মোঃ মজিবুর রহমান, সালথা (ফরিদপুর) প্রতিনিধি ॥
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার ভাওয়াল ইউনিয়ন পরিষদের পলাতক চেয়ারম্যান মো. ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়ার অপসারণের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা। গত আগস্ট মাস থেকে নিখোঁজ থাকা এই আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন ইউপি সদস্যরা।
বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে সালথা প্রেসক্লাবের হলরুমে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে ভাওয়াল ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মো. আবু মোল্যা লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। তিনি জানান, ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়া বিগত স্বৈরাচার সরকারের আমলে নৌকা প্রতীক নিয়ে পরপর দুইবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। তার বিরুদ্ধে পরিষদের বেশিরভাগ বরাদ্দ আত্মসাৎ এবং বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্ধেক কাজ করে বাকি অর্থ লুটপাটের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আবু মোল্যা আরও বলেন, “আওয়ামী লীগের ক্ষমতা ব্যবহার করে তিনি সাধারণ ইউপি সদস্যদের কোনো গুরুত্ব দেননি, যার কারণে সাধারণ ইউপি সদস্যরা উন্নয়নমূলক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।” গত ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়া এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন এবং পরিষদে আসছেন না। এর ফলে সাধারণ জনগণ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ইউপি সদস্যরা ফারুকুজ্জামানকে অপসারণ করে প্যানেল চেয়ারম্যানের মাধ্যমে জনগণের সেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ফারুকুজ্জামান ফকির মিয়া ২০১৬ সালে প্রথমবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হন। এর ফলে ইউনিয়নে তার জনপ্রিয়তা কমে গেলেও, ফরিদপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাহদাব আকবর লাবু চৌধুরীর আশীর্বাদে ২০২১ সালে তিনি আবারও নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। এরপর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এবং টিআর, কাবিখা, কাবিটা ও ওয়ানপার্সেনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ না করেই অর্থ আত্মসাৎ করতে থাকেন। এমনকি ভিজিডি, গর্ভবতী ও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড প্রদানেও তিনি টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ভিজিএফের চাল বিক্রির অভিযোগও তার বিরুদ্ধে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম রিংকুর গাড়ি ভাঙচুরের মামলায় চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। অভিযুক্ত ইউপি চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামান ফকিরের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি এবং তার মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া গেছে।
সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, “ভাওয়াল ইউপি চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামানের বিরুদ্ধে দুটি মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে কয়েকবার অভিযান চালিয়েছি এবং তাকে ধরতে পুলিশ তৎপর রয়েছে।”
সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান বালী জানিয়েছেন, “ইউপি চেয়ারম্যান ফারুকুজ্জামানের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”