অনলাইন ডেস্ক ॥
বর্তমান সরকারের আমলে টাকার বিনিময়ে সচিব পদ কেনা-বেচার অভিযোগ এখন আর কেবল গুজব নয়, বরং এর পেছনে বাস্তব ঘটনার সমর্থন পাওয়া যাচ্ছে। লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং নির্ভরযোগ্য সূত্রের ভিত্তিতে এমন কিছু চাঞ্চল্যকর ঘটনা নিচে তুলে ধরা হলো, যা দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় দুর্নীতির গভীরতা প্রকাশ করে।
ব্যক্তিগত প্রস্তাব ও প্রত্যাখ্যান
লেখকের দাবি অনুযায়ী, তাকে কেবিনেট সচিব হিসেবে নিয়োগের জন্য শত কোটি টাকা খরচের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। গত ডিসেম্বরে যখন তার কেবিনেট সচিব হওয়া প্রায় নিশ্চিত ছিল, তখন একটি চক্র তাকে এই পদে বসানোর জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে রাজি ছিল। কিন্তু লেখক এই অনৈতিক প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে জানান, তিনি দুর্নীতির সঙ্গে কোনো আপস করবেন না।
জ্বালানি সচিবের পদ কেনার চেষ্টা
এক অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে লেখকের কথোপকথন থেকে জানা যায়, দুজন ‘সমন্বয়ক’ তাকে মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে জ্বালানি সচিব করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। এর জন্য একটি গোপন চুক্তি, ব্যক্তিগত তথ্য এবং একটি কালার পিডিএস (Personal Data Sheet) দিতে বলা হয়েছিল। ওই কর্মকর্তা সততার পরিচয় দিয়ে এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং জানান, তার চাকরি জীবনে এমন অনৈতিক লেনদেনের কোনো ইচ্ছা নেই।
চুক্তিপত্রের মাধ্যমে সচিব নিয়োগ
লেখক তার এক নির্ভরযোগ্য সূত্রের মাধ্যমে বর্তমান বাণিজ্য সচিবের একটি চুক্তিনামার কথা জানতে পারেন, যেখানে ৩৫ কোটি টাকার বিনিময়ে তাকে সচিব পদে নিয়োগের চুক্তি রয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়। এই ধরনের চুক্তিপত্র যে বাস্তব, তা নিশ্চিত করে ওই অতিরিক্ত সচিব লেখককে এমন একটি চুক্তির অনুলিপি দেখান, যা দিয়ে আরেকজনকে সচিব করা হয়েছে।
সচিব পদে উচ্চ দরের প্রস্তাব
১৩তম ব্যাচের একজন কর্মকর্তাকে মাত্র তিন মাস সচিব থাকার পর ওএসডি (Officer on Special Duty) করা হয়। চাকরি জীবনের শেষ পর্যায়ে থাকা এই কর্মকর্তাকে পুনরায় সচিব করার জন্য দুটি ভিন্ন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যার মূল্য যথাক্রমে ৩০ কোটি এবং ৩৬ কোটি টাকা। এই ঘটনা থেকে বোঝা যায়, দুর্নীতিবাজ চক্রের কাছে পদ-পদবি কেনা-বেচার প্রস্তাব কতটা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে।
নতুন সচিবের বিরুদ্ধে আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ
এক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা লেখকের কাছে তার নতুন সচিব সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। কাস্টমস ক্যাডার থেকে আসা এই কর্মকর্তা নাকি ৩৫ কোটি টাকায় সচিব হয়েছেন। তার বিরুদ্ধে পাঁচটা বাড়ি এবং অস্ট্রেলিয়ান নাগরিকত্ব থাকার অভিযোগও রয়েছে। জানা যায়, তিনি আসলে এনবিআর-এর চেয়ারম্যান হতে চান, যার জন্য কয়েকশো কোটি টাকার লেনদেনের প্রস্তুতি চলছে।
অন্যান্য মন্ত্রণালয়েও একই চিত্র
শুধুমাত্র একজন বা দুজন নয়, এমন একাধিক ঘটনা ঘটছে বলে লেখক দাবি করেন। যেমন, একজন ডিজির জন্য ৩০ কোটি টাকার বিনিময়ে দুর্যোগ সচিব হওয়ার প্রস্তাব আছে। আবার, স্থানীয় সরকার বিভাগের এক সচিব ১০০ কোটি টাকার বিনিময়ে পদ পেয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে, যদিও তিনি মাত্র চার মাস টিকেছিলেন।
সৎ কর্মকর্তার ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত
তবে সব কর্মকর্তা যে এই ধরনের অনৈতিক প্রস্তাব গ্রহণ করেন তা নয়। শিপিং মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তাকে ১২ কোটি টাকার বিনিময়ে সচিব করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। মজার বিষয় হলো, পরবর্তীতে তিনি কোনো আর্থিক লেনদেন ছাড়াই সচিব হন, যদিও তার পদটি তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্বপূর্ণ।
এই সমস্ত ঘটনা ইঙ্গিত করে যে, দেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থায় সচিব পদ বিক্রি-বাট্টার এক অশুভ চক্র সক্রিয়। কোটি কোটি টাকার লেনদেনের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগের এই প্রক্রিয়া যদি চলতে থাকে, তাহলে দেশের সামগ্রিক শাসনব্যবস্থা ভেঙে পড়বে।