নিজস্ব প্রতিনিধি ॥
ঢাকা: ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ প্রতিষ্ঠার চূড়ান্ত প্রস্তুতি চলছে। আগামী ৫ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করা হবে এই বিশেষায়িত জাদুঘরটি। এ লক্ষ্যে, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় তাদের মালিকানাধীন ১৭ একর জমিসহ গণভবনের সমুদয় স্থাপনা ৯৯ বছরের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে লিজ দলিল সম্পন্ন করেছে। গত ২২ জুলাই তেজগাঁও সাবরেজিস্ট্রি অফিসে এই হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়, যার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ আইনি জটিলতা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হলো।
গণভবন এখন ইতিহাস: ৯৯ বছরের জন্য সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীনে
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, গত বছর ‘চব্বিশের বর্ষা বিপ্লব’-এ ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ ও আহতদের অবদানকে চিরস্মরণীয় করে রাখতে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যেখানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছাড়ার আগ পর্যন্ত বসবাস করতেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। গত ৩০ ডিসেম্বর সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক কমিটির বৈঠকে গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। নকশা প্রণয়ন ও অনুমোদন প্রক্রিয়ায় সাত মাস বিলম্ব হলেও, গত ৮ জুলাই নকশার অনুমোদন মেলে।
১১১ কোটি টাকার বাজেট, সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কাজ
দ্রুত কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সরকার সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ওটিএম) অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি ১১১ কোটি ১৯ লাখ ৮১ হাজার টাকা বরাদ্দ অনুমোদন করে। বর্তমানে দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে যাতে ৫ আগস্টের মধ্যে জাদুঘরটি উদ্বোধনের জন্য প্রস্তুত হয়।
আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন: দলিল সম্পন্ন তেজগাঁও সাবরেজিস্ট্রি অফিসে
গণভবনের সম্পত্তির মূল মালিকানা গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে ছিল। ভবিষ্যতে আইনি জটিলতা এড়াতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস-এর অনুমোদনক্রমে এটি সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই মোতাবেক, গত ২২ জুলাই তেজগাঁও সাবরেজিস্ট্রার মো. মোহায়মেনুর রহমানের উপস্থিতিতে এই লিজ দলিল সম্পন্ন হয়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নজরুল ইসলাম দাতা এবং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান গ্রহীতা হিসেবে দলিলে স্বাক্ষর করেন। দলিলে তেজগাঁও মৌজার ‘বি’ সেক্টরে অবস্থিত প্লট নং-০৫, মোট ১৭.৪৬৭৯ একর জমির বিস্তারিত তফশিল উল্লেখ করা হয়েছে।
শর্তসাপেক্ষে লিজ: বার্ষিক ৩০০০ টাকা খাজনা
৯৯ বছরের জন্য এই লিজ বরাদ্দ দেওয়া হলেও, এর জন্য কোনো মূল্য নির্ধারণ করা হয়নি। যেহেতু এটি সরকারের এক প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি অন্য প্রতিষ্ঠানে হস্তান্তর হচ্ছে, তাই মূল্য নির্ধারণ বাধ্যতামূলক নয়। তবে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়কে প্রতি বছর ৩০০০ টাকা খাজনা পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া, গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া এই সম্পত্তি অন্য কোথাও হস্তান্তর কিংবা এর অবকাঠামোতে কোনো পরিবর্তন আনা যাবে না।
জাদুঘরের বিশেষ আকর্ষণ: জুলাই বিপ্লবের পূর্ণাঙ্গ চিত্র
সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, জুলাই স্মৃতি জাদুঘরে প্রবেশ করার পর একজন দর্শনার্থী যেন জুলাই বিপ্লবের প্রেক্ষাপট, আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের দুঃশাসন এবং অভ্যুত্থানের রক্তাক্ত ইতিহাস উপলব্ধি করতে পারেন, সেভাবেই এটি সাজানো হচ্ছে। জাদুঘরে আন্দোলনের স্থিরচিত্র, বিভিন্ন স্মারক, উপকরণ, শহীদদের ব্যক্তিগত সামগ্রী, গুরুত্বপূর্ণ নথি, তৎকালীন পত্রিকার কাটিং এবং অডিও-ভিডিওসহ বিভিন্ন স্মৃতিস্মারক থাকবে। বিশেষভাবে স্থান পাবে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্যও। এই জাদুঘরটি বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের একটি অংশ হিসেবে পরিচালিত হবে।