শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫, ০৩:৫২ পূর্বাহ্ন
১১ই শ্রাবণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১লা সফর, ১৪৪৭ হিজরি
শিরোনাম :
‘পুরো দেশটাই এখন লাইফ সাপোর্টে’: ছাত্রদের জামিন নামঞ্জুর করেন বিচারক বিমান বিধ্বস্ত: আহতদের চিকিৎসায় চীনের বিশেষজ্ঞ দল ঢাকায় সাংবাদিকের ফোন ছিনতাই: মোহাম্মদপুরের ৪ পুলিশ ক্লোজড, গ্রেপ্তার ৩ প্রতারিত গরু বিক্রেতাকে ওমরাহ পাঠালেন অপু বিশ্বাস উটের অশ্রু ও রক্ত: ২৬ সাপের বিষের ত্রাতা, বাঁচাবে লাখো জীবন শিক্ষার্থী বিক্ষোভে গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন হাসিনা: আল জাজিরা দুর্নীতির জালে জর্জরিত জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ: প্লট জালিয়াতি থেকে অর্থ আত্মসাৎ পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পে ‘অডিট আপত্তি’র অপপ্রচার রাষ্ট্রবিরোধী অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির ইন্ধন: নেপথ্যে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ উত্তরায় বিমান দুর্ঘটনা: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৯, সিঙ্গাপুরের মেডিকেল টিম ঢাকায়

দুর্নীতির জালে জর্জরিত জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ: প্লট জালিয়াতি থেকে অর্থ আত্মসাৎ

Coder Boss
  • Update Time : বৃহস্পতিবার, ২৪ জুলাই, ২০২৫
  • ৪ Time View

অনলাইন ডেস্ক ॥
আবাসন সংকট নিরসনের মহান উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ (জাগৃক)। রাজধানী থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল পর্যন্ত সাধারণ মানুষের মাথার উপর ছাদ নিশ্চিত করাই ছিল এর লক্ষ্য। কিন্তু গত এক দশক ধরে প্রতিষ্ঠানটি তার মূল উদ্দেশ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে উল্টোপথে হাঁটছে। অভিযোগ উঠেছে, সাধারণ মানুষের আবাসন সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে জাগৃকের কতিপয় কর্মকর্তা নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত। সরকারি জমি ব্যক্তিগত মালিকানায় দলিল করে দেওয়া, গুরুত্বপূর্ণ নথি গায়েব করা, এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদায়নসহ সব ক্ষেত্রেই চলছে সীমাহীন স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি। এমনকি রাজনৈতিক পটপরিবর্তনও গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের এই দুর্নীতির ধারাকে আটকাতে পারেনি। বিগত সরকারের আমলে যারা দাপট দেখিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতিতে লিপ্ত ছিলেন, তারাই এখন ভোল পাল্টে আবার নতুন করে সরব ভূমিকা পালন করছেন।

সরকারি জমিতে হরিলুট: অভিযোগের দীর্ঘ ফিরিস্তি
প্রাপ্ত নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডে ৪/১ নং প্লটের সামনে ৩.০৬ কাঠা খণ্ডজমি ছিল। নিয়ম অনুযায়ী, এই জমি যার বাড়ির সামনে, তাকেই বরাদ্দ দেওয়ার কথা। কিন্তু সেই নিয়মকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে জালিয়াতির মাধ্যমে ওই জমি অন্যদের নামে লিজ দলিল করে দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, ভূমি বরাদ্দ সুপারিশ জাল করে বোর্ড কমিটিতে অনুমোদন করানো হয়েছে এবং মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে লিজ দলিল রেজিস্ট্রি করা হয়েছে।

একইভাবে, ভূমি বরাদ্দ কমিটির সিদ্ধান্ত জালিয়াতি করে ক্রমিক নং ১৫-এর পর ক্রমিক নং ১ ও ২ দেখানো হয়েছে, যা স্পষ্ট প্রমাণ করে যে সিদ্ধান্তপত্রে ভুয়া সিদ্ধান্ত প্রিন্টিংয়ের মাধ্যমে কাটপেস্ট করা হয়েছে। এই গুরুতর অনিয়মের পেছনে জাগৃকের সদস্য (ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা) কুদ্দুছ আলী সরকার মূল ভূমিকা রেখেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, এই কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরে সাড়ে তিন কাঠা সরকারি জমি আইনবহির্ভূতভাবে ব্যক্তির নামে খণ্ডজমি হিসেবে বরাদ্দ দিয়েছেন। মিরপুর ১১ নম্বর সেকশনের বি-ব্লকের ৮ নম্বর রোডের ৫ নম্বর প্লট এবং মিরপুর-২ নং সেকশনের ২ নম্বর রোডের ৯-বি প্লট-এর ক্ষেত্রেও একই ধরনের জালিয়াতি হয়েছে। মিরপুর-২ নং সেকশনের প্লটটি বর্তমান মালিক নূর বানুর বাবার নামে প্রথম বরাদ্দ করা হয়েছিল এবং তারা নির্বিঘ্নে বসবাস করছিলেন। কিন্তু কুদ্দুছ আলী সরকার কোটি কোটি টাকার বিনিময়ে প্রায় পৌনে পাঁচ কাঠা জমি স্থানীয় ভূমিদস্যু ইউসুফ সাঈদ বাহিনীর সদস্য মো. রফিকুল ইসলামের নামে বিকল্প প্লট হিসেবে বরাদ্দ দেন। এরপর সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে রাতের আঁধারে অস্ত্রের মুখে প্লটটি দখল করা হয়।

জাগৃক সূত্রে জানা যায়, মিরপুর হাউজিং এস্টেটের প্লট জালিয়াতি ছাড়াও গত কয়েক মাসে অন্তত ১০টি প্লটের নথি জালিয়াতি করা হয়েছে। বিষয়টি নজরে আসার পর গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

সিন্ডিকেট ও স্বেচ্ছাচারিতা: সেবাপ্রত্যাশীদের ভোগান্তি
অভিযোগ উঠেছে, জাগৃকের কর্মকর্তারা কাজের চেয়ে গ্রুপিং ও তদবিরে বেশি ব্যস্ত থাকেন। ‘কে কার লোক’ – এই বিবেচনায় কাজ করা হয়, যার ফলে সাধারণ সেবাপ্রত্যাশীদের পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয়। এমনকি অনেক কর্মকর্তা অফিস চলাকালে গোপন কক্ষে ঘুমিয়ে থাকেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে যারা আওয়ামী লীগ সরকারের লোক হিসেবে পরিচিত ছিলেন, সরকার পরিবর্তনের পর তারাই ভোল পাল্টে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছেন এবং বিভিন্ন দাবির নামে আন্দোলন করে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করছেন।

জানা গেছে, কুদ্দুছ আলী সরকারের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট রয়েছে। এই সিন্ডিকেটের প্রভাবে হিসাব সহকারী পদে নিয়োগ পাওয়া সাতজন কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমি শাখায় পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। অথচ নিয়োগের শর্ত অনুযায়ী, দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগে এই কর্মকর্তাদের চাকরি স্থায়ী হওয়ার সুযোগ নেই। অস্থায়ী অবস্থাতেই তাদের দিয়ে প্লট-ফ্ল্যাট বিক্রি, নামজারি, আমমোক্তার, লিজ, কাজের অনুমতিপত্র স্বাক্ষরসহ গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এই সাতজন হলেন: মো. জাহিদুল হুদা, কৃষ্ণ ভৌমিক, মো. হাবিবুর রহমান, শাহরিয়ার আহাম্মেদ সুমন, মো. সাজ্জাত হুসাইন, টিপু সুলতান, এবং রাকিবুল ইসলাম। অভিযোগ রয়েছে, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে কুদ্দুছ আলী সরকার তাদের গুরুত্বপূর্ণ শাখায় পোস্টিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন।

অর্থ আত্মসাৎ ও ক্ষমতার অপব্যবহার: কুদ্দুছ আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড়
অভিযোগ আছে, কুদ্দুছ আলী সরকার ক্ষমতার জোরে অনিয়মকেই নিয়মে পরিণত করেছেন। টাকার বিনিময়ে সরকারি প্লট ব্যক্তির নামে দেওয়া এবং নানা অনিয়মে তিনি জড়িত। এসব বিষয় জানাজানি হলে নিজের অপরাধের দায় ছোট কর্মকর্তাদের ওপর চাপিয়ে বদলি করা হয়। বাইরে সেবাপ্রত্যাশীরা ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করলেও তিনি অফিস চলাকালে দরজা বন্ধ করে ঘুমান বলে অভিযোগ রয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতি করে তিনি শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন বলেও অভিযোগ।

জাতীয় গৃহায়নে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ করেন না বলে অভিযোগ রয়েছে কুদ্দুছ আলীর বিরুদ্ধে। কাজের ঘুষ তার ব্যক্তিগত সহকারী শোয়েব উল আহসান এবং তার ড্রাইভারের মাধ্যমে নেওয়া হয়। টাকা না দিলে মাসের পর মাস গৃহায়নের কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও সমস্যার সমাধান হয় না। নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও কুদ্দুছ আলী তার পিএ শোয়েব উল আহসানকে মিরপুর ১১ নং সেকশন ও রূপনগর আবাসিক এলাকায় কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন এবং এসব কাজ থেকে কমিশন নেন বলে অভিযোগ।

সরেজমিনে দেখা যায়, ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করেও যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ কুদ্দুছ আলী সরকারের সাক্ষাৎ পান না সেবাপ্রত্যাশীরা। জাতীয় গৃহায়নে সরকারি হাউজিংয়ের নথি গায়েব করে সরকারের কাছ থেকে বরাদ্দ পাওয়া প্লট ব্যক্তির নামে রেজিস্ট্রি করে দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন গৃহায়নের কর্মকর্তারা। এই জাল দলিলে কুদ্দুছ আলীরও স্বাক্ষর রয়েছে।

কর্তৃপক্ষের নীরবতা ও দুদকের তদন্ত
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা উইংয়ের সদস্য (যুগ্ম সচিব) মোহাম্মদ কুদ্দুছ আলী সরকার চেয়ারম্যানের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে রাজি হননি এবং পরে এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) মো. হামিদুর রহমান খান বলেন, “কুদ্দুছ আলী সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে আমার জানা নেই।”

এদিকে, জাগৃকের সদস্য (ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা) মোহাম্মদ কুদ্দুছ আলী সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি তুলে ধরে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে) অভিযোগ জমা পড়েছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, ধর্ম মন্ত্রণালয়ে কর্মরত অবস্থায় মসজিদ, মাদ্রাসার নামে বরাদ্দকৃত টাকা এবং মন্ত্রণালয়ের ঠিকাদারের মাধ্যমে কমিশন বাণিজ্য করে কুদ্দুছ আলী সরকার কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এক বছর আগে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর ও গৃহায়ন ভবনে যোগদান করে ভূমি ও সম্পত্তি ব্যবস্থাপনায় সদস্যপদে কর্মরত থেকে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের সঙ্গে আঁতাত করে তিনি বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি করে চলেছেন।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102