অনলাইন ডেস্ক ॥
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে পদত্যাগ করেছেন দলটির আলোচিত নেত্রী নীলা ইস্রাফিল। সোমবার (২৮ জুলাই) সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এনসিপির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেন। তবে দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেনের দাবি, নীলা ইস্রাফিল এনসিপির কেউ নন। তিনি জানান, নীলা নাগরিক কমিটিতে ছিলেন এবং তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছিল। কিছু বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে তাকে এনসিপিতে যুক্ত করা হয়নি।
আলোচনার সূত্রপাত যেখানে
পারিবারিক একটি বিষয়কে কেন্দ্র করে প্রথম আলোচনায় আসেন নীলা ইস্রাফিল। তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রয়াত উপদেষ্টা হাসান আরিফের ছেলে মুয়াজ আরিফের সাবেক স্ত্রী। মুয়াজের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর তিনি গণমাধ্যমের নজরে আসেন। ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছিলেন। এরপর নিজ দল এনসিপির নেতা সারোয়ার তুষারের বিরুদ্ধে ফেসবুকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে আবারও তিনি তুমুল আলোচনায় আসেন।
নীলার পরিচিতি
গোপালগঞ্জের মেয়ে নীলা ইস্রাফিল ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী ছাত্রদের গড়া রাজনৈতিক দলে যোগ দেন তিনি। এরপর বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডেও তাকে সক্রিয় দেখা গেছে।
গণমাধ্যম সূত্রে নীলার আরও বেশ কিছু পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি একাধারে একজন মডেল ও অভিনেত্রী। তার অভিনীত সকাল আহমেদ পরিচালিত ‘কে খুনী’ ও ‘ব্রেক আপ ইন’ নাটক দুটি গত ঈদে প্রচারিত হয়েছে এবং ইউটিউবেও প্রকাশিত হয়েছে। নীলা মেজবাউর রহমান সুমনের নির্দেশনায় ‘বিকাশ’-এর এবং পলকের নির্দেশনায় ‘জিপি’-এর বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করেছেন। তার অভিনীত একমাত্র মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা আবীর খান পরিচালিত ‘পোস্টমাস্টার ৭১’। এছাড়াও তিনি ধ্রুব’র পরিচালনায় আরও একটি সিনেমায় অভিনয় করছেন।
অনিমেষ আইচ পরিচালিত ‘কুয়া’ নাটকে নীলা প্রথম অভিনয় করেন। তার উল্লেখযোগ্য ধারাবাহিক নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘ঘর সংসার’, ‘টিরিগিরি টক্কা’, ‘ফুল এইচডি’ ইত্যাদি। রায়হানের নির্দেশনায় তিনি প্রথম একটি মশার কয়েলের বিজ্ঞাপনে মডেল হিসেবে কাজ করেন। সব মিলিয়ে তিনি প্রায় ৫০টি বিজ্ঞাপনে মডেল হয়েছেন।
কেন ছাড়লেন এনসিপি?
এনসিপি ছেড়ে যাওয়ার বিষয়ে গতকাল সোমবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুকে নীলা ইস্রাফিল একটি পোস্ট দেন। সেখানে তিনি লেখেন, “আমি নৈতিকতা বেছে নিচ্ছি, দুর্বৃত্ত রাজনীতি নয়। এনসিপি একটি রাজনৈতিক দল, যেখানে অপরাধীর বিচার হয় না, যেখানে একজন নারীকে হেনস্তার পরেও অপরাধীর পক্ষে নীরবতা পালন করা হয়, সেই জায়গায় আমি এক মুহূর্তও থাকতে পারি না।”
তিনি আরও লেখেন, “একজন নারীকে অপমান, নিপীড়ন ও সামাজিকভাবে ধ্বংসের চেষ্টা যে ব্যক্তি করেছে, তার বিরুদ্ধে যখন কোনো শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নেওয়া হয় না, বরং সে দলীয় ছত্রছায়ায় বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়, সেই দল আর কোনো মতাদর্শ বা ন্যায়বিচারের প্রতিনিধিত্ব করে না।”
এই নেত্রী দৃঢ় কণ্ঠে জানান, “আমি আজ থেকে, এখন থেকেই এনসিপির সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করছি। এ দলকে আমি দান করলাম। আমি ন্যায়ের পক্ষে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আপসহীন প্রতিবাদই আমার অস্ত্র। সত্য ও মর্যাদার পথে আমি একা চললেও পিছপা হব না।”