রংপুর প্রতিনিধি ॥
রংপুর: উজানের পাহাড়ি ঢল আর লাগাতার বৃষ্টিতে হু হু করে বাড়ছে তিস্তার পানি, যার জেরে রংপুরে দেখা দিয়েছে বন্যার আশঙ্কা। নদীর তীব্র স্রোতের কারণে গঙ্গাচড়ার মহিপুরে অবস্থিত তিস্তা দ্বিতীয় সড়ক সেতুর রক্ষা বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে প্রায় ৭০ ফুট গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে এবং সেতুটি মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়েছে। একই সঙ্গে, নদীর তীরবর্তী এলাকার শত শত ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
সেতুরক্ষা বাঁধ ধসে বিপদ বাড়ছে:
গঙ্গাচড়ার মহিপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত প্রায় ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে দ্বিতীয় সড়ক সেতুটি রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার মধ্যে যোগাযোগকে সহজ করেছে। কিন্তু নদীর পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতের ধাক্কায় এই সেতুর প্রায় ৯০০ মিটার দীর্ঘ রক্ষা বাঁধের নিচের মাটি ধসে যাচ্ছে। বর্তমানে বাঁধের ব্লকগুলোও ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে। স্থানীয়দের আশঙ্কা, দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পুরো বাঁধ ভেঙে গিয়ে সেতু ও যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে লালমনিরহাট-রংপুর সড়কসহ আশপাশের হাজারেরও বেশি পরিবার ঝুঁকিতে রয়েছে।
নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি:
তিস্তার পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অনেক পরিবার বন্যার আশঙ্কায় ঘরবাড়ি ছেড়ে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছে। অন্যদিকে, পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের শিবদেব গ্রামে গত কয়েকদিনে শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। শুধুমাত্র শিবদেব গ্রামেই প্রায় ৫০টি বসতবাড়ি, একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা এবং একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তিস্তার ভাঙনে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে প্রশাসন:
গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে, সম্প্রতি নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৩০টি পরিবারকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে এক বান্ডিল ঢেউটিন ও নগদ ৩ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন, কারণ সাময়িক সহায়তা দীর্ঘমেয়াদি সমাধান নয়।
বন্যা ও ভাঙনের পূর্বাভাস:
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, রংপুর অঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর সংলগ্ন অঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, গত কয়েকদিনে রংপুর বিভাগে এবং তিস্তার উজানে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাত হওয়ায় নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।