নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা ॥
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী অধ্যায়ের সূচনা হয়েছিল এই দিনে। স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়ে সাধারণ ছাত্র-জনতার রক্তক্ষয়ী গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশ থেকে পালিয়েছিলেন তিনি। সেই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে উপদেষ্টা সারজিস আলম তাঁর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। সেখানে তিনি গত এক বছরে দেশ ও জাতির প্রত্যাশা, প্রাপ্তি এবং ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন।
উপদেষ্টা সারজিস আলম তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে মানুষ একটি কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিল। তবে এক বছর পেরিয়ে গেলেও সেই স্বপ্নের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এখনও সম্ভব হয়নি। তিনি মনে করেন, এক বছরে যতটুকু পরিবর্তন আশা করা হয়েছিল, ততটুকুও অর্জিত হয়নি। এ জন্য তিনি এককভাবে কাউকে দায়ী না করে বরং সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের সম্মিলিত ব্যর্থতার দিকে ইঙ্গিত করেছেন।
তিনি বলেছেন, একটি আদর্শ রাষ্ট্র গঠনে রাজনীতিবিদ, আমলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সিভিল সোসাইটি, গণমাধ্যম, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ জনগণ—সবারই সমান ভূমিকা থাকা প্রয়োজন। এর যেকোনো একটি অংশের ব্যর্থতা পুরো ব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। শেখ হাসিনা হয়তো দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, কিন্তু বছরের পর বছর ধরে তাঁর স্বৈরাচারী শাসনের ফলে যে অসুস্থ মানসিকতা ও অপকর্মের চর্চা সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে, তা রাতারাতি নির্মূল করা সম্ভব নয়।
উপদেষ্টা সারজিস আলম মনে করেন, এই নষ্ট ব্যবস্থা, চিন্তা ও ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আমাদের নিরন্তর লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। তিনি রিকশাচালক থেকে শুরু করে সবজি বিক্রেতা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ, আমলা, সিভিল সোসাইটি এবং মিডিয়াকর্মীদের মধ্যে কোনো মৌলিক পার্থক্য দেখতে পান না, যদি তারা ব্যক্তিগত স্বার্থে ক্ষমতার অপব্যবহার করে। তিনি বলেন, যার যতটুকু সামর্থ্য আছে, সে ততটুকুই ক্ষমতার অপব্যবহার করে। তাই এই লড়াইটা কোনো নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নয়, বরং সমাজের প্রতিটি স্তরের ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, এই লড়াই চালিয়ে যেতে পারলে দেরিতে হলেও কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ অর্জন সম্ভব। যে প্রজন্ম একটি ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটাতে পারে, তাদের সামনে ভবিষ্যতে অন্য কেউ সহজে পার পেয়ে যাবে না।
সারজিস আলম এই পথচলায় নানা ধরনের ষড়যন্ত্র, প্রোপাগান্ডা এবং মনোবল ভাঙার চেষ্টার বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। তিনি বলেছেন, দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যবস্থার সুবিধাভোগী একটি ক্ষুদ্র গোষ্ঠী তাদের অবৈধ অর্থের ব্যবহার করে জনগণের মধ্যে বিভাজন তৈরি করতে এবং অবিশ্বাস সৃষ্টি করতে চেষ্টা করবে। এসব মোকাবিলা করেই সামনে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
সবশেষে তিনি গণঅভ্যুত্থানে জীবন উৎসর্গকারী শহীদ এবং আহত সহযোদ্ধাদের ত্যাগকে স্মরণ করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ওপর জোর দেন। তিনি ৫ আগস্টকে সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে একটি ‘আমানত’ হিসেবে উল্লেখ করে সেই আমানতের খেয়ানত না করার শপথ নেওয়ার আহ্বান জানান। এই প্রতিজ্ঞাই কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশের পথ খুলে দেবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তিনি ‘ইনক্বিলাব জিন্দাবাদ’ স্লোগান দিয়ে তাঁর লেখাটি শেষ করেন।