অনলাইন ডেস্ক ॥
সচিবালয়ে ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া চার ছাত্রের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। শুনানি চলাকালীন বিচারক জামসেদ আলম মন্তব্য করেন, “বাংলাদেশটার কোনো লাইফ নেই। অলরেডি পুরো দেশটাই এখন লাইফ সাপোর্টে।”
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) এই মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আসামিদের আইনজীবী সালাহউদ্দিন খান, তাহমিনা আক্তার লিজা ও তানভীরের আইনজীবী দাবি করেন, আসামিরা মেধাবী শিক্ষার্থী এবং আবেগের বশে সচিবালয়ে গিয়েছিলেন। তাদের জামিন না দিলে ভবিষ্যৎ নষ্ট হতে পারে। আইনজীবী সালাহউদ্দিন খান জানান, আসামি শাকিল মিয়ার আগামী রবিবার পরীক্ষা রয়েছে। আবু সুফিয়ানের আইনজীবী তাহমিনা আক্তার লিজা বলেন, আবু সুফিয়ান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।
অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মুহাম্মদ শামছুদ্দোহা সুমন আসামিদের জামিনের তীব্র বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, আসামিরা আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। সিসি ফুটেজে তাদের সচিবালয়ে ভাঙচুর করতে দেখা গেছে। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, এই আসামিরা দেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে এবং ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই ঘটনার পেছনের মূল পরিকল্পনাকারীদের খুঁজে বের করার আবেদন করা হয়।
শুনানির এক পর্যায়ে বিচারক আবু সুফিয়ানের কাছে তার পরিচয় জানতে চান। আবু সুফিয়ান নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবি বিভাগের শিক্ষার্থী দাবি করে সচিবালয়ে যাননি বলে জানান। তিনি বলেন, জুলাই আন্দোলনে তিনি বিজয় একাত্তর হলে সহ-সমন্বয়ক ছিলেন এবং কখনোই ছাত্রলীগ করেননি। তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যাত্রাবাড়ী যাওয়ার পথে আটক করা হয়েছে।
বিচারক এ সময় দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “আমাদের দেশটা ১২ আনি অলরেডি শেষ। ওদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ এসেছে, ওরা কি আর চাকরি পাবে? এত এত গোল্ডেন এ প্লাস দিয়ে কী হবে? ওদের সিডিএমএস কী ঠিক হবে? ওদের লাইফ তো অলরেডি শেষ। যেখানে বাংলাদেশটারই কোনো লাইফ নেই। অলরেডি পুরো দেশটাই এখন লাইফ সাপোর্টে।”
তিনি আরও বলেন, “দেশে মোটামুটি ল ইন অর্ডার নেই বললেই চলে। যদি রাষ্ট্রই না থাকে তাহলে ওদের সার্টিফিকেট দেবে কে? সচিবালয় হচ্ছে রাষ্ট্রের মাথা। মাথাই যদি আক্রান্ত হয়, তাহলে তো বডির কোনো দাম থাকে না।” দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে বিচারক বলেন, “আমাদের রাষ্ট্র একটি ট্রানজিকশন পিরিয়ডে আছে।… এভাবে চলতে থাকলে সামনে হয়তো জামায়াতের শাসনও আমাদের দেখতে হতে পারে।” তিনি যোগ করেন, “মূলত একটা রাষ্ট্র ঠিক হতে তিনটা প্রজন্ম লাগে। আমাদের প্রজন্ম ভালো রাষ্ট্র দেখবে না। আমাদের সন্তানদের প্রজন্ম হয়তো দেখবে।”
পরে আদালত চার আসামির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।