বিশেষ প্রতিবেদক॥
ঢাকা: আমিন মডেল টাউন লিমিটেড এবং এর বিভিন্ন প্রকল্পের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এ একটি তদন্তের আবেদন জমা পড়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহক/সচেতন নাগরিকের পক্ষ থেকে এই অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। অভিযোগে আমিন মডেল টাউন লিমিটেডের বিরুদ্ধে জমির মালিকানা সংক্রান্ত জালিয়াতি, সরকারি জমি প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা, অননুমোদিত জায়গায় প্রকল্প নির্মাণ, পরিবেশ আইন লঙ্ঘন, গ্রাহক প্রতারণা এবং সরকারি বিধিমালা লঙ্ঘনের মতো গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, আমিন মডেল টাউন লিমিটেড তাদের প্রকল্পগুলোর জন্য জমির বৈধ মালিকানা ও রাজউক, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র প্রমাণ ও গ্রাহকদেরকে সময়মতো জায়গা বুঝিয়ে দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে জমি দখল এবং সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি অবৈধভাবে ব্যবহারের অভিযোগও উঠেছে। কোম্পানিটি যথাযথ অনুমোদন ব্যতিরেকে প্রকল্প করেছে এবং অনুমোদিত নকশার বাইরে নির্মাণ কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, এখানে উল্লেখ চিত যে রোডস এন্ড হাইওয়ের জায়গা দখল করে মার্কেট নির্মাণ করেছেন, যা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা, রাষ্ট্রীয় আইন এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
পরিবেশগত ছাড়পত্র লঙ্ঘন করে আমিন মডেল টাউন এর কিছু প্রকল্পে অপরিকল্পিতভাবে জলাধার ভরাট এবং নির্বিচারে বৃক্ষনিধনের অভিযোগও আনা হয়েছে। এর ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে, যা পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০। এর পরিপন্থী।
সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগগুলির মধ্যে একটি হলো সরকারি জায়গা ভাড়া দিয়ে অগ্রিম অর্থ হাতিয়ে নেওয়া, গ্রাহক প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎ অভিযোগ অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের সাথে অস্বচ্ছ ও একতরফা চুক্তি সম্পাদন করছে। তারা অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে এবং প্রতিশ্রুত সুবিধা যেমন সময়মতো প্লট হস্তান্তর, অবকাঠামো উন্নয়ন ইত্যাদি না দিয়ে গ্রাহকদের হয়রানি করছে। এটি চুক্তি আইন, ১৮৭২ এবং ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে যে, আমিন মডেল টাউন লিমিটেড বেসরকারি আবাসন প্রকল্প উন্নয়ন বিধিমালা, ২০০৪ সহ ভূমি আইন, পরিবেশ আইন, ইমারত নির্মাণ আইন এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সরকারি আইন ও বিধিমালা নিয়মিতভাবে লঙ্ঘন করছে।
দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর দাখিলকৃত এই অভিযোগপত্রের অনুলিপি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ধামরাই), ধামরাই থানা, পুলিশ সুপার (এসপি) ঢাকা, মহা পুলিশ পরিদর্শক (আইজিপি), সেনাবাহিনী ক্যাম্প ও সেনা সদর দপ্তর, ডিবি প্রধান কার্যালয় ঢাকা, জেলা প্রশাসক (ঢাকা), পরিবেশ অধিদপ্তর এবং রাজউক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগকারীরা সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে আমিন মডেল টাউন লিমিটেডের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। অভিযোগপত্রের সাথে প্রমাণপত্র হিসেবে চুক্তির কপি, রশিদ, ছবি এবং সংবাদপত্রের কাটিং সংযুক্ত করা হয়েছে।
বিশেষ দ্রষ্টব্য : আমিন সাহেব হচ্ছেন, ঢাকা-২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বেনজির আহমেদের বিয়াই।তার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুষ্ঠ দেখিয়ে একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তারের গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। তৎকালীন শেখ হাসিনা সরকারের সময় এই ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে তিনি নিজের ইচ্ছেমতো সবকিছু করেছেন বলে জানা গেছে।একজন সাবেক এমপির আত্মীয় হয়ে তিনি কীভাবে এত দীর্ঘসময় ধরে এমন অনিয়ম চালিয়ে যেতে পারলেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত বলে মনে করছেন সচেতন মহল।