লায়ন মোঃ গনি মিয়া বাবুল ॥
মানুষের জন্মগতভাবে পাওয়া মানবিক মর্যাদা ও স্বাভাবিক গুণাবলী বিকাশের জন্য অত্যাবশ্যকীয় অধিকারগুলোই হলো মানবাধিকার। এই অধিকারগুলো বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে এই অধিকারসমূহ ‘মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র’ হিসেবে ঘোষিত হয়। বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্র হওয়ায়, রাষ্ট্রের মূল দলিল সংবিধানেও মানবাধিকারকে যথাযথ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এর ফলস্বরূপ সরকার শিশু অধিকার আইন, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা আইন, শিশু ও নারী নির্যাতন রোধ আইনসহ বিভিন্ন কার্যকর আইন প্রণয়ন করেছে।
মানবাধিকারের বৈশ্বিক ঘোষণা থাকা সত্ত্বেও প্রায়শই আমাদের দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটে। রেডিও, টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে আমরা নিয়মিতভাবে শিশুশ্রম, নারী ও শিশু পাচার, এসিড নিক্ষেপ, সড়ক দুর্ঘটনা, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, যৌতুকের কারণে অত্যাচারের মতো গুরুতর বিষয় সম্পর্কে জানতে পারি। এই সকল মানবাধিকার বিরোধী কাজ সম্পর্কে সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে সচেতন করা এবং এর প্রতিকারের জন্য বিদ্যমান আইনের কার্যকর প্রয়োগ নিশ্চিত করা আবশ্যক।
আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে মানবাধিকার নিশ্চিত করার গুরুদায়িত্বটি যেমন পুলিশ বিভাগকে পালন করতে হয়, তেমনি এই বিষয়ে জনমত তথা গণসচেতনতা তৈরির প্রধান দায়িত্বটি থাকে গণমাধ্যমের ওপর। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। এই সাংবিধানিক লক্ষ্য অর্জনের জন্যেই পুলিশ ও গণমাধ্যম নিজ নিজ ক্ষেত্রে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। রাষ্ট্র, সমাজ এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করাই মূলত পুলিশ ও গণমাধ্যমের প্রধান দায়িত্ব।
মানবাধিকারের উন্নয়ন ও সংরক্ষণে পুলিশ ও গণমাধ্যমের পারস্পরিক সমন্বয় একান্ত অপরিহার্য। এই সমন্বয়ের মাধ্যমে রাষ্ট্র, সমাজ এবং জনগণ অধিকতর সেবা ও সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারে। উন্নত বিশ্বের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোর দিকে তাকালে দেখা যায়, সেখানে পুলিশ ও গণমাধ্যমসমূহের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ও সমন্বয় বিদ্যমান। এর ফলস্বরূপ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ দমন, আইনের প্রয়োগ এবং জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে কোনো কার্যক্রম পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে তারা পালন করে। ফলে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার সেখানে নিরাপদ থাকে।
পুলিশ ও গণমাধ্যম উভয়ই অন্যায়ের বিরুদ্ধে, সত্যের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে দেশ ও জনগণের কল্যাণে কাজ করছে। তবে কাজের মানোন্নয়ন ও জনকল্যাণ নিশ্চিত করতে তাদের মধ্যে আরো গভীর সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করার ফলে নিম্নলিখিত সুবিধাগুলো লাভ করা সম্ভব:
১. রাষ্ট্র, সমাজ ও জনগণের অধিক সেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
২. জনগণের প্রয়োজনে পুলিশ দ্রুত তাদের সেবা প্রদান করতে পারবে।
৩. দেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক বিধিব্যবস্থা সুদৃঢ় হবে।
৪. মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা ও সংরক্ষণ করা সহজতর হবে।
৫. পুলিশবাহিনী গণমুখী তথা জনগণের বন্ধু হওয়ার সুযোগ পাবে।
৬. নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে কাজ করা সহজ হবে।
৭. সমাজে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে।
৮. মানবাধিকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণে তাদের কার্যক্রমের সমন্বয় খুবই প্রয়োজন।
সমন্বয়ের পাশাপাশি এই দুটি প্রতিষ্ঠানকে আরও কিছু সাধারণ শর্ত মেনে কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে:
দেশে সুদৃঢ় গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পুলিশ ও গণমাধ্যমের কার্যক্রমে সমন্বয় থাকা বাঞ্ছনীয়। মানবাধিকার উন্নয়ন ও সংরক্ষণে পুলিশ বাহিনী ও গণমাধ্যমকে সর্বদা নিরপেক্ষ, সততা ও নিষ্ঠার সাথে স্বীয় দায়িত্ব পালন করতে হবে। এতে রাষ্ট্র, সরকার, সমাজ ও জনগণ সবাই অধিক উপকৃত হবেন।