বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা, ধামরাই ॥
ঢাকার ধামরাইয়ের ঢুলিভিটায় অবস্থিত আমিন মডেল টাউনের একটি জমিকে কেন্দ্র করে প্রতারণার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। জমিটি ভাড়া দেওয়া ও নেওয়া নিয়ে মূল ভাড়াটে ফারুক গংদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ এনেছেন ভুক্তভোগী মোঃ মিরন খন্দকার। তিনি দাবি করেছেন, আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষ প্রতারণার বিষয়টি জেনেও ফারুককে প্রতারণা করতে সহযোগিতা করেছে এবং আপস-মীমাংসায় তাকে বাদ দিয়ে ফারুককে প্রতারণা করতে সাহায্য করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ফারুক গং এবং আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি।
ঘটনার আদ্যোপান্ত
ঘটনার সূত্রপাত হয় ২০২৩ সালের ২৩শে মার্চ, যখন আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষ একটি বাজার স্থাপনের জন্য ফারুক গংদের সঙ্গে একটি ভাড়া চুক্তি করে। এই চুক্তির মেয়াদ ছিল ২০২৯ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পর্যন্ত। তবে, ২০২৫ সালের ১৭ই আগস্ট, কিছু অনিবার্য কারণে দুই পক্ষের মধ্যে একটি আপসনামা স্বাক্ষরিত হয়।এই আপসনামা দলিলের (নম্বর: গঙ ৬৭৩৪১৩১, গঙ ৬৭৩৪১৩২, এবং গঙ ৬৭৩৪১৩৩) মাধ্যমে আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষ নগদ টাকা ও ব্যাংকের চেক প্রদান করে ফারুক গংদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে চুক্তিটি বাতিল করেন।
মিরনের অভিযোগ: প্রতারণা ও অধিকার লঙ্ঘন
মিরনকে না জানিয়ে ফারুক গংদের সাথে আপস-মীমাংসার পরেই মূল বিতর্কটি সামনে আসে। আমিন মডেল টাউনের আইন উপদেষ্টা আমির হোসেন চৌধুরীকে ভুক্তভোগী মোঃ মিরন খন্দকার বাজারটা ক্রয়-বিক্রয়ের বিষয়টি অবহিত করলে তিনি অভিযোগ তুলেন যে, এই বাজার ফারুক গংদের বিক্রি করার কোন অনুমতি নেই। তখন মিরন প্রশ্ন তোলেন, “যদি ফারুকের বাজারটি বিক্রি করার অধিকার না থাকে, তাহলে তিনি কীভাবে আমিন মডেল টাউনের অনুমতি ছাড়া বাজারটি আমার কাছে বিক্রি করার সাহস পেলেন এবং বিক্রি করলেন?”
মিরন জানান, আপস-মীমাংসার প্রায় তিন মাস আগেই তিনি বাজার ক্রয়সংক্রান্ত সব দলিলপত্র আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছিলেন। তিনি আমিন মডেল টাউনের চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেছিলেন, যদি কখনো এই বিষয়ে কোনো আপস-মীমাংসা হয়, তবে যেন তাকে উপস্থিত রাখা হয়। চেয়ারম্যান তাকে উপস্থিত রাখবেন বলেও একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাকে বাদ দিয়েই ফারুক গংদের সঙ্গে আপস করেন।
আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
মিরনের অভিযোগের মূল বিষয় হলো, আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষ ফারুকের প্রতারণার বিষয়টি জানা সত্ত্বেও তাকে ক্ষতিপূরণ দিয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন, “ফারুক একজন প্রতারক, এটা জানা সত্ত্বেও আপনারা কীভাবে আমার প্রাপ্য টাকা তাকে দিলেন?”
মিরনের মতে, ফারুক দুটি বড় ধরনের অন্যায় করেছেন:
১. আমিন মডেল টাউনের অনুমতি ছাড়াই বাজারটি মিরনের কাছে বিক্রি করা।
২. মিরনের প্রাপ্য ক্ষতিপূরণের টাকা চেকের মাধ্যমে তুলে নেওয়ার চেষ্টা করা।
মিরন এই পুরো মীমাংসা প্রক্রিয়াটির বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষের নিকট জানতে চান, একজন প্রতারককে সহযোগিতা করা কি আইনসম্মত? তিনি আরও বলেন, “একজন প্রতারককে সহযোগিতা করে আপনারা নিজেদের ওপর প্রতারণার দায়ভার তুলে নেবেন কেন?”
এই অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে গেলে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে। ফারুক গংদের সঙ্গে আমিন সাহেবের স্বাক্ষরিত আন-রেজিস্টার্ড দলিলের (নম্বর: খদ ০৯৯৪৪৯৮, খদ ০৯৯৪৪৯৯ এবং খথ ১১৭৯৭৬৬) ১৪ নং শর্তে উল্লেখ আছে যে, রোডস অ্যান্ড হাইওয়ের সরকারি জায়গা ব্যবহার করতে পারবেন ভাড়াটিয়ারা এবং সেই জায়গা ব্যবহারের উপযোগী করার সার্বিক দায়িত্ব আমিন মডেল টাউনের।
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে শুক্রবার (২৯শে আগস্ট, ২০২৫) পর্যন্ত আমিন মডেল টাউন কর্তৃপক্ষের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।