শনিবার, ২৩ অগাস্ট ২০২৫, ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন
৮ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৯শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি
শিরোনাম :
ফটিকছড়িতে ছৈয়দ মুজিবুল বশর মাইজভাণ্ডার খোশরোজ শরীফ সম্পন্ন পঞ্চগড়ের সীমান্তে পাঁচ নারীকে ফেরত দিল বিএসএফ হাটহাজারী বাইতুশ শরফ আদর্শ দাখিল মাদ্রাসার সভাপতির দায়িত্বে অধ্যাপক শোয়াইব, জামায়াতের অভিনন্দন পুলিশের হুমকি ও সাংবাদিক হেনস্তা: সাংবাদিক মহলের ক্ষোভে চট্টগ্রাম উত্তাল হালদা পাড়ের প্রবীণ ডিম সংগ্রহকারী কামাল উদ্দিন সওদাগর পেলেন জাতীয় মৎস্য পদক ২০২৫ আশুলিয়ায় ৬ লাশ পোড়ানোর মামলা: সাবেক এমপিসহ ১৬ জনের বিচার শুরু, ৮ জন পলাতক দিল্লি ও কলকাতায় আ.লীগের কার্যালয় বন্ধের আহ্বান, যা জানাল ভারত সাবধানে সড়কে চলি অবশেষে নাম বদলাচ্ছে ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার, নতুন নাম ‘ঢাকা বাণিজ্য মেলা’ সাতক্ষীরায় শিক্ষককে মারধর ও লাঞ্ছিত করে বাজারে ঘোরানোর অভিযোগ, আটক ১

পুলিশের হুমকি ও সাংবাদিক হেনস্তা: সাংবাদিক মহলের ক্ষোভে চট্টগ্রাম উত্তাল

Coder Boss
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫
  • ৪ Time View

মোহাম্মদ সোহেল, চট্টগ্রাম থেকে ॥
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) ট্রাফিক বিভাগের দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে সম্প্রতি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ২৪ একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রচার করে। প্রতিবেদনে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন ট্রাফিক সেকশনে ঘুষ বাণিজ্য, অবৈধ যান চলাচল এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ উঠে আসে। এই প্রতিবেদন প্রচারের পরদিনই সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ সাংবাদিকদের উদ্দেশে হুমকিস্বরূপ সুরে প্রতিবাদ জানান।

কমিশনারের বক্তব্যে সাংবাদিকদের উদ্দেশে তির্যক মন্তব্য ও ‘দায়িত্বজ্ঞানহীনতার’ অভিযোগ উঠে আসে, যা সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। কিন্তু ঘটনার এখানেই শেষ হয়নি। কমিশনারের বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ডবলমুরিং থানায় দায়িত্ব পালনরত দুই সাংবাদিকের ওপর পুলিশের অমানবিক আচরণ এবং হেনস্তার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় চট্টগ্রাম সাংবাদিক সমাজ ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে। সোমবার দুপুরে ডবলমুরিং থানার সামনে বকেয়া বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ কাভার করতে যান যায়যায়দিন পত্রিকার প্রতিনিধি ও চট্টগ্রাম মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার্স ইউনিটির (সিএমআরইউ) সদস্য শাহেদুল ইসলাম মাসুম এবং আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি আব্দুল কাইয়ুম।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে জানা যায়, বিক্ষোভস্থলে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে ডবলমুরিং থানার ওসি বাবুল আজান সাংবাদিকদের বাধা দেন। তিনি সাংবাদিকদের মোবাইল ফোন ও মাইক্রোফোন কেড়ে নেন এবং অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেন। এক পর্যায়ে সাংবাদিক শাহেদুল ইসলাম মাসুমকে টেনে-হিঁচড়ে থানার ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। হাজতে প্রায় ২০ মিনিট আটকে রাখা হয় তাকে। এ সময় উপস্থিত অন্যান্য সাংবাদিক ও শ্রমিকদের চাপের মুখে পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

আব্দুল কাইয়ুম অভিযোগ করেন,
“আমরা আমাদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু ওসি বাবুল আজান আমাদের গালাগাল করে বলেন, ‘তোমরা সাংবাদিক না, চোর। তোমাদের খবর আমি রাখব।’ তারপর আমার সহকর্মী মাসুমকে টেনে থানার ভেতরে নিয়ে যান।”

এই ঘটনায় চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজ তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন (সিইউজে), চট্টগ্রাম টেলিভিশন রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক (সিটিআরএন) এবং চট্টগ্রাম মাল্টিমিডিয়া রিপোর্টার্স ইউনিটি (সিএমআরইউ) যৌথভাবে নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে।

সিএমআরইউর বিবৃতিতে বলা হয়,
“সংবিধানের ৩৯ অনুচ্ছেদ সংবাদ সংগ্রহ ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সাংবাদিককে আটক করা মৌলিক অধিকার হরণের শামিল, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। পুলিশের দায়িত্ব জনগণের নিরাপত্তা দেওয়া, সাংবাদিকদের দমন নয়।”

সিইউজের সভাপতি এক জরুরি সভায় বলেন, “আজ একজন সাংবাদিককে থানায় আটকানো হয়েছে, কাল হয়তো আরও বড় ঘটনা ঘটতে পারে। পুলিশ প্রশাসনের এই রকম মানসিকতা গণতন্ত্রের জন্য ভয়াবহ সংকেত।”

ট্রাফিক বিভাগের অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রচারের পর সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজের প্রতিবাদপত্র নিয়েও সাংবাদিক মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। প্রতিবাদপত্রে সাংবাদিকদের উদ্দেশে ‘অপেশাদার ও ভ্রান্তিপূর্ণ সংবাদ পরিবেশন করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে’ এমন বার্তা অন্তর্ভুক্ত ছিল।

সাংবাদিক নেতারা মনে করছেন, একজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তার এ ধরনের বক্তব্য সরাসরি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, “দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করলে যদি হুমকি আসে, তবে জনগণের পক্ষে সাংবাদিকরা কণ্ঠস্বর তুলবে কীভাবে?”

চট্টগ্রামের সাংবাদিক সংগঠনগুলো অবিলম্বে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছে। সিএমআরইউর পক্ষ থেকে আল্টিমেটাম দিয়ে বলা হয়েছে,
“আমরা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও দায়ী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা চাই। অন্যথায় সাংবাদিক সমাজ কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।”

এছাড়া সিইউজে জানিয়েছে, আগামীকাল দুপুরে নগরীর প্রেসক্লাব চত্বরে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে। প্রয়োজনে কর্মবিরতিসহ বড় আন্দোলনেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনগুলো।

গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীরা বলেছেন, সাংবাদিকদের ওপর হামলা বা হেনস্তার ঘটনা কেবল গণমাধ্যমের স্বাধীনতাকে খর্ব করে না, বরং সাধারণ নাগরিকের তথ্য জানার অধিকারকেও বাধাগ্রস্ত করে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. সেলিম উদ্দিন বলেন,
“যে দেশে সাংবাদিকেরা নিরাপদ নন, সে দেশে গণতন্ত্রও নিরাপদ নয়। পুলিশের মতো একটি শক্তিশালী বাহিনীর কাছ থেকে দায়িত্বশীল আচরণ প্রত্যাশিত।”

চট্টগ্রামের প্রবীণ সাংবাদিকরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো নিছক বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়, বরং পুলিশের মধ্যে সাংবাদিক বিরোধী মনোভাব দিন দিন তীব্র হচ্ছে। তারা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে সংবাদমাধ্যম ভয়মুক্ত পরিবেশে কাজ করতে পারবে না।

এক প্রবীণ সাংবাদিক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আজ যদি সাংবাদিকরা চুপ করে যায়, কাল সাধারণ মানুষও অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস হারাবে। তাই এই লড়াই শুধু সাংবাদিকদের নয়, সমগ্র নাগরিক সমাজের।”

চট্টগ্রামে সাম্প্রতিক এই ঘটনা আবারও প্রমাণ করেছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। সাংবাদিক সমাজ এক হয়ে এর বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে। এখন দেখার বিষয়, সরকার ও পুলিশ প্রশাসন এ ঘটনার যথাযথ তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করে কি না, নাকি আবারও ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102