মো. নাসির খান (শরীয়তপুর) ॥
বাবা আসবে এমন অপেক্ষায় প্রতিদিনই পথ চেয়ে থাকে সজীবের তিন বছরের ছেলে আব্দুর রহমান।বাবা এসেছেন এমন চিন্তা থেকে কেউ দরজায় নক করলেই দৌড়ে যায় দরজা খুলতে।মাকে বলে দরজা খুলে দাও।মা দরজা খুলতেই আব্দুর রহমান বাবাকে দেখতে না পেয়ে হতাশ হয়ে যায়।মাকে জিজ্ঞেস করে, বাবা কখন আসবে? সজীবের স্ত্রী-সন্তানদের সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা পায় না।তিনি জুলাই-আগস্টের ছাত্র-গণ-অভ্যুত্থানে নিখোঁজ হওয়ার পর তার লাশ পাওয়া যায় নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীতে।বাবার আদর ও স্নেহহারা হয় তার অবুঝ দুই সন্তান। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ সজীব হাওলাদারের অবুঝ সন্তান ও পরিবারের খোঁজ নেয়নি কেউ।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদ সজীব হাওলাদের গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুর থানার চরকুমারিয়া ইউনিয়নের মাঝিকান্দি গ্রামে।সজীব ডেমরা থানার মিরপাড়া স্টাফ কোয়ার্টারের মারিয়া কমিউনিটি সেন্টারের ৬ষ্ঠ তলায় ঘর ভাড়া নিয়ে মা সেলিনা, স্ত্রী রাবেয়া এবং আব্দুর রহমান ও আহাদ নামে দুই সন্তান নিয়ে বসবাস করতেন।তিনি ভ্রাম্যমাণ চা বিক্রি করে সংসার চালাতেন।ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তিনি চা বিক্রয়ের ফাঁকে আন্দোলরত ছাত্রদেরকে পানি, চা ও বিস্কুট খাওয়াতেন।মিরপুরের একটি কলেজের ছাত্র সজীবের বড় ভাই রানার সাথে আন্দোলনেও যোগ দিতেন সজীব।
গত ৫ আগস্ট বেলা ১১টা পর্যন্ত সজীবকে আন্দোলনকারীদের সহযোগিতা করতে দেখা যায়।এরপর তার আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি।নিখোঁজের ১০ দিন পর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে সজীবের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে সোনারগাঁও থানা পুলিশ।লাশের পরনে জিন্সের প্যান্টে থাকা একটি মোবাইল ফোন থেকে সজীবের পরিবারের খোঁজ মেলে।পরে তাকে শরীয়তপুরের গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করা হয়।
সজীবের পরিবারের দাবি, আন্দোলনের শেষ দিন সজীব পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর তাকে নদীতে ফেলে দেয়া হয়।এরপর থেকে সজীবের অবুঝ দুই সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিতে অসহায় মা রেহানা বেগমকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।কিন্তু এখনো সরকার বা কোনো প্রতিষ্ঠান সজীবের পরিবারের খোঁজ নেয়নি।
সজীবের স্ত্রী রাবেয়া বেগম বলেন, সজীবের অনেক ইচ্ছা ছিল, সন্তান দু’টি পড়াশোনা করাবেন। কিন্তু এখন কী হলো? কিভাবে ওরা মানুষ হবে? সরকার বা কোনো সংস্থা যদি এতিম এই দুই সন্তানের পড়াশোনার দায়িত্ব নিতো! দেশের মানুষের স্বপ্ন পূরণ করতে গিয়ে আমার স্বামী তার দুই সন্তানকে এতিম করে গেছে। আমি চাই এই এতিম দুই সন্তানের স্বপ্ন পূরণ করতে সরকার বা কোনো প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসবে।