নিজস্ব প্রতিবেদক ॥
নাগরিকদের তথ্য পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে সরকার ‘তথ্য অধিকার আইন-২০০৯’ সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে। নতুন সংশোধনীতে তথ্য প্রদানে বাধা দিলে জরিমানার পরিমাণ বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করার সুপারিশ করা হয়েছে, যা বর্তমানে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা। জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতে তৈরি করা আইনের খসড়াটি বর্তমানে সংশ্লিষ্টদের মতামতের জন্য অনলাইনে উন্মুক্ত করা হয়েছে।
গত ১০ জুলাই তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় আইনের এই সংশোধিত খসড়াটি অনলাইনে প্রকাশ করেছে। এতে মোট ৪টি ধারা (৫, ৬, ৭ ও ২৭ নম্বর) সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
মূল পরিবর্তনগুলো কী?
জরিমানা বৃদ্ধি (২৭ নম্বর ধারা): তথ্য পেতে বাধা সৃষ্টির শাস্তি হিসেবে জরিমানা বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে তথ্য প্রদানে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে প্রতিদিন ৫০ টাকা হারে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। নতুন খসড়ায় এই হার প্রতিদিন ২৫০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা করার কথা বলা হয়েছে। বিশেষ করে, অপকর্ম বা দুর্নীতি ঢাকতে তথ্য প্রদানে বাধা দিলে জরিমানা আরোপ বাধ্যতামূলক হবে।
তথ্য প্রকাশে বাধ্যবাধকতা (৬ নম্বর ধারা): এই ধারার সংশোধনীতে বলা হয়েছে, প্রতিটি কর্তৃপক্ষ তাদের গৃহীত সিদ্ধান্ত, সম্পাদিত বা প্রস্তাবিত কার্যক্রম এবং কার্যকলাপের সব তথ্য প্রকাশ ও প্রচার করবে, যাতে নাগরিকেরা সহজেই তা জানতে পারেন। কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য গোপন করতে বা এর সহজলভ্যতা কমাতে পারবে না। এছাড়াও, প্রতিটি কর্তৃপক্ষকে প্রতি বছর একটি সুনির্দিষ্ট তথ্য-সম্বলিত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে। প্রস্তাবিত বাজেট, প্রকৃত আয়-ব্যয়, অডিট রিপোর্ট, সরকারি ক্রয় প্রক্রিয়া, দরপত্র এবং চুক্তির বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
কিছু ক্ষেত্রে তথ্য প্রদানে ছাড় (৭ নম্বর ধারা): আইনের ৭ নম্বর ধারায় নতুন দুটি উপ-ধারা যুক্ত করা হয়েছে। এতে জনস্বার্থ বিবেচনায় সরকারি কর্তৃপক্ষ কিছু কিছু ক্ষেত্রে তথ্য প্রবেশাধিকারের অনুমতি দিতে পারবে।
তথ্যের ক্যাটালগ ও সূচি সংরক্ষণ (৫ নম্বর ধারা): ৫ নম্বর ধারার সংশোধনীতে বলা হয়েছে, তথ্য অধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিটি কর্তৃপক্ষ তাদের সব তথ্যের ক্যাটালগ এবং সূচি প্রস্তুত করবে ও যথাযথভাবে সংরক্ষণ করবে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব খাদিজা তাহেরা ববি জানান, এই ৪টি সংশোধনী মূলত জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব থেকে এসেছে। তিনি বলেন, “আমরা এ ইস্যুতে মতামত চেয়েছি। খসড়া আইনটি আমরা অনলাইনে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। যে কেউ মতামত দিতে পারবেন। আমরা এটি নিয়ে ইতোমধ্যে দুটি বৈঠক করেছি। নতুন করে আরও প্রস্তাব এলে সেগুলো নিয়েও কাজ করবো।”