প্রেস বিজ্ঞপ্তি
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি(মার্কসবাদী)-সিপিবিএম-এর কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জননেতা বিপ্লবী কমরেড এম এ সামাদ ও সাধারণ সম্পাদক বিপ্লবী কমান্ডার কমরেড সাহিদুর রহমান আজ ১৭ জুলাই ২০২৫ সংবাদপত্রে দেওয়া এক বিবৃতিতে গতকাল গোপালগঞ্জে এনসিপি’র সমাবেশে ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের ন্যাক্কারজনক হামলা, রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ও গাড়ী ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী গুলি করে ৪ জনকে হত্যার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং সন্ত্রাসীদের এদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, সময় মতো কোন ব্যবস্থা নেয়নি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্ব জনগণের জান-মাল ও সভা-সমাবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এনসিপি’র পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী হামলার সময় নিস্ক্রীয় ছিল এবং কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত জানানোর পরই তারা গোপালগঞ্জে যায়। পূর্বঘোষিত কর্মসূচির নিরাপত্তা রক্ষার দায়ীত্ব আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তারা ব্যর্থ হয়েছে। আমরা যা দেখলাম তা খুবই উদ্বেগজনক। ৫ আগষ্ট এর জনগণ আশা করেছিল জান-মাল ও সভা সমাবেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, কিন্তু তা হয়নি। এর আগেও অভ্যুত্থানের পর বিভিন্ন জায়গায় মব সৃস্টি করে জনগণের রাজনৈতিক অধিকারকে খর্ব করা হয়েছে, ‘মুজিববাদের আতুর ঘর’ বলে ধানমন্ডির ৩২ নাম্বারে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ভাঙা হয়েছে, সেখানে সেনা সদস্যদের ঠায় নীরবে দাড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মারক স্থাপনা ভাঙাসহ নানা অসংবেদনশীল কাজ করা হয়েছে কিন্তু সরকার ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত রাজনৈতিক মহল এতে নির্বিকার থেকেছে কিংবা মদদ যুগিয়েছে। পূর্বের মব দমনে এবং মবসন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় একের পর এক মব সন্ত্রাস চলছে। এনসিপি’র সমাবেশে হামলা তারই ধারাবাহিকতা। গোপালগঞ্জের ঘটনার দায় সরকার কোনমতেই এড়াতে পারেনা। সরকারের কর্মকান্ড সন্দেহ জনক।
বিবৃতিতে নেতৃদ্বয় আরও বলেন, সহিংসতা দমনে জীবনঘাতী মারণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে যা গ্রহনযোগ্য নয় অথচ অভ্যুত্থানের পরই আশুলিয়ায় গুলি করে শ্রমিক হত্যা এবং গতকাল আমরা দেখলাম গোপালগঞ্জে গুলি করে ৪ জন মানুষকে হত্যা করা হলো। এনসিপি’র এই সমাবেশ নিয়ে আগে থেকেই উৎকণ্ঠা ছিল, তাই সেই সমাবেশের নিরাপত্তা দিতে পর্যাপ্ত আইনি প্রস্ততি এবং সময়মতো ব্যবস্থা না নিয়ে পরে অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ করতে গিয়ে এভাবে মানুষ হত্যা করা কাম্য নয় শুধু তাই নয়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে, রমজান কাজী নামে একজনকে সুস্থ অবস্থায় ধরে নিয়ে ১০ মিনিট পর তাকে গুলি করে হত্যা করার ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ এসেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিরাপত্তা বাহিনীর বীভৎসতার আরও নানা ছবি প্রকাশিত হয়েছে। অবিলম্বে এনসিপি’র সমাবেশে হামলা, আইন-শৃংখলা বাহিনীর গুলিতে ৪ জনকে হত্যা, প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষের আহত হওয়ার ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে জড়িত ও দায়ীদের বিচার দাবি করা হয় বিবৃতিতে।
বিবৃতিতে সারাদেশব্যাপী এনসিপির শান্তিপূর্ণ জুলাই পদযাত্রা কেন হঠাৎ গোপালগঞ্জে গিয়ে যুদ্ধংদেহী ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ হয়ে গেল? এদের দেশি-বিদেশি নানা পৃষ্ঠপোষকদের মদদে ধানমন্ডি ৩২ নাম্বার বাড়ি ভাঙার স্মৃতি মলিন হতে না হতেই আবার এনসিপি’র কতিপয় নেতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ‘গোপালগঞ্জের নাম বদলে ফেলা হবে,’ ‘শেখ মুজিবর রহমানের কবর গুড়িয়ে দেয়া হবে’ এবং তাঁকে নিয়ে নানা অশালীন কটুক্তি ইত্যাদি নানা উস্কানিমূলক বক্তব্য ছড়াতে থাকল।
নেতৃবৃন্দ আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সাম্রাজ্যবাদের কাছে নতজানু হয়ে দেশের জাতীয় স্বার্থ বিরোধী নানা পদক্ষেপ বন্দর লীজ, করিডোর, অস্ত্র কারখানার অনুমতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ‘নন ডিসক্লোজার’ গোপন চুক্তি থেকে দৃষ্টি ভিন্নখাতে নেয়া হচ্ছে বিবৃতিতে তিনি গণতন্ত্রের পথে বাধা সৃষ্টিকারী দেশি-বিদেশি সকল ষড়যন্ত্র চক্রান্ত সম্পর্কে জনগণকে সচেতন থাকার এবং পূর্ণ গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম জারী রাখার আহ্বান জানান। এবং নেতৃবৃন্দ দেশবাসীকে সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে সজাগ থাকতে আহবান জানান।