নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের ওপর সাম্প্রতিক হামলা রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। হামলাটি পরিকল্পিত নাকি আকস্মিক, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে নানা ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব। অনেকে এটিকে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির গভীর নীল নকশার অংশ হিসেবে দেখছেন।
হামলার নেপথ্যে নানা অভিযোগ
হামলার পর পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হয়, এর পেছনে আওয়ামী লীগের অর্থায়ন ও পরিকল্পনা ছিল। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি নির্দিষ্ট অংশও এতে সরাসরি জড়িত বলে অভিযোগ করা হয়েছে। গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একজন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করেন, ওই কর্মকর্তা নুরকে মিছিল নিয়ে জাতীয় পার্টির অফিসের সামনে দিয়ে গেলে “ভয়াবহ পরিণতির” হুমকি দিয়েছিলেন। এরপরও নুর তার কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মিছিল করলে জাতীয় পার্টির অফিসের সামনে দুই পক্ষের মধ্যে ঢিল ছোড়াছুটি হয়।
মশাল মিছিল এবং উত্তেজনা বৃদ্ধি
হামলার ঘটনার পরদিন পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও, রাতে গণঅধিকার পরিষদের কর্মীরা বিজয়নগরে মশাল মিছিল বের করলে আবার উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, নুর নিজেই পরিকল্পিতভাবে সংঘাতের পরিবেশ তৈরি করছেন।
তবে নুরের ঘনিষ্ঠ মহল এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা দাবি করেন, নুর ও তার কর্মীরা নিজেদের কার্যালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন, কিন্তু হঠাৎ করেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের ওপর বেপরোয়াভাবে লাঠিপেটা শুরু করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ওই সময় নুরের কর্মীদের হাতে কোনো হামলার উপকরণ ছিল না এবং তারা জাতীয় পার্টির অফিসে হামলাও করতে যায়নি। এ কারণে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণকে অনেকেই অস্বাভাবিক ও প্রশ্নবিদ্ধ মনে করছেন।
নির্বাচনী প্রেক্ষাপট এবং বৃহত্তর ষড়যন্ত্র
এই হামলার ঘটনাকে ঘিরে রাজনৈতিক মহলে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করার একটি নীলনকশা বাস্তবায়িত হচ্ছে। নুরের ওপর প্রকাশ্যে হামলা শুধু একটি দলের ওপর হামলা নয়, বরং এটি পুরো রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করছে।
কেউ কেউ মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ক্ষুদ্র অংশের যোগসাজশ অথবা ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। আবার অনেকে আশঙ্কা করছেন, এই হামলার মাধ্যমে পরিকল্পিতভাবে দেশে সহিংস পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা নির্বাচনী প্রক্রিয়ার জন্য একটি বড় হুমকি।
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এই হামলা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির বৃহত্তর ষড়যন্ত্রের অংশ। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে যে, ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা বর্তমানে দিল্লিতে অবস্থান করছেন এবং সেখান থেকে আওয়ামী লীগের পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য নীলনকশা তৈরি করছেন। সূত্র অনুযায়ী, তিনি সম্প্রতি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এবং ওই বৈঠকে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা নিয়ে নাশকতার পরিকল্পনা করা হয়েছে।
এই অর্থ দিয়ে বিদেশে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মী, প্রভাবশালী আমলা, এবং অবসরপ্রাপ্ত সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি কৌশলগত নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। একইসাথে দেশে দলীয় ক্যাডারদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নাশকতার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। জুলাই অভ্যুত্থানের পর থেকেই আওয়ামী লীগ নেতারা নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এবং তাদের লুটপাটের টাকা এই কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।
নুরের ওপর এই হামলাটি এখন আর কেবল একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখা হচ্ছে না, বরং এটি ক্রমেই দেশের ভেতরে ও বাইরে আঁটা রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনের আগে এই ধরনের সহিংসতা দেশে যে অনিশ্চয়তা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে, সে আশঙ্কা এখন ক্রমেই প্রবল হচ্ছে।