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলেছে। বাঁধ ধসে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়েছে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকার আলম খার কান্দি, উকিল উদ্দিন মুন্সি কান্দি এবং ওছিম উদ্দিন মুন্সি কান্দি গ্রাম। এসব গ্রামের অন্তত ৬০০ পরিবার নদী ভাঙনের আশঙ্কায় রয়েছে।

আতঙ্কে ৩০টি বাড়ি ও ২০টির বেশি দোকানপাট স্থানান্তরিত
স্থানীয়রা জানান, ভাঙনে পদ্মায় ৬টি বসতবাড়ি এবং ১৩টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হয়েছে। একের পর এক দোকানপাট ও ঘরবাড়ি নদীতে পড়ায় এলাকায় চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। আতঙ্কে অন্তত ৩০টি বাড়ি এবং ২০টির বেশি দোকানপাট অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন স্থানীয়রা।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে বারবার মাইকিং করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বলা হচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন বলেন, “দুপুর ৩টা থেকে হঠাৎ বাঁধের মাটি সরে যেতে থাকে। বিকেল ৪টার পর একের পর এক দোকানপাট আর ঘরবাড়ি পদ্মায় পড়তে থাকে। আমরা খুবই আতঙ্কে আছি। দ্রুত স্থায়ী বাঁধ না দিলে পুরো এলাকা বিলীন হয়ে যাবে।”

হাজী মমিন আলী মাঝি কান্দি এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার মো. জলিল সরদার বলেন, “গত কয়েকদিন ধরেই নদীতে স্রোত বেশি। বাঁধের পেছনে ফাটল দেখা দিয়েছিল, কিন্তু কেউ গুরুত্ব দেয়নি। এখন পরিস্থিতি ভয়াবহ হয়ে গেছে।”

প্রশাসন ও পাউবোর পদক্ষেপ
জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী রায় বলেন, “এলাকায় ভাঙন পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আমাদের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের নিরাপদে সরিয়ে নিতে এবং ক্ষয়ক্ষতির তালিকা তৈরি করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী তারেক হাসান বলেন, “আমরা মেজারমেন্ট ট্যাপ দিয়ে এখনো মাপতে পারিনি। আনুমানিক ২০০ মিটারের মতো ভাঙন হয়েছে। আমাদের ডাম্পিংয়ের পরে এই ভাঙনটা হয়েছে। এটা বিবিএ একটা অস্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করেছিল। তারপরও আমরা জরুরিভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলার কাজ শুরু করেছি। আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি।”

এই পরিস্থিতিতে দ্রুত স্থায়ী সমাধান না হলে শরীয়তপুরের এই অঞ্চলটি পদ্মা নদীর গর্ভে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102