মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা॥
বিপদ সবসময় মানুষের জন্য ধ্বংস ডেকে আনে না। বরং অনেক সময় বিপদ নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়। এটি মানুষকে আরও সচেতন ও শক্তিশালী হতে সাহায্য করে এবং দুনিয়া ও আখিরাতে মর্যাদা বৃদ্ধি করে।
পরীক্ষার অংশ হিসেবে বিপদ
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, “আর আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জানমাল ও ফলফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।” (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৫৫)। এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, সাময়িক দুঃখ-কষ্ট ও অভাব-অনটন দুনিয়ার জীবনেরই অংশ। দুনিয়ার জীবন হাসি-কান্না, রাত-দিনের মতোই পরিবর্তনশীল। তাই কোনো বিপদে পড়লে তাকে অপ্রত্যাশিত না ভেবে ধৈর্য ধারণ করা সহজ হয়। বিপদে ধৈর্য ধরলে তা নিয়ামতে রূপান্তরিত হয় এবং বান্দার জন্য কল্যাণকর হয়ে ওঠে। তবে বিপদে আল্লাহর ওপর ভরসা হারালে তা কেবল বিপদই থেকে যায়, এমনকি আরও বড় বিপদের কারণ হতে পারে।
মুমিনের জন্য সব কাজই কল্যাণকর
সুহায়ব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “মুমিনের অবস্থা বিস্ময়কর। সব কাজই তার জন্য কল্যাণকর। মুমিন ছাড়া অন্য কেউ এ বৈশিষ্ট্য লাভ করতে পারেন না। তাঁরা সুখ-শান্তি লাভ করলে শোকরগুজার করেন আর অসচ্ছলতা বা দুঃখ-মুসিবতে আক্রান্ত হলে ধৈর্য ধরেন, প্রতিটিই তাঁর জন্য কল্যাণকর।” (মুসলিম, হাদিস : ৭৩৯০)। এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, মুমিনদের জন্য যেকোনো পরিস্থিতিতেই কল্যাণ নিহিত থাকে।
আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের পরীক্ষা
বিপদে পড়া মানে এই নয় যে বিপদগ্রস্ত ব্যক্তি আল্লাহর অপছন্দের। আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের বেশি পরীক্ষা করেন। নবীজি (সা.) এর বাণী থেকে জানা যায়, “বিপদ যত তীব্র হবে, প্রতিদানও তদনুরূপ বিরাট হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো জাতিকে ভালোবাসলে তাদের পরীক্ষা করেন। যারা তাতে সন্তুষ্ট থাকে, তাদের জন্য আছে আল্লাহর সন্তুষ্টি। আর যারা তাতে অসন্তুষ্ট হয়, তাদের জন্য আছে অসন্তুষ্টি।” (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০৩১)।
কষ্টের পর স্বস্তি ও মর্যাদা বৃদ্ধি
মুমিনদের আসলে হারানোর কিছুই নেই। শত্রু ও হিংসুকরা তাদের আঘাত দিয়ে নিশ্চিহ্ন করতে চাইলেও মহান আল্লাহ ওই আঘাতগুলোর বিনিময়ে তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং সময়ের পরিবর্তনে তাদের স্বস্তি দান করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, “নিঃসন্দেহে কষ্টের সঙ্গেই স্বস্তি আছে।” (সুরা : আল ইনশিরাহ, আয়াত : ৬)।
হাদিস শরিফে আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, “যদি কোনো মুসলমানের গায়ে একটি কাঁটা বিদ্ধ হয়, কিংবা তার চেয়েও বেশি ছোট্ট কোনো আঘাত লাগে, তার বিনিময়ে তার একটি মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং তার একটি গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।” (মুসলিম, হাদিস : ৬৪৫৫)।
তাই আমাদের উচিত, বিপদের দিনে হতাশ না হয়ে মহান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা রাখা এবং তাঁর সাহায্য চাওয়া। ইনশাআল্লাহ, মহান আল্লাহ দুশ্চিন্তাকে আনন্দে পরিণত করবেন এবং উত্তম প্রতিদান দেবেন।