বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৪২ অপরাহ্ন
৯ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
৪ঠা রজব, ১৪৪৭ হিজরি
শিরোনাম :
জলবায়ু অভিযোজনে বিনিয়োগ করলে ২০৩০ সালে পোশাক রপ্তানি ছাড়াবে ১২ হাজার কোটি ডলার তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন: আজ ঢাবি ছাত্রদলের আনন্দ মিছিল নির্বাচনে নাগরিকদের অংশগ্রহণ বাড়াতে জাতিসংঘের নতুন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘ফিউচার বাংলাদেশ’ ধামরাইয়ে বাজারে লুটপাটের অভিযোগ নিয়ে ধূম্রজাল: ব্যবসায়ীদের দাবি ‘ঘটনা সাজানো’ কেরানীগঞ্জে ফরমালিন দিয়ে ফল পাকানোর দায়ে ৯ ব্যবসায়ীকে অর্থদণ্ড সালথায় ৪০ পেঁয়াজ চাষিকে প্রকাশ্যে ঋণ দিল কৃষি ব্যাংক ওসমান হাদীর খুনিদের ফাঁসির দাবিতে আইএইচআরসি’র প্রতিবাদী সমাবেশ ধামরাইয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে নবনিযুক্ত ওসির মতবিনিময় সভা বিজয় দিবসে জাতীয় সম্মিলিত ফোরাম (জেএসএফ) বাংলাদেশের শুভেচ্ছা ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস: শ্রেষ্ঠ আত্মত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়

উটের অশ্রু ও রক্ত: ২৬ সাপের বিষের ত্রাতা, বাঁচাবে লাখো জীবন

Coder Boss
  • Update Time : শুক্রবার, ২৫ জুলাই, ২০২৫
  • ৬০ Time View

অনলাইন ডেস্ক ॥
মরুভূমির জাহাজ উট শুধু আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অপরিহার্য বাহনই নয়, এর মাংস ও দুধও অত্যন্ত পুষ্টিকর। কিন্তু এবার জানা গেল আরও এক চাঞ্চল্যকর তথ্য – উটের এক ফোঁটা অশ্রু আর রক্তও হতে পারে শত শত মানুষের জীবন বাঁচানোর প্রধান উৎস!

ভারতের রাজস্থানের বিকানেরে অবস্থিত ন্যাশনাল রিসার্চ সেন্টার অন ক্যামেলস (NRCC)-এর এক যুগান্তকারী গবেষণায় সম্প্রতি এই তথ্য উঠে এসেছে। গবেষকরা প্রমাণ করেছেন, উটের অশ্রু ও রক্ত থেকে পাওয়া অ্যান্টিবডি অন্তত ২৬ প্রজাতির বিষধর সাপের বিষের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে।

এই আবিষ্কার ভারতসহ বিশ্বের অন্যান্য সাপ-প্রবণ অঞ্চলের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ প্রতি বছর সাপের কামড়ে বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু হয় এবং আরও বহু মানুষ স্থায়ীভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন। শুধু ভারতেই বছরে প্রায় ৫৮,০০০ মানুষ সাপের কামড়ে মারা যান এবং ১,৪০,০০০ জনেরও বেশি মানুষ স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যান।

গবেষকদের মতে, উটের অশ্রু ও রক্ত থেকে প্রাপ্ত অ্যান্টিবডিগুলো সাপের বিষের প্রাণঘাতী প্রভাব, বিশেষ করে রক্তক্ষরণ ও রক্ত জমাট বাঁধার মতো সমস্যাগুলোর বিরুদ্ধে দারুণভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা, এই প্রতিষেধকগুলো প্রচলিত ঘোড়ার ইমিউনোগ্লোবিউলিন-ভিত্তিক চিকিৎসার তুলনায় অনেক কম অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, যা রোগীদের জন্য আরও নিরাপদ।

NRCC-এর একজন জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী ব্যাখ্যা করেছেন, “উটের একটি বিশেষ প্রতিরোধ ব্যবস্থা আছে যা মরুভূমির কঠিন পরিবেশে টিকে থাকার জন্য বিকশিত হয়েছে। তাদের অ্যান্টিবডিগুলো আকারে ছোট, স্থিতিশীল এবং খুব সহজেই টিস্যুতে প্রবেশ করতে পারে, যা চিকিৎসায় এগুলোকে আরও কার্যকর করে তোলে।”

গবেষক দলটি অত্যন্ত বিষাক্ত সাপের বিষ ব্যবহার করে উট-উৎপন্ন অ্যান্টিবডির কার্যকারিতা পরীক্ষা করেছেন এবং এতে তারা শক্তিশালী সুরক্ষামূলক প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন। এই অ্যান্টিবডিগুলো বিষকে দ্রুত এবং নিরাপদে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম।

এই আবিষ্কার ভবিষ্যতে কম খরচে এবং সহজলভ্য চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরির পথ খুলে দেবে, বিশেষ করে গ্রামীণ অঞ্চলে যেখানে অ্যান্টিভেনম সহজলভ্য নয় এবং চিকিৎসার বিলম্ব প্রায়শই প্রাণঘাতী হয়ে ওঠে।

উট পালকদের জন্য নতুন দিগন্ত
চিকিৎসার বাইরেও এই গবেষণা থর মরুভূমির উটচাষীদের জীবিকায় নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। বিকানের, জয়সালমীর এবং যোধপুর অঞ্চলের উট পালকদের এখন তাদের উট থেকে নিয়ন্ত্রিতভাবে অশ্রু ও রক্ত সংগ্রহের জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। বিনিময়ে NRCC এবং সিরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া-সহ অন্যান্য অংশীদার ওষুধ কোম্পানিগুলো প্রতি উটের জন্য মাসে ৫,০০০ থেকে ১০,০০০ রুপি পর্যন্ত অর্থ প্রদান করছে।

NRCC-এর একজন মুখপাত্র বলেছেন, “এই উদ্যোগ শুধু জীবনই বাঁচাচ্ছে না, বরং উটকে আমাদের সমাজে একটি নতুন অর্থনৈতিক ভূমিকা দিচ্ছে। মরুভূমির বাহন হিসেবে পরিচিত উট এখন জনস্বাস্থ্যের অংশীদার হয়ে উঠছে।”

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
উট-উৎপন্ন অ্যান্টিবডির চাহিদা ইতোমধ্যে সরকারি ও বেসরকারি ওষুধ কোম্পানিগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং অনেকেই এর উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জাতীয় পর্যায়ে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করা গেলে তা শুধু ভারতের নয়, বরং সাপ-সংক্রমণপ্রবণ বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলেও সাপের কামড়জনিত মৃত্যুর হার ও আর্থিক ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দিতে পারে।

যদিও চূড়ান্ত ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন এখনো বাকি, তবে গবেষকরা অত্যন্ত আশাবাদী। NRCC-এর একজন গবেষক বলেন, “এটি বিষ চিকিৎসার ক্ষেত্রে এক নতুন যুগের সূচনা হতে পারে — এবং তা এসেছে একদম অপ্রত্যাশিত জায়গা থেকে — উটের একফোঁটা অশ্রু থেকে!”

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102