বিশেষ প্রতিনিধি॥
ধামরাই: বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে ঢাকার ধামরাইয়ে শুক্রবার (২৭ জুন) থেকে শুরু হলো প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো, উপমহাদেশ খ্যাত ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব শ্রীশ্রী যশোমাধব দেবের রথযাত্রা ও তার মাসব্যাপী মেলা। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেঃ জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) প্রধান অতিথি হিসেবে এই রথ উৎসব ও মেলার শুভ উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় রথ উৎসব অনুষ্ঠিত হয় এই ধামরাইয়ে। রথযাত্রা আজ শুরু হলেও আগামী ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে উল্টো রথযাত্রা। তবে উৎসবের আমেজ বজায় রেখে মেলা চলবে মাসব্যাপী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শ্রীশ্রী যশোমাধব মন্দির পরিচালনা ও রথ পরিচালনা কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জীবন কানাই দাস। এছাড়াও শ্রীশ্রী যশোমাধব মন্দির পরিচালনা ও রথ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক, কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের চেয়ারম্যান এবং আর.পি. সাহার নাতি রাজীব প্রসাদ সাহা সহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সার্বিক পরিচালনা করেন ধামরাই যশোমাধব মন্দির পরিচালনা ও রথ পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নন্দ গোপাল সেন।
প্রায় ৪০০ বছর আগে হিন্দু ধর্মীয় ভাবধারায় এই উৎসবের সূচনা হলেও, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কারণে এটি বর্তমানে ব্যাপক সার্বজনীনতা লাভ করেছে। এই ধর্মীয় রথ উৎসবকে কেন্দ্র করে ধামরাইয়ে আত্মীয়-স্বজনদের আগমন ঘটে দূর-দূরান্ত থেকে। অতীতে বাংলাদেশ ছাড়াও বিদেশ থেকে হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ রথ উৎসব উপলক্ষে ধামরাইয়ে ভিড় জমাতেন, এবং এখনো আসেন। কালের বিবর্তনে এই পুরো উৎসবটি এখন কেবল ধর্মীয় ভাবধারায় সীমাবদ্ধ না থেকে সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে। এরই মধ্যে মেলা প্রাঙ্গণে বসেছে হাজার হাজার দোকান, এসেছে সার্কাস পার্টিসহ বিভিন্ন ধরনের খেলার আয়োজন।
ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ে ২৭ জুন বিকেল ৪টায় বাংলার গৌরবময় এই সুপ্রাচীন ও প্রায় চার শত বছরের পুরোনো হিন্দু সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী, দেশের সর্ববৃহৎ রথ উৎসবের রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে।
মেলায় নিরাপত্তার স্বার্থে সিসি ক্যামেরা এবং মেটাল ডিটেক্টর বসানো হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা বাহিনীসহ সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছেন। ধামরাই থানার ওসি মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, ইতিপূর্বে ধামরাইয়ের রথে এমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি এবং উল্টো রথেও একই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রতি বছরের মতো এবারও পুরো অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করছেন ধামরাই মাধব মন্দির ও রথ মেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শিক্ষক নন্দ গোপাল সেন।
ভারতের পুরী ও মাহেশের রথের পরেই উপমহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই ধামরাইয়ের রথ উৎসবকে কেন্দ্র করে শুরু থেকেই সাধারণ মানুষের মাঝে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। প্রতিদিন হাজার হাজার ভক্ত ও দর্শনার্থীর ভিড়ে মেলা প্রাঙ্গণ জমজমাট।
আগামী ৯ দিন পর, ৫ জুলাই অনুষ্ঠিত হবে উল্টো রথযাত্রা। পূর্বের ন্যায় মাধব ও তার সহচরদের রথে চড়িয়ে সন্ধ্যায় ভক্তরা পুনরায় টেনে আনবে ধামরাই পৌর এলাকার কায়েতপাড়ার রথখোলায়। এখান থেকে মূর্তিগুলো চলে যাবে পুরোনো মাধবের নিজ মন্দির আলয়ে। রথটি সারা বছর রথখোলায় থাকে বলেই এই স্থানটির নামকরণ হয়েছে রথখোলা, যার ইতিহাসও প্রায় ৪০০ বছরের পুরোনো।