শুক্রবার, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:২৮ পূর্বাহ্ন
২১শে ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৩ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি
শিরোনাম :
জাতীয় সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ: গেজেট প্রকাশ করলো নির্বাচন কমিশন বিএনপির ৪৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী: ধামরাইয়ে বর্ণাঢ্য র‍্যালি ও আলোচনা সভা খুনি হাসিনার দোসরদের গ্রেফতারের দাবিতে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের বিক্ষোভ সমাবেশ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: তারেক রহমানসহ সব আসামি খালাস, হাইকোর্টের রায় বহাল রাখলেন আপিল বিভাগ সাংবাদিককে ছবি তুলতে বাধা: কুড়িগ্রামে সাবেক ডিসির আইনজীবীর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিক্রিয়া জাতীয় নির্বাচনে আসছে নতুন নিয়ম: পোস্টার নিষিদ্ধ, বিলবোর্ডে প্রচারের অনুমতি ‘আমি আওয়ামী লীগের নই, বিএনপির নেতা’: ফরিদপুরে সংবাদ সম্মেলন করলেন নুরু মাতুব্বর ‘হাসিনা-কামালের নির্দেশে গণহত্যা’: জবানবন্দিতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী মামুন ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক ব্রেন্ট ক্রিস্টেনসেনকে ঢাকার নতুন রাষ্ট্রদূত মনোনয়ন আমিন মডেল টাউন ও আমিন গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রতারককে সহযোগিতা করা ও ন্যায় বিচারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ ৩ : মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভুক্তভোগী

আমিন মডেল টাউন ও আমিন গ্রুপের বিরুদ্ধে প্রতারককে সহযোগিতা করা ও ন্যায় বিচারের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের অভিযোগ ৩ : মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ভুক্তভোগী

Coder Boss
  • Update Time : বুধবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ১৫ Time View

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা, ধামরাই ॥
ঢাকার ধামরাইয়ে অবস্থিত আমিন মডেল টাউন-এর বিরুদ্ধে একটি জমি ভাড়া নিয়ে গুরুতর প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মো. মিরন খন্দকার মূল ভাড়াটে ফারুক এবং জমির মালিক আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মিরনের অভিযোগ, আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষ প্রতারণার বিষয়টি জানা সত্ত্বেও ফারুককে সহযোগিতা করেছে। আপস-মীমাংসার সময় মিরনকে বাদ দিয়ে অন্যায়ভাবে ফারুককে লাভবান করা হয়েছে বলে তিনি দাবি করেছেন।

ঘটনার বিবরণ
ঘটনার সূত্রপাত হয় ২০২৩ সালের ২৩শে মার্চ, যখন আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষ একটি বাজার স্থাপনের জন্য ফারুক গংদের সঙ্গে একটি ভাড়া চুক্তি করে। এই চুক্তির মেয়াদ ছিল ২০২৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত।

তবে, ২০২৫ সালের ১৭ই আগস্ট, কিছু কারণে দুই পক্ষের মধ্যে একটি আপসনামা স্বাক্ষরিত হয়। এই আপসনামার মাধ্যমে আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষ ফারুক গংদের নগদ টাকা ও ব্যাংকের চেকের মাধ্যমে চুক্তিটি বাতিল করে। এই আপসনামা দলিলগুলোর স্ট্যাম্প নম্বর হলো: গঙ ৬৭৩৪১৩১, গঙ ৬৭৩৪১৩২, ও গঙ ৬৭৩৪১৩৩।

মিরনের অভিযোগ: প্রতারণা ও অধিকার লঙ্ঘন
এই আপস-মীমাংসার মূল বিতর্কটি শুরু হয় যখন মিরনকে বাদ দিয়েই ফারুক গংদের সঙ্গে আপসনামার চুক্তি করা হয়। মিরন দাবি করেন, তিনি আপস-মীমাংসার প্রায় তিন-চার মাস আগেই (২০২৫ সালের ১০ই মে) বাজার ক্রয়-সংক্রান্ত সব কাগজপত্র আমিন মডেল টাউনের অ্যাডমিন অফিসার শফিক সাহেবের মাধ্যমে কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছিলেন।

মিরন খন্দকার একাধিকবার আমিন মডেল টাউনের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম আমিনকে অনুরোধ করেছিলেন যেন আপস-মীমাংসার সময় তাকে উপস্থিত রাখা হয়। মিরনের কাছে থাকা ভয়েস ও অডিও রেকর্ডে শোনা যায়, চেয়ারম্যান তাকে উপস্থিত রাখবেন বলে বারবার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বাদ দিয়েই ফারুক গংদের সঙ্গে আপস করেন।

মিরন খন্দকার ফারুকের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে মোট তিনটি দলিলের মাধ্যমে বাজারের শেয়ার ক্রয় করেছিলেন:

প্রথম দলিল (বাতিলকৃত): ২০২৪ সালের ১২ই ফেব্রুয়ারি একটি দলিলের (স্ট্যাম্প নম্বর খল ০৩৯২৬১৩, খল ০৩৯২৬১৪, ও খল ০৩৯২৬১৫) মাধ্যমে তিনি ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে ১০% শেয়ার ক্রয় করেন।

দ্বিতীয় দলিল: দ্বিতীয় দলিলের সময় ফারুক তার পারিবারিক ও আর্থিক সমস্যার কথা বলে আরো বাড়তি টাকা নিবেন শর্তে, প্রথম চুক্তিটি বাতিল করেন এবং ২০২৫ সালের ১০ই জানুয়ারি একটি নতুন দলিলে ৫ লক্ষ টাকা ও ১০% শেয়ারের পরিবর্তে (স্ট্যাম্প নম্বর খহ ৬৭০২৩৪১, খহ ৬৭০২৩৪২, ও খহ ৬৭০২৩৪৩) ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ১৫% শেয়ার বিক্রি করেন।

তৃতীয় দলিল: পরবর্তীতে তার সমস্যার সমাধান আরো টাকার প্রয়োজন হলে ২০২৫ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি তারিখে নতুন আরেকটি দলিলে (স্ট্যাম্প নম্বর গক ৯১২৪৯২৮, গক ৯১২৪৯২৯, ও গক ৯১২৪৯৩০) ফারুক আরও ৬ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ২১% শেয়ার বিক্রি করেন।

এই দুটি দলিলে ৩৬ পার্সেন্ট শেয়ার ও ১৪ লক্ষ টাকা বিনিময়ে ফারুক হোসেন তার বিক্রিত শেয়ারের লাভ্যাংশ ও মূলধনের টাকা মিরনকে হস্তান্তর করেন। তৃতীয় দলিলে লিখিত চুক্তি অনুযায়ী, ফারুক তার সমস্ত শেয়ার বিক্রির পর অবশিষ্ট (যদি থাকে) অংশের এবং সম্পূর্ণ আর্থিক লেনদেনের দায়িত্ব মিরন খন্দকারের কাছে হস্তান্তর করেন।একই সঙ্গে, তিনি মো. মিরন খন্দকারকে পারিশ্রমিক বাবদ প্রতি মাসে ইব্রাহিম শেখ হাসমতের সমান সম্মানী দেবেন বলেও এই দলিলে চুক্তিবদ্ধ হন।

উল্লেখযোগ্য, ফারুক হোসেনের সঙ্গে মো. ইব্রাহিম শেখ হাসমতেরও একটি চুক্তি হয়েছিল। ২০২৫ সালের ৩রা ফেব্রুয়ারি একটি দলিলের (স্ট্যাম্প নম্বর গক ৯০৮৩৩২০, গক ৩৯১৭৫৪১ ও গক ৯০৮৩৩২৬) মাধ্যমে ফারুক ইব্রাহিমের কাছ থেকে ৪ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে বাজারের ১৫% শেয়ার বিক্রি করেন।

আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
মিরনের অভিযোগ, আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষ ফারুকের প্রতারণার বিষয়ে অবগত থাকা সত্ত্বেও তাকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “ফারুক একজন প্রতারক, এটা জানা সত্ত্বেও আপনারা কীভাবে আমার প্রাপ্য টাকা তাকে দিলেন?”

মিরনের মতে, ফারুক দুটি গুরুতর অন্যায় করেছেন:

১. আমিন মডেল টাউনের অনুমতি ছাড়াই বাজারটি মিরনের কাছে বিক্রি করা।

২. মিরনের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের টাকা চেকের মাধ্যমে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা।

মিরন পুরো আপস-মীমাংসা প্রক্রিয়াটির বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “একজন প্রতারককে সহযোগিতা করে আপনারা কেন নিজেদের ওপর প্রতারণার দায়ভার তুলে নেবেন?”

চাঞ্চল্যকর তথ্য ও অনিয়মের অভিযোগ
এই অভিযোগের বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানতে গিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যায়। ফারুক গংদের সঙ্গে আমিন সাহেবের দুটি আন-রেজিস্টার্ড দলিল সম্পন্ন হয়েছিল:

প্রথম দলিল: ২০২১ সালের ২১শে মার্চ স্বাক্ষরিত এই দলিলে (স্ট্যাম্প নম্বর খঘ ০৪৬৬৯২৭, খঘ ০৪৬৬৯২৯, ও খঘ ০৪৬৬৯৩০) জমির মূল মালিক আমিন সাহেবের সঙ্গে ফারুক হোসেন, খয়বার আলী, ইব্রাহিম শেখ হাসমত, ও হাবিবুর রহমান চুক্তিবদ্ধ হন।

দ্বিতীয় দলিল: ২০২৩ সালের ২৩শে মার্চ স্বাক্ষরিত এই দলিলে (স্ট্যাম্প নম্বর খদ ০৯৯৪৪৯৮, খদ ০৯৯৪৪৯৯, এবং খথ ১১৭৯৭৬৬) মূল মালিক হিসেবে আমিন গ্রুপের চেয়ারম্যান জনাব আলহাজ্ব মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম আমিন সাহেবের সঙ্গে ফারুক হোসেন ও খয়বার আলী চুক্তিবদ্ধ হন। এই চুক্তিতে ইব্রাহিম শেখ হাসমতের নাম বাদ দিয়ে নূর মোহাম্মদ নামে এক ব্যক্তিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

অভিযোগ করা হয়েছে যে, খুব চতুরতার সঙ্গে আমিন সাহেব, তার অফিসের সিনিয়র ম্যানেজার আলহাজুর রশিদ সোহান, নূর মোহাম্মদ এবং ফারুক গং মিলে ইব্রাহিম শেখ হাসমতের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। পূর্বে ইব্রাহিম বাজার পরিচালনা ও কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে ছিলেন। তার কাছ থেকে সমস্ত হিসাব বুঝে নিয়ে তাকে বাজার থেকে বাদ দেওয়া হয়েছিলো এবং বাজারের সব হিসাব-নিকাশ গায়েব করে দেওয়া হয়েছিলো। ফলে বাজারের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সঠিক হিসাবের ধারাবাহিক কোনো নথি নেই।

উল্লিখিত দুটি আন-রেজিস্টার্ড দলিলের ১৪ নম্বর শর্তে (অসাধারণ ঘটনা ও দায়িত্বের কথা) উল্লেখ আছে যে, ভাড়াটিয়ারা রোডস অ্যান্ড হাইওয়ের সরকারি জায়গা ব্যবহার করতে পারবে এবং সেই জায়গা ব্যবহারের উপযোগী করার সম্পূর্ণ দায়িত্ব আমিন মডেল টাউনের।

এই অভিযোগ সম্পর্কে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫) পর্যন্ত আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102