রাজনৈতিক ডেস্ক ॥
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মের অংশগ্রহণ ক্রমেই বাড়ছে। বিশেষ করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকায় জায়গা করে নিচ্ছেন সিনিয়র নেতাদের সন্তানরা। তাদের বাবা-মারা অতীতে ছিলেন সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, অথবা এখনও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। এবার তাদের উত্তরসূরিরাই পিতার দেখানো পথে হেঁটে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে নামছেন।
এই তরুণ নেতারা বিগত সরকারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় ছিলেন এবং অনেকে মামলা-হামলার শিকারও হয়েছেন। নিজ এলাকায় সামাজিক কার্যক্রমে যুক্ত থাকার পাশাপাশি তারা দলের গুরুত্বপূর্ণ পদও সামলাচ্ছেন। তাদের এই সক্রিয়তা তরুণ ভোটারদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
রাজনীতিতে তরুণ প্রজন্মের গুরুত্ব
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান মনে করেন, দেশের মোট ভোটারের একটি বড় অংশ তরুণ। তাই সব রাজনৈতিক দলের কাছেই তরুণ প্রার্থীরা এখন গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘কোনো তরুণ প্রার্থী যদি তার ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা, ক্লিন ইমেজ এবং দলের প্রতি নিবেদিত থাকার প্রমাণ দিতে পারেন, তবে তাকে প্রার্থী করতে কোনো সমস্যা নেই। কেবল পারিবারিক পরিচয়ের কারণে প্রার্থী হওয়াটা কাম্য নয়, বরং তার নিজস্ব গ্রহণযোগ্যতা থাকা জরুরি।’
দ্বিতীয় প্রজন্মের সম্ভাব্য প্রার্থীরা
বিএনপির অনেক প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এবং সিনিয়র নেতা প্রয়াত হয়েছেন বা রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন। তাদের সন্তানদের অনেকেই এখন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয়। আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন:
ব্যারিস্টার নওশাদ জমির: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকারের ছেলে। তিনি পঞ্চগড়-১ আসন থেকে মনোনয়ন চান।
শামা ওবায়েদ: সাবেক মহাসচিব কেএম ওবায়দুর রহমানের মেয়ে। তিনি ফরিদপুর-২ আসনের জন্য একজন হেভিওয়েট প্রার্থী।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত: প্রয়াত স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি যশোর-৩ আসন থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।
নিপুণ রায় চৌধুরী: বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীর মেয়ে। তিনি ঢাকা-৩ আসন থেকে মনোনয়নের আলোচনায় আছেন।
ইশরাক হোসেন: ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে। তিনি ঢাকা-৬ আসনে প্রার্থী হতে আগ্রহী।
হুম্মাম কাদের চৌধুরী: প্রয়াত নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সন্তান। তিনি চট্টগ্রাম-৭ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থী।
মাহমুদুর রহমান সুমন: প্রয়াত বদরুজ্জামান খান খসরুর ছেলে। তিনি নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী।
সাঈদ আল নোমান: বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম-১০ আসন থেকে মনোনয়ন চান।
ইসরাফিল খসরু: বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর ছেলে। তিনি চট্টগ্রাম-১১ আসনে কাজ করছেন।
আরো কিছু উল্লেখযোগ্য নাম
এছাড়াও আরও অনেক তরুণ নেতা তাদের বাবা-মায়ের রাজনৈতিক ঐতিহ্য ধরে রাখতে মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাদের মধ্যে কয়েকজন হলেন:
খন্দকার আবদুল মুক্তাদির: সিলেট-১ আসনে, বাবা প্রয়াত খন্দকার আবদুল মালিক।
নাসের রহমান: মৌলভীবাজার-৩ আসনে, বাবা প্রয়াত অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান।
মীর মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন: চট্টগ্রাম-৫ আসনে, বাবা মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন।
ব্যারিস্টার শাকিলা ফারজানা: একই আসনে প্রয়াত সৈয়দ ওয়াহিদুল আলমের মেয়ে।
তানভীর আহমেদ রবিন: ঢাকা-৪ আসনে, বাবা সালাউদ্দিন আহমেদ।
এসএ সিদ্দিক: ঢাকা-১৪ আসনে, বাবা এসএ খালেক।
ইরফান ইবনে আমান অমি: ঢাকা-২ আসনে, বাবা আমানউল্লাহ আমান।
চৌধুরী নায়াব ইউসুফ: ফরিদপুর-৩ আসনে, বাবা প্রয়াত চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ।
ইয়াসের খান চৌধুরী: ময়মনসিংহ-৯ আসনে, বাবা আনোয়ারুল হোসেন খান চৌধুরী।
ফাহিম চৌধুরী: শেরপুর-২ আসনে, বাবা জাহেদ আলী।
মাহমুদুর রহমান সুমন: নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে, বাবা বদরুজ্জামান খান খসরু।
অনেক তরুণ নেতাই নিজ নিজ এলাকায় দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা স্থানীয় নেতাকর্মীদের পাশে থাকার পাশাপাশি জনগণের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রাখছেন। মনোনয়ন পেলে এলাকার উন্নয়ন এবং মানুষের জীবনযাত্রার মান পরিবর্তনে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা।
এসব তরুণ নেতার উত্থান প্রমাণ করে, বিএনপির নেতৃত্বে একটি নতুন প্রজন্মের আগমন ঘটছে, যারা অভিজ্ঞতার পাশাপাশি তারুণ্যের উদ্দীপনা নিয়ে রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান তৈরি করতে আগ্রহী।