অনলাইন ডেস্ক ॥
ঢাকা: আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৫০ লাখ প্রবাসীকে ভোট প্রদানের সুযোগ দিতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই লক্ষ্যে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ের একটি বিশাল পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সংস্থাটি। ইসি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভোটার প্রতি ৭০০ টাকা খরচ ধরে এই বাজেট নির্ধারণ করা হয়েছে, যা প্রযুক্তিগত ও ডাকযোগে ব্যালট পাঠানোসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হবে।
৫০ লাখ প্রবাসীর লক্ষ্যমাত্রা:
প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়, জনশক্তি ব্যুরো এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৪০টি দেশে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ৪৬ হাজার প্রবাসী রয়েছেন। এর মধ্যে সৌদি আরবে সর্বোচ্চ ৪০ লাখ ৪৯ হাজার এবং নিউজিল্যান্ডে সর্বনিম্ন ২,৫০০ জন প্রবাসী বাস করেন। ইসি ধারণা করছে, এই প্রবাসীদের ৭০ শতাংশের কাছেই জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) আছে। এদের মধ্যে ৫০ লাখ প্রবাসীর কাছ থেকে তারা সাড়া পাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ জানান, যদিও বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রবাসী ভোটের হার সাধারণত ২০-২২ শতাংশের মতো হয়, তবুও তারা ৫০ লাখ ভোটারের সাড়া পাবেন বলে আশাবাদী।
পোস্টাল ব্যালট এবং অ্যাপের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ:
প্রবাসীদের ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়াকে সহজ করতে ইসি একটি বিশেষ অ্যাপ তৈরি করছে, যার নাম ‘পোস্টাল ব্যালট বিডি’। এই অ্যাপ তৈরির জন্য ৪৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আগামী নভেম্বরে এই অ্যাপটি তৈরি হলে প্রবাসীরা অনলাইনে নিজেদের এনআইডি নম্বর, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে নিবন্ধন করতে পারবেন।
মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ও প্রার্থী চূড়ান্ত হওয়ার পর এই নিবন্ধিত ভোটারদের কাছে পোস্টাল ব্যালট পাঠানো হবে। এই ব্যালটে শুধু দলগুলোর প্রতীক থাকবে, কোনো প্রার্থীর নাম থাকবে না। প্রবাসীরা তাদের পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকে ভোট দিয়ে ডাকযোগে তা ফেরত পাঠাবেন।
ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, ডাক বিভাগ নিশ্চিত করেছে যে সবচেয়ে দূরের দেশে একটি চিঠি পাঠাতে এবং ফেরত আনতে ২৮ দিনের মতো সময় লাগে। তাই দেশের ভোটারদের আগে প্রবাসীরা ভোট দেওয়ার সুযোগ পাবেন।
ভোট গণনা এবং বিশেষ সুযোগ:
প্রবাসী ভোটারদের পাঠানো ব্যালটগুলো দেশের সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের ট্রেজারিতে নিরাপদে জমা থাকবে। ভোটের দিন দেশের অন্যান্য ভোটের সঙ্গেই এসব ব্যালট গণনা করা হবে। এই বিশেষ পোস্টাল ব্যালটের সুবিধা শুধু প্রবাসীরাই নয়, ৭১টি কারাগারের কয়েদি এবং ভোটের দায়িত্বে থাকা সরকারি কর্মকর্তারাও পাবেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনা ও রাজনৈতিক দলগুলোর সম্মতির ভিত্তিতে এই পদ্ধতিটি চালু করা হচ্ছে। এটি প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবির একটি প্রতিফলন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এএমএম নাসির উদ্দিন আহমদ জানিয়েছেন, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে হলেও এই ব্যবস্থা চালু করতে চায় কমিশন। বর্তমানে ১০টি দেশে ভোটার নিবন্ধন ও এনআইডি সরবরাহের কাজ চলছে এবং শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রসহ আরও কয়েকটি দেশে এই কার্যক্রম শুরু হবে।
ভোটার নিবন্ধনের নিয়মাবলী:
বিদেশে বসে ভোটার হতে প্রবাসীদের অনলাইনে আবেদনপত্র পূরণের পাশাপাশি পাসপোর্ট, এনআইডি, জন্ম নিবন্ধন ও রঙিন ছবি জমা দিতে হয়। এছাড়া কিছু ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্ব সনদ, ইউটিলিটি বিলের কপিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রও জমা দিতে হতে পারে। বর্তমানে ১০টি দেশ থেকে প্রায় ৫৫ হাজার আবেদন এসেছে, যার মধ্যে ৩০ হাজারের বেশি প্রবাসীর দশ আঙুলের ছাপ নিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন হয়েছে।
ইসির এনআইডি অনুবিভাগের মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবীর বলেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে এবং এই কার্যক্রম দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।