মজিবুর রহমান, সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি ॥
ফরিদপুরের সালথায় স্ত্রী নাদেরা আক্তার হত্যা মামলার পলাতক আসামী স্বামী রাজু মাতুব্বর (২৮) বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। আজ বুধবার (১২ নভেম্বর) ভোরে তিনি মারা যান। পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।
নিহত রাজু উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের পশ্চিম বিভাগদি গ্রামের মৃত জয়নাল মাতুব্বরের ছেলে এবং স্ত্রী নাদেরা আক্তার হত্যা মামলার প্রধান আসামী ছিলেন।
যেভাবে ঘটলো আত্মহত্যা
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে রাজু বিষপান করলে পরিবারের সদস্যরা দ্রুত তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর রাতের বেলায় তাকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি; আজ বুধবার ভোর ৫টার দিকে রাজু নিজ বাড়িতেই মারা যান।
নিহত রাজুর মা জাকিরন বেগম জানান, স্ত্রীকে হত্যার পর থেকেই রাজু মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। সেই অনুশোচনা ও শোকেই তিনি বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন।
সালথা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আতাউর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, “স্ত্রী হত্যা মামলার আসামী রাজু মাতুব্বর বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে।”
পূর্বের ঘটনা: স্ত্রীকে হাতুড়ি পেটা করে হত্যা
উল্লেখ্য, গত ২৮ সেপ্টেম্বর সকালে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নের পশ্চিম বিভাগদী গ্রাম থেকে নাদেরা আক্তার (২৩) নামে এক নববধূর মরদেহ উদ্ধার করে সালথা থানা পুলিশ। নাদেরা ছিলেন রাজু মাতুব্বরের স্ত্রী।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ১৩ সেপ্টেম্বর রাজু মাতুব্বর নাদেরাকে স্ত্রী পরিচয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন। যদিও রাজু এর আগেও একাধিক বিয়ে করেছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, বিয়ের পর থেকেই রাজু তার স্ত্রী নাদেরাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করে আসছিলেন।
ঘটনার দিন, গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিকেলে পারিবারিক কলহের জেরে রাজু নাদেরাকে মারধর করলে তাকে স্থানীয় এক পল্লী চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসা শেষে বাসায় ফেরার পর সেই রাতেই রাজু পুনরায় হাতুড়ি দিয়ে নাদেরাকে পিটিয়ে হত্যা করে পালিয়ে যায়। পরদিন সকালে প্রতিবেশীরা ঘরের ভেতর রক্তাক্ত অবস্থায় নাদেরার নিথর দেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন।
ওই ঘটনায় রাজু মাতুব্বরকে আসামী করে সালথা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। সেই ঘটনার পর থেকেই রাজু পলাতক ছিলেন। অবশেষে, স্ত্রী হত্যার দেড় মাস পর বিষপানে নিজের জীবনও শেষ করলেন এই আসামী।