বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:২১ অপরাহ্ন
৯ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৪ঠা রজব, ১৪৪৭ হিজরি
শিরোনাম :
জলবায়ু অভিযোজনে বিনিয়োগ করলে ২০৩০ সালে পোশাক রপ্তানি ছাড়াবে ১২ হাজার কোটি ডলার তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: আজ ঢাবি ছাত্রদলের আনন্দ মিছিল নির্বাচনে নাগরিকদের অংশগ্রহণ বাড়াতে জাতিসংঘের নতুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘ফিউচার বাংলাদেশ’ ধামরাইয়ে বাজারে লুটপাটের অভিযোগ নিয়ে ধূম্রজাল: ব্যবসায়ীদের দাবি ‘ঘটনা সাজানো’ কেরানীগঞ্জে ফরমালিন দিয়ে ফল পাকানোর দায়ে ৯ ব্যবসায়ীকে অর্থদণ্ড সালথায় ৪০ পেঁয়াজ চাষিকে প্রকাশ্যে ঋণ দিল কৃষি ব্যাংক ওসমান হাদীর খুনিদের ফাঁসির দাবিতে আইএইচআরসি’র প্রতিবাদী সমাবেশ ধামরাইয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে নবনিযুক্ত ওসির মতবিনিময় সভা বিজয় দিবসে জাতীয় সম্মিলিত ফোরাম (জেএসএফ) বাংলাদেশের শুভেচ্ছা ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস: শ্রেষ্ঠ আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়

ভূমি অপরাধ আইন ২০২৩-এর ক্ষমতা: ৩ ধাপে দ্রুত বেদখল জমি পুনরুদ্ধারের পথ

Coder Boss
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৯০ Time View

অনলাইন ডেস্ক ॥
কার্যকর পদক্ষেপ নিলেই ‘শতভাগ’ জমির দখল ফেরা সম্ভব!

কাঁধ নেড়ে হতাশা পশ্চাদপসরণ করুন-বেদখল জমি ফিরে পাওয়া এখন আর অসম্ভব নয়। সম্প্রতি চালু হওয়া ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩-এর বিধিমালা এবং প্রচলিত আদালতীয় ব্যবস্থা মিলিয়ে মাত্র তিনটি কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করলেই অনেক ক্ষেত্রেই জমি দ্রুত পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে। এই আইনগত প্রক্রিয়া অবলম্বন করে প্রবাসী বা দীর্ঘ সময় জমি দূরে থাকা ব্যক্তিরাও দখল ফিরে পাচ্ছেন বলে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সংবাদ মিলছে। চলুন জানি কীভাবে-ধাপে ধাপে।

প্রথম ধাপ: নতুন আইন অনুযায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন (প্রতিরোধ ও উচ্ছেদ)
নতুন ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩-এর বিধিমালার আওতায় এখন প্রশাসনিক স্তরেও জরুরি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ তৈরি হয়েছে।

যে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য: যদি কেউ জাল দলিল তৈরি করে বা প্রতারণার মাধ্যমে জমি দখল করে থাকে এবং তা আদালতে প্রমাণিত হয়, সেই আদেশের কপি জেলা প্রশাসক ও জেলা রেজিস্ট্রারের কাছে পাঠানো হয়।

কার্যকরী পদক্ষেপ: ভুক্তভোগী এই পরিস্থিতিতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন করে অবৈধ দখল প্রতিরোধ ও উচ্ছেদ সংক্রান্ত আদেশ চাইতে পারেন।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা: নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার নির্দেশও দিতে পারবেন। আদেশের বলে পুলিশ-সহায়কভাবে দখল প্রত্যাহার বা পুনর্বহাল কার্যকর করা সম্ভব হবে।

আপনার করণীয়: সকল মূল দলিল, পরিচয়পত্র ও প্রমাণাদি নিয়ে জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট (অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত ম্যাজিস্ট্রেট) বরাবরে আবেদন করুন এবং বিধিমালার প্রক্রিয়া অনুসরণ করুন।

দ্বিতীয় ধাপ: দ্রুত দখল ফিরে পেতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারায় মোকদ্দমা
জমি দ্রুত ফিরে পেতে ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা ১৪৫ অনুযায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মোকদ্দমা করা যেতে পারে। এটি একটি দ্রুত প্রক্রিয়া, যেখানে দখল প্রমাণ করা গেলেই সে ভিত্তিতে দ্রুত নির্বাহী আদেশ পাওয়া যায়।

মূল বিবেচ্য: এই মোকদ্দমায় মূল বিষয়টি হলো ‘দখল আছে কি না’ – কাগজপত্রের জটিলতা না থাকলেও বাস্তব দখলের ভিত্তিতে রায় দেওয়া হতে পারে।

তদন্তের গুরুত্ব: এই মামলায় ভূমি উপ-কমিশনার বা সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কর্মকর্তার প্রতিবেদন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা তদন্ত করে রিপোর্ট দিলে, সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে রায় হতে পারে।

ফলাফল: যদি প্রতিবাদী পক্ষ ১৫ দিনের মধ্যে দখল হস্তান্তরে ব্যর্থ হন, তবে নির্বাহী আদেশ কার্যকর করা হয়।

আপনার করণীয়: দ্রুত আপনার নিকটস্থ থানা/ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে ভূমি উপ-কমিশনারের কাছে তদন্ত ও ১৪৫ ধারায় আদালতে মামলা জমা দিন; প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য-প্রমাণ সঙ্গে রাখুন।

তৃতীয় ধাপ: চূড়ান্ত মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য ঘোষণামূলক মামলা
যদি ১৪৫ ধারায় রায় আপনার পক্ষে না আসে বা জমির মালিকানা বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদী স্থায়ী রায় প্রয়োজন হয়, তবে এই ধাপে যেতে হবে।

আইনগত ভিত্তি: প্রচলিত সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন, ১৮৭৭ (Specific Relief Act, 1877)-এর সেকশন ৪২ অনুসরণ করে দেওয়ানি আদালতে ঘোষণামূলক মোকদ্দমা (মালিকানার মামলা) দায়ের করতে হবে।

চূড়ান্ত সমাধান: আদালত যদি আপনার মালিকানা ঘোষণা করে দেন, তখন সেটি চূড়ান্ত রায় হিসেবে কার্যকর হয়। এমন রায়ে পুলিশ-সহ নির্বাহী কার্যক্রমের ভিত্তি তৈরি হয় এবং ভবিষ্যতে দখলদারকে অবস্থান ছাড়তে বাধ্য করা সহজ হয়।

আপনার করণীয়: আপনার সমস্ত জরুরি দলিল (মূল দলিল, রেজিস্ট্রেশন কপি, প্রমাণ, সাক্ষীর বিবৃতি ইত্যাদি) নিয়ে একজন অভিজ্ঞ জমি-বিষয়ক আইনজীবীর মাধ্যমে ঘোষণামূলক মামলা দায়ের করুন।

জরুরি পরামর্শ ও বাস্তব দৃষ্টান্ত
আদেশ সত্ত্বেও দখল না ছাড়লে: কুমিল্লা থেকে একজন ভুক্তভোগী জানিয়েছেন-নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে রায় পেয়েও দখলদার জমি ছাড়ছে না। এমন ক্ষেত্রে নির্বাহী আদেশ থাকলে, আপনি সেই আদেশের বলপ্রয়োগ চেয়ে পুনরায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা নিতে পারবেন।

দলিল সংরক্ষণ: সব মূল দলিল, খতিয়ান, প্রমাণস্বরূপ চিঠিপত্র, সাক্ষীর বিবৃতি এবং পূর্বের প্রশাসনিক আবেদন অবশ্যই সংরক্ষণ করুন।

আইনজীবীর ভূমিকা: প্রত্যেক ধাপে অভিজ্ঞ জমি-বিষয়ক আইনজীবীর পরামর্শ নিন-তাঁরা কোন ধাপে কোন আইনি পথে এগোতে হবে, সে সম্পর্কে স্পষ্টতা দেবেন।

নিরাপত্তা: দখল মুক্তির সময় নিজের নিরাপত্তা ও আইনগত সীমাবদ্ধতা বিবেচনায় রাখুন; কখনোই আত্মঘাতী বা অবৈধ পন্থা নেবেন না।

উপসংহার: ভূমি সংক্রান্ত প্রতারণা ও জালিয়াতির বিরুদ্ধে লড়াই কঠিন হলেও, বর্তমান আইন ও বিধিমালা অনুসরণ ও সঠিক ধাপ গ্রহণ করলে দ্রুত সমাধান সম্ভব। প্রথমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে প্রতিরোধ ও উচ্ছেদ চাওয়া, প্রয়োজনে ধারা ১৪৫-এর মাধ্যমে দ্রুত পুনর্বহাল, এবং চূড়ান্ত মালিকানা প্রতিষ্ঠার জন্য ঘোষণামূলক মামলা-এই তিনটি ধাপ যথাযথভাবে গ্রহণ করাই হলো দখল পুনরুদ্ধারের প্রধান কৌশল।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102