শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০৪:৩০ পূর্বাহ্ন
২৬শে পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
১০ই রজব, ১৪৪৬ হিজরি
শিরোনাম :
জিয়াউর রহমান সমাজকল্যাণ ফোরাম (জিসফ) এর ৩১ সদস্য বিশিষ্ট ফরিদপুর শাখা আহ্বায়ক কমিটি গঠিত কবিতা-১ ও কবিতা-২ ফরিদপুরে আ.লীগ বিএনপি সংঘর্ষ, বাড়িঘর ভাঙচুর কৃষিপণ্যের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মূল্য নির্ধারণের দাবিতে মানববন্ধন সালথায় বিএনপির পক্ষ থেকে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্তু বিতরণ ঢাকার ধামরাইয়ের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে উঠান বৈঠক অনুষ্ঠিত আজারবাইজানের বিমান ভূপাতিত করার দায় ক্ষমা চেয়েছেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির আজহারীর বয়ান শুনলেন লাখ লাখ মানুষ সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মৃত্যুতে প্রধান উপদেষ্টার শোক বিডিআরএমজিপি এফএনএফ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে শীতবস্ত্র (কম্বল) বিতরণ

কোটা নয়, ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমতা চাই!

Coder Boss
  • Update Time : শনিবার, ১৬ নভেম্বর, ২০২৪
  • ২৬ Time View

রাজু আহমেদ, কলাম লেখক॥
যে কোটা নিয়ে এতোকিছু ঘটে গেলো সেই কোটার কথা আবার যেহেতু নতুনভাবে উঠেছে, তবে এবার কোটা নিয়ে আরেকটু খোঁটা দিতেই হবে। চাকুরিতে কোটা বন্ধের দাবিতে সরকারের সাথে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে একটা প্রতাপশালী সরকার পালিয়ে যেতে বাধ্য হলো, হাজার শিক্ষার্থীর জীবন গেলো, অসংখ্য আহত-পঙ্গু হলো- সেই কোটা নিয়ে আলোচনা করতেও ভয় হয়। ‘মেধা না কোটা’ কোটা, কোটা- শিক্ষার্থী ও জনতার এই স্লোগান জিতে যাওয়ার পরে রক্তস্নাত বাংলাদেশে যে নতুন সূর্যোদয় দেখার অপেক্ষায় সমগ্র জাতি সেই দেশের স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তিতে এখনো কোটা সিস্টেম চালু আছে- এর চেয়ে দূর্ভোগ ও দূর্ভাগ্যজনক মশকরা আর একটাও হতে পারে না।

স্কুল/কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ে কর্মরত কর্তাব্যক্তি কিংবা সচেতনমহলের কেউ- তাদের সন্তানদের জন্য কোটাব্যবস্থা চালু থাকবে- এর পক্ষে যুক্তি দিতেও বিবেক বাঁধা দিচ্ছে। যিনি সম্মানিত পেশার সাথে জড়িত, শিক্ষিত কিংবা রাষ্ট্রীয় সুযোগ ব্যবহারে সক্ষম তিনি সন্তানদের জন্য স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে কোটা পাবেন- বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্লোগানের সাথে এমন দাবি একেবারেই অসঙ্গত। যারা তার যোগ্যতাকে প্রমাণ করে রাষ্ট্রীয় সুযোগসুবিধা প্রাপ্য হয়ে সন্তানদেরকে পড়াশোনা করাচ্ছেন তাকে কোন প্রতিষ্ঠান থেকে কোটা গ্রহন করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে বাড়তি সুুবিধা দিতে হবে- এটা স্পষ্টত ন্যায্যতার বিরুদ্ধাচারণ।

যিনি যে প্রতিষ্ঠানে কর্মাধীন তার সন্তানদেরকে সেই প্রতিষ্ঠানে পড়াতেই হবে- এটাও গ্রহনযোগ্য সিদ্ধান্ত নয়। এতে স্বেচ্ছাচারী নীতিবাদ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে। স্বজনপ্রীতি মাথাচাড়া দিতে পারে। সমষ্টিগতভাবে প্রকৃতিতে বৈষম্য আছে। কাজেই আমি কখনোই কোটার বিপক্ষের মানুষ নই। আমার বিরোধিতার জায়গা- কারা কোটা পেতে পারে কিংবা কাদের প্রাপ্য নয়- এই প্রশ্নে। কোন প্রতিষ্ঠানে যদি কারো জন্য বিশেষ কোটার বন্দোবস্ত করা হয় তবে সেটা সেই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সন্তানদের জন্য থাকা উচিত/ রাখা উচিত। চরাঞ্চল কিংবা প্রত্যন্ত গ্রামের শিক্ষার্থীদের জন্য কোটা রাখলেও রাখা যায়। কেননা এই শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবন ও মানবজীবনের বহুস্তরে নানাভাবে বঞ্চিত হয়েছে। এদেশের কৃষক, কুলি, মজুর কিংবা যাদের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণের ঘাটতি থেকে যাচ্ছে- কোন ধরণের কোটা যদি সৃষ্টি করতে হয় কিংবা বহাল রাখতে হয় তবে সেটা উপরোক্ত শ্রেণি-পেশার মানুষের সন্তানদের জন্য স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা উচিত। যারা কর্মজীবনে রাষ্ট্র থেকে সর্বোচ্চ সুযোগ-সুবিধা পেয়েছে, যারা সাধারণদের তুলনায় বেশি সচেতন তাদের সন্তানদের জন্য কোটা ব্যবস্থার প্রচলন থাকা কিংবা আসন অবারিত রাখার দাবি হাস্যকর, অযৌক্তিক তো বটেই।

যে স্পিরিট ধারণ করে চব্বিশের বাংলাদেশ চলছে সেখানে কোটা সিস্টেমের আমূল উৎখাত সময়ের দাবি। সরকারকে এ ক্ষেত্রে দৃষ্টি দিতে হবে। নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে পিছিয়ে থাকা মানুষের জন্য সামান্য সংখ্যক কোটার ব্যবস্থা রাখলে রাষ্ট্রে ভারসাম্য রক্ষা পায় বটে তবে যারা রাষ্ট্রের প্রিভিলেজপ্রাপ্ত তাদের জন্য এবং তাদের সন্তানদের জন্য সনাতন প্রথায় কোটা বহাল রাখা ‘২৪ এর শহীদদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করার শামিল। যারা পঙ্গু হয়েছে, জীবন দিয়েছে তাদের জন্য কোটা বহাল করা আর যারা রাষ্ট্র থেকে সকল ধরণের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বড় হয়েছে, তাদের জন্য কোটার ব্যবস্থা করা- এক ব্যাপার নয়। যার যেমন যোগ্যতা সে তেমন প্রাপ্য স্থানে পৌঁছাবে। কোন প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করা মানে সে প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন নেওয়া কিংবা রাষ্ট্র থেকে মজুরি পরিশোধ করাই দাবির চূড়ান্ত। কোথাও কোন চাকুরির বিনিময়ে পরবর্তী প্রজন্মকে কোটা দিতে হবে- এটা যৌক্তিক আশাবাদের বিরুদ্ধে অবস্থানের শামিল। নৈতিক আইনেও এটা পারমিট করার কথা নয়।

কোটাহীন একটি নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি। কাউকে কোটা দিয়ে বাড়তি সুযোগ দেওয়া মানে আরেকজন মেধাবীকে বঞ্চিত করার নামান্তর। বিভিন্ন পেশাজীবীদের সন্তানদের জন্য প্রয়োজন মনে করলে রাষ্ট্র আলাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করার কথা ভাবতে পারে, বাংলাদেশে সম্ভবত এ ধরণের কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, কিন্তু যেগুলো পাবলিকের স্বার্থের সাথে সংশ্লিষ্ট স্কুল/কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় সেখানে কোনভাবেই কোটা বহাল রাখা যাবে না। যারা যোগ্য, মেধাতালিকায় যারা স্থান পাবে শুধু তারাই ভর্তি হয়ে পড়াশোনার সুযোগ পাবে। কেউ একজায়গায় চাকুরি করে আরে সেখানে সর্বসাধারণের সাথে ভিন্নতা রেখে তার সন্তানকে সেখানে সুযোগ দিতে হবে এটা প্রায় চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের মত অন্ধকার সিস্টেম। যা থেকে বের হওয়া দরকার। সমাজের বিবেকবানদের মধ্যে যারা সবচেয়ে আলোকিত তাদের এই অযৌক্তিক কোটা প্রথা ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করা উচিত। সন্তানদের কোল থেকে দীরে সরিয়ে মানুষ করলে সময়ের সাথে, পরিবেশের সাথে তাল মিলিয়ে টেকসই হবে!

আমরা কোটা মুক্ত বাংলাদেশ প্রত্যাশা করি। যে বৈষম্যদূরীকরণের জন্য হাজার মানুষ জীবন উৎসর্গ করেছে, অকাতরে বুকের তাজা রক্ত দিয়েছে, হাসপাতালের বিছানায় এখনো জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে কাতরাচ্ছে কিংবা যারা আজীবনের জন্য অঙ্গ হারিয়েছে তাদের ত্যাগের সাথে যাতে বেঈমানি করা না হয়। এই সংগ্রাম-সংস্কারের প্রথম ও প্রধান শর্তই বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মান করা। দেশ থেকে বৈষম্য দূর করার জন্য সর্বপ্রথম কোটা সিস্টেমকে চিরতরে উৎখাত করতে হবে। কাউকে বাড়তি সুবিধা দেওয়া অন্যায় নয় তবে সেটা দিতে হবে যে পিছিয়ে আছে কিংবা যে যৌক্তিকভাবে প্রাপ্য তাকে। যে এগিয়ে আছে কিংবা এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে তাকে নতুন করে বাড়তি সুবিধা দিলে সমাজের মধ্যে বৈষম্য আরও বাড়বে। এবং প্রজন্মের একাংশকে অল্প পরিশ্রমে অধিক সুযোগ প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দেওয়া হবে। যা সাধারণ ছাত্র-জনতার সংগ্রাম-ত্যাগের চেতনার সম্পূর্ণভাবে বিরুদ্ধ।

লেখটিতে শিক্ষকদের কথা ঘুরেফিরে এসেছে। ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। এটা মূলত কেবল শিক্ষকদের ক্ষেত্রেই নয় বরং যারাই যে সেক্টর থেকে কোটা পাচ্ছে কিংবা নিচ্ছে কিন্তু তারা রাষ্ট্রের অগ্রসরমান জনগোষ্ঠীর অংশ তাদের সবার জন্য সংরক্ষিত কোটা বাতিল করতে হবে। যেখানে শিক্ষা কেবল অর্থের বিনিময়ে গ্রহন করতে হয় সেখানে যত ইচ্ছা কোটা থাকুক কিন্তু সকল নাগরিকের অধিকার সংশ্লিষ্ট যে শিক্ষাঙ্গনসমূহ সেখানে কোটা থাকতে পারবে না, কোটা রাখা যাবে না। চব্বিশের বাংলাদেশে যদি কোটা থাকে তবে রাষ্ট্রকে আবারও খোঁটা খেতে হবে। এদেশের মানুষ সাম্য ও সমতার বাংলাদেশ প্রত্যাশা করে। কাউকে অনৈতিক সুযোগ প্রদানের সুযোগ এখানে থাকবে না। এই বাংলাদেশে সবার অধিকার সমান। মজুরের আর মালিকের আলাদা কোন শ্রেণী থাকুক, আবার শোষনের খড়গ নামুক- প্রত্যাশা করি না।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102