অনলাইন ডেস্ক॥
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আজ (শনিবার) ৮৫তম জন্মদিন। তিনি ১৯৪০ সালের ২৮ জুন চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বাথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।
আজকের এই দিনে, ১৯৪০ সালের ২৮ জুন, চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার শিকারপুর ইউনিয়নের বাথুয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তাঁর পিতা দুলা মিঞা সওদাগর একজন মুহুরী এবং মাতার নাম সুফিয়া খাতুন।তাঁর সহধর্মিণী অধ্যাপক দিনা আফরোজ। এই দম্পতির দুটি কন্যা সন্তান রয়েছে।
শিক্ষাজীবন ও কর্মজীবনের প্রারম্ভ
ড. মুহাম্মদ ইউনূস পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। চট্টগ্রামের কলিজিয়েট স্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন পরীক্ষায় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ৩৯ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে তিনি ১৬তম স্থান অধিকার করেন। এরপর তিনি চট্টগ্রাম কলেজে পড়াশোনা করেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক সম্পন্ন করেন। ১৯৬১ সালে চট্টগ্রাম কলেজের অর্থনীতির প্রভাষক হিসেবে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয় এবং পরে তিনি অধ্যাপক পদে উন্নীত হন।
১৯৬৫ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনার জন্য ফুলব্রাইট স্কলারশিপ লাভ করেন। ১৯৭১ সালে ভান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রাম ইন ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট থেকে অর্থনীতিতে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। সেখানে তিনি আমেরিকার মার্সিসবোরোতে মিডিল টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটিতে অর্থনীতির সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি আমেরিকাতে একটি নাগরিক কমিটি গঠন করেন এবং অন্যান্য বাংলাদেশিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সমর্থন সংগ্রহে ‘বাংলাদেশ ইনফরমেশন সেন্টার’ পরিচালনা করেন।
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠা ও নোবেল পুরস্কার লাভ
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর, ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষের সময় ড. ইউনূস দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করেন। সেই সময় তিনি গ্রামীণ অর্থনৈতিক প্রকল্প চালু করেন। ১৯৭৬ সালে পার্শ্ববর্তী জোবরা গ্রামে পরীক্ষামূলকভাবে গ্রামীণ ব্যাংক প্রকল্পটি শুরু করেন। ১৯৮৩ সালে এই প্রকল্পটি ‘গ্রামীণ ব্যাংক’ হিসেবে রূপান্তরিত হয়, যার কার্যক্রম বাংলাদেশের অধিকাংশ গ্রামে বিস্তৃত। বাংলাদেশের বাইরেও আমেরিকাসহ বিশ্বের ৪০টি দেশে গ্রামীণ ব্যাংক পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে।
১৯৮৭ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারসহ তিনি অসংখ্য দেশি ও বিদেশি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি সেই সাতজন ব্যক্তির মধ্যে একজন, যিনি নোবেল শান্তি পুরস্কার, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম এবং কংগ্রেশনাল গোল্ড মেডেল – এই তিনটি সম্মাননা পেয়েছেন।
মুহাম্মদ ইউনূস এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। তিনি প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে এই সম্মানজনক পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়াও তিনি বিশ্বখাদ্য পুরস্কারসহ আরও অনেক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা
গত বছরের জুলাই মাস থেকে ছাত্র-জনতার কোটা সংস্কার আন্দোলন এক পর্যায়ে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে পরিণত হয়। এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে শেখ হাসিনা দলবলসহ ভারতে চলে যান। পরবর্তীতে, গত ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয় এবং তিনি বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।