বাসস প্রতিবেদন॥
দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলাগুলো থেকে অবশেষে মুক্তি পেতে চলেছেন হাজারো মানুষ। সরকারের পক্ষ থেকে সারা দেশে ১০ হাজার ৫০৬টিরও বেশি এমন মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অর্থাৎ ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত দায়ের হওয়া এসব মামলাকে হয়রানিমূলক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এসব মামলার ভুক্তভোগীদের মধ্যে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী এবং জামায়াতের নেতাকর্মীরাও রয়েছেন।
সরকারের এই সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের চিঠি পাঠানো হয়েছে। চিঠিতে প্রতিটি মামলার নম্বর উল্লেখ করে জেলা পাবলিক প্রসিকিউটরদের প্রয়োজনীয় আইনি পরামর্শ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। একইসাথে, ফৌজদারি কার্যবিধির ১৮৯৮ এর ৪৯৪ ধারার আওতায় মামলাগুলো প্রত্যাহার করে না চালানোর বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটদের জানানো হয়েছে।
রাজনৈতিক কারণে দায়ের হওয়া হয়রানিমূলক মামলাগুলো পর্যালোচনার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দুটি কমিটি গঠন করেছে – একটি জেলা পর্যায়ে এবং অন্যটি মন্ত্রণালয় পর্যায়ে। জেলা পর্যায়ের কমিটিতে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সভাপতি এবং অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়াও, পুলিশ সুপার (মহানগর এলাকায় ডেপুটি কমিশনার) ও পাবলিক প্রসিকিউটর (মহানগর এলাকায় মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর) কমিটির সদস্য হিসেবে থাকবেন।
জেলা কমিটি কোনো মামলাকে হয়রানিমূলক মনে করলে, সেটি প্রত্যাহারের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ করবে। সুপারিশের পাশাপাশি মামলার এজাহার ও অভিযোগপত্রসহ অন্যান্য তথ্য ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে।
এছাড়াও, ভুক্তভোগীরা সরাসরি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বা আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর বরাবরও মামলা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এসব আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পর মন্ত্রণালয় একটি তালিকা তৈরি করবে। এরপর আইন উপদেষ্টার সভাপতিত্বে গঠিত কমিটির অনুমোদন শেষে মামলা প্রত্যাহারের চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শুরু হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে জেলা পর্যায়ের কমিটির কাজের নিয়মকানুন সম্পর্কে একটি প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটি জেলা কমিটির সুপারিশ পরীক্ষা করবে এবং প্রত্যাহারযোগ্য মামলা চিহ্নিত করে সেগুলোর প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নেবে। তবে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনের আওতাধীন মামলাগুলো কমিশনের লিখিত আদেশ ছাড়া প্রত্যাহার করা যাবে না।
মন্ত্রণালয় পর্যায়ের কমিটিতে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল সভাপতি এবং জননিরাপত্তা বিভাগের আইন-১ শাখার সিনিয়র সহকারী সচিব সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন।
এই উদ্যোগের ফলে দীর্ঘ আইনি জটিলতা এবং হয়রানি থেকে মুক্তি পাবেন বহু রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ মানুষ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সল হাসান জানিয়েছেন, নিরাপরাধ ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অনর্থক হয়রানি থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য এই কার্যক্রম চলমান থাকবে।