অনলাইন ডেস্ক ॥
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সরাসরি ফ্লাইট নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন সিলেটের ওমরাহ যাত্রীরা। অভিযোগ উঠেছে, সিলেটের জন্য নির্ধারিত ডেডিকেটেড ফ্লাইটগুলোতে এ অঞ্চলের যাত্রীরা পর্যাপ্ত আসন পাচ্ছেন না। বিমানের সিংহভাগ টিকিট ঢাকার যাত্রীদের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, ৪ সেপ্টেম্বরের পর থেকে সিলেট-জেদ্দা রুটে সপ্তাহে দুটি ফ্লাইটের পরিবর্তে একটিতে নামিয়ে আনা হয়েছে এবং সিলেট-মদিনা ফ্লাইট আগেই বাতিল করা হয়েছে। এই ফ্লাইট সংকটের কারণে সিলেটের ট্রাভেল এজেন্সিগুলোকে বারবার ওমরাহ গ্রুপের তারিখ পরিবর্তন করতে হচ্ছে, যার ফলে প্রস্তুতি নেওয়া সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়ে ওমরাহ পালনে যেতে পারছেন না সিলেটের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা।
বিমান কর্তৃপক্ষের এমন ঘোষণাহীন ফ্লাইট বাতিল এবং ডেডিকেটেড ফ্লাইটে সিলেটের যাত্রীদের জন্য কমপক্ষে ৩০০ আসন বরাদ্দের দাবিতে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন সিলেটের হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) নেতারা।
বিমানের ‘বিমাতাসুলভ’ আচরণ ও প্রতিশ্রুতির বরখেলাপ
এর আগে প্রবাসী ও ওমরাহ যাত্রীদের দাবির মুখে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস সিলেট-জেদ্দা রুটে সপ্তাহে দুটি এবং সিলেট-মদিনা রুটে একটি সরাসরি ফ্লাইট চালু করেছিল। এই তিনটি ফ্লাইট সিলেটের যাত্রীদের জন্য ডেডিকেটেড ছিল। কিন্তু গত হজ মৌসুমের পর থেকে বিমানের আচরণে পরিবর্তন আসে। অভিযোগ অনুযায়ী, সিলেটের ডেডিকেটেড ফ্লাইটের সিংহভাগ আসন ঢাকার এজেন্সিগুলোর কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। এতে সিলেটের যাত্রীদের সরাসরি ফ্লাইটে ওমরাহ পালনের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে সিলেট-মদিনা ফ্লাইটটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এই বিষয়ে হাব সিলেটের নেতারা বিমানের সিলেট কার্যালয়ে স্মারকলিপি দেন। কোনো প্রতিকার না পেয়ে গত ১৫ মে তারা ঢাকায় বিমানের বিক্রয় ও বিপণন পরিচালক আশরাফুল আলমের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে সিলেটের যাত্রীদের দুর্ভোগ কমানোর আশ্বাস দেওয়া হলেও, সমস্যা সমাধানের বদলে উল্টো সিলেট-জেদ্দা রুটে সপ্তাহে একটি করে ফ্লাইট বাতিল করা হয়। গতকাল থেকে সপ্তাহের বৃহস্পতিবারের সিলেট-জেদ্দা ফ্লাইটটি বিমানের অনলাইন সিস্টেমে দেখা যাচ্ছে না।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও কর্তৃপক্ষের আশ্বাস
সিলেটের ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এতদিন প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার বিমানের সিলেট-জেদ্দা ফ্লাইট ছিল। কিন্তু এখন ৪ সেপ্টেম্বরের পর থেকে বৃহস্পতিবারের নির্ধারিত ফ্লাইটটি অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে না। একইভাবে সিলেট-মদিনা ফ্লাইটও কোনো ঘোষণা ছাড়াই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
হাব সিলেটের সেক্রেটারি আবদুল কাদির জানান, ফ্লাইটগুলো সিলেটের জন্য ‘ডেডিকেটেড’ হওয়া সত্ত্বেও ঢাকার ব্যবসায়ীরা সিংহভাগ আসন বুকিং করে নিচ্ছেন। এতে সিলেটের ওমরাহ যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন এবং ট্রাভেল এজেন্সিগুলোও বারবার ওমরাহ গ্রুপের তারিখ পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে।
হাব সিলেটের সভাপতি আবদুল হক বলেন, বিমান কর্তৃপক্ষের সাথে বৈঠকে তারা সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন এবং ডেডিকেটেড ফ্লাইটের ৯০ ভাগ আসন সিলেটের জন্য বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন বৃহস্পতিবারের সিলেট-জেদ্দা ফ্লাইটও অনলাইনে দেখা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে সিলেটের ব্যবসায়ীরা আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবেন বলে তিনি হুঁশিয়ারি দেন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ বিমানের সিলেট জেলা ব্যবস্থাপক মো. শাহনেওয়াজ মজুমদার জানান, যেহেতু ফ্লাইটগুলো ‘ডেডিকেটেড’, তাই সিলেটের যাত্রীদের জন্য একটি কোটা থাকা যুক্তিযুক্ত। তিনি মনে করেন, ফ্লাইট বাড়ানোর মাধ্যমেই এই সমস্যার সমাধান সম্ভব এবং আশা প্রকাশ করেন যে খুব শিগগিরই এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।