বিশেষ প্রতিনিধি ॥
আশুলিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে গত ৪২ দিন ধরে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। সাব-রেজিস্ট্রারের পদত্যাগের দাবিতে দলিল লেখকদের চলমান আন্দোলন ও বিক্ষোভের কারণে ব্যাহত হচ্ছে জমি কেনাবেচার কার্যক্রম। এতে জমি রেজিস্ট্রি করতে না পেরে চরম বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতা-বিক্রেতারা। একইসঙ্গে সরকারও বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে।
অচলাবস্থার কারণ: পাল্টাপাল্টি অভিযোগ
আশুলিয়া সাব-রেজিস্ট্রার খায়রুল বাশার ভূঁইয়া পাভেলের দাবি, আশুলিয়া দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তিনি বলেন, “আমি আইন অনুযায়ী কাজ করছি। কিছু সুবিধাভোগী দলিল লেখক আমার কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা না পেয়ে আশুলিয়া দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেনের ইন্ধনে সাধারণ দলিল লেখকদের বিভ্রান্ত করছেন এবং কর্মপরিবেশ নষ্ট করছেন।”
সাব-রেজিস্ট্রার আরও অভিযোগ করেন, দলিল লেখকদের কক্ষ জোর করে বন্ধ রাখা হয়েছে এবং পে-অর্ডার করতেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। যারা অন্য জায়গা থেকে দলিল লিখে সম্পাদন করতে আসছেন, তাদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। এমনকি আমির হোসেন নামের একজন ব্যাংক কর্মকর্তাকে মারধর করে আহত করা হয়েছে, যার লিখিত অভিযোগ আশুলিয়া থানায় করা হয়েছে। তার মতে, একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশে এমন পরিস্থিতি চলতে পারে না এবং কিছু সুবিধাভোগী দলিল লেখক চরম স্বেচ্ছাচারিতায় মেতে উঠেছেন।
খায়রুল বাশার ভূঁইয়া পাভেল অচলাবস্থার মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন যে, আশুলিয়া দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন ভুয়া খাজনা দিয়ে একটি দলিল সম্পাদন করাতে চেয়েছিলেন, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। এছাড়া, সরকারি উৎস কর ৮০ হাজার টাকা থেকে কমিয়ে মাত্র ২০ হাজার টাকা দেওয়ার অন্যায় আবদার এবং ভ্রম সংশোধনের নামে আরএস দাগ নম্বর পরিবর্তন করে দলিল সম্পাদনের জন্য অন্যায় চাপ দেওয়ার অভিযোগও করেন তিনি। এমনকি খাজনা-খারিজ ছাড়া দলিল সম্পাদনের জন্যও তাকে চাপ দেওয়া হয়েছিল বলে জানান। তিনি বলেন, “সরকার আমাকে সরকারি স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য এখানে বসিয়েছে। কোনো চাপই আমাকে আমার দায়িত্ব থেকে সরাতে পারবে না এবং কারও অন্যায় দাবিতে পদত্যাগের প্রশ্নই আসে না। আমি এখানে থাকব কিনা, সে বিষয়ে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে।”
দলিল লেখকদের দাবি: দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার অপসারণ
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আশুলিয়া দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন বলেন, “সাব-রেজিস্ট্রার খায়রুল বাশার পাভেল একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। আমরা তার অপসারণ চাই।”
উদ্বেগ ও শঙ্কা
গত ১৭ জুন থেকে চলমান এই অচলাবস্থায় জমির ক্রেতা-বিক্রেতা এবং সচেতন মহল গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। দ্রুত এই সংকটের সমাধান না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ লাঘব এবং সরকারি রাজস্ব আদায় স্বাভাবিক করতে দ্রুত এই অচলাবস্থার নিরসন হওয়া জরুরি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।