চট্টগ্রাম প্রতিনিধি ॥
চট্টগ্রামের গোপালপাড়া এলাকার সিআরবিতে মোহাম্মদ আকবরের পরিচালিত একটি ফুচকা কারখানায় সরজমিনে দেখা গেছে, খাদ্য প্রস্তুতি হচ্ছে সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। কারখানার ভেতরে শ্রমিকরা সিগারেট খেতে খেতে ফুচকার খামি তৈরি করছে, যার ফলে সিগারেটের ছাই ও ধোঁয়া সরাসরি খাবারের সঙ্গে মিশছে। এছাড়া গরম পরিবেশে শ্রমিকদের শরীর থেকে ঝরা ঘামও ফুচকার খামির ওপর পড়ছে। হাতে নেই কোনো গ্লাভস বা স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরঞ্জাম। ময়লা-আবর্জনার মাঝখানেই খাদ্যপণ্য তৈরির এ ধরনের পরিস্থিতি জনস্বাস্থ্যর জন্য মারাত্মক হুমকি তৈরি করছে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব ফুচকার খামি ভাজার জন্য স্বাস্থ্য-ক্ষতিকর পাম অয়েল ব্যবহার করা হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদে এই ধরনের তেল ব্যবহারে হৃদরোগ, লিভারের জটিলতা এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়তে পারে। কিন্তু কারখানায় কোনো স্বাস্থ্যবিধি বা পরিচ্ছন্নতার নিয়মাবলী পালন করা হচ্ছে না।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই ধরনের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে প্রস্তুত খাবার খেলে ডায়রিয়া, আমাশয়, খাদ্যে বিষক্রিয়া, হেপাটাইটিসসহ নানা রোগ ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষ করে সিআরবিতে ঘুরতে আসা পর্যটক ও শিশু-কিশোররা এ ধরনের খাবার খেলে প্রায়ই অসুস্থ হয়ে পড়ে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, “খাবার তৈরির সময় যদি সিগারেটের ধোঁয়া, শরীরের ঘাম অথবা ময়লা-আবর্জনা খাদ্যের সঙ্গে মিশে যায়, তাহলে সেটি সরাসরি সংক্রমণের উৎস হয়ে দাঁড়ায়। শিশু ও পর্যটকদের জন্য এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।”
ফুড সেফটি আইন অনুযায়ী, খাবার প্রস্তুতির প্রতিটি ধাপেই স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক। এতে রয়েছে যথাযথ হাত ধোয়া, পরিচ্ছন্ন পোশাক, গ্লাভস ও মাস্ক ব্যবহার এবং পরিচ্ছন্ন পরিবেশে প্রস্তুতি। কিন্তু সরজমিনে দেখা গেছে, এই কারখানায় একটিও নিয়ম মেনে চলা হচ্ছে না।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, “ফুচকা সুস্বাদু হলেও অনিরাপদ পরিবেশে তৈরি হওয়ায় অনেকেই খেতে দ্বিধা বোধ করেন। ছোট শিশুদের জন্য এটি বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।”
প্রতিবেশীরা আরও জানান, প্রশাসন সচেতন হলেও দীর্ঘদিন ধরে এ ধরনের অবৈধ কারখানা বন্ধ করার কোনো কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায়নি। ফলে ক্রমেই জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বেড়ে চলেছে।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অবিলম্বে এসব অবৈধ ও অস্বাস্থ্যকর ফুচকা কারখানার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নিয়মিত ভিজিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি চেক নিশ্চিত করলে শুধু স্বাস্থ্যঝুঁকি কমবে না, পর্যটক ও স্থানীয় জনগণও নিরাপদভাবে খাবার উপভোগ করতে পারবে।
ভোক্তাদেরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যপণ্য থেকে নিজেদের পরিবারকে দূরে রাখা যায়। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে সতর্কতা অত্যন্ত জরুরি। স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন খাবার সরবরাহ নিশ্চিত করা না হলে শুধু স্বাদ নয়, স্বাস্থ্যও বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়বে।
সিআরবির মতো জনবহুল এবং পর্যটকপ্রিয় স্থানে অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রভাবে পর্যটকপ্রিয়তা ক্ষুণ্ণ হওয়া ছাড়াও স্থানীয় জনসংখ্যার রোগসংক্রমণ ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই খাদ্য নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার দায়িত্ব প্রশাসনকে কঠোরভাবে পালন করতে হবে।