ধর্ম ডেস্ক ॥
প্রতিশ্রুতি বা ওয়াদা পূরণ করা নবী-রাসূল ও সৎকর্মপরায়ণ বান্দাদের এক বিশেষ গুণ এবং সম্ভ্রান্ত মানুষের অভ্যাস। পক্ষান্তরে, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা পাপাচারী ও হীন মানুষের চরিত্র। মূলত, প্রতিশ্রুতি (ওয়াদা) পূর্ণ করা একজন মুমিনের অন্যতম গুণ, যা অর্জন না করলে কেউ প্রকৃত মুমিন হতে পারে না।
মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে যত্নবান হওয়ার আদেশ করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, “হে মুমিনরা, তোমরা অঙ্গীকারসমূহ পূর্ণ করো…” (সূরা মায়েদা: ১)।
কারণ কঠিন কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ এই প্রতিশ্রুতির ব্যাপারেও হিসাব নেবেন। পবিত্র কোরআনে আরও ইরশাদ হয়েছে, “আর অঙ্গীকার পূর্ণ করো। অবশ্যই প্রতিশ্রুতি সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” (সূরা বনি ইসরাঈল: ৩৪)
আমাদের সমাজে অনেক সময় প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করাকে হালকাভাবে দেখা হয়। কিছু মানুষ তো মনে করে, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা বা মিথ্যা বলা এক ধরনের পেশাদারিত্ব। অথচ ইসলামের দৃষ্টিতে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করা হারাম এবং মুনাফিকের চরিত্র। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) এমন খুতবা খুব কমই দিয়েছেন, যাতে এ কথা বলেননি যে, “যার আমানতদারি নেই তার ঈমানও নেই এবং যার ওয়াদা-প্রতিশ্রুতির মূল্য নেই তার দ্বিনও নেই।” (শুআবুল ঈমান)
অর্থাৎ, কোনো মানুষ যখন দ্বিন-ধর্মের ধার ধারে না, তখনই সে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে। হাদিসের ভাষায় একে মুনাফিকের অভ্যাস বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেছেন, “মুনাফিকের চিহ্ন তিনটি: ১. যখন কথা বলে মিথ্যা বলে; ২. যখন প্রতিশ্রুতি করে ভঙ্গ করে এবং ৩. আমানত রাখা হলে খিয়ানত করে।” (বুখারি, হাদিস: ৩৩)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “ওয়াদা (প্রতিশ্রুতি) একটি ঋণ।” অর্থাৎ, ঋণ পরিশোধ করা যেমন অপরিহার্য, তেমনি প্রতিশ্রুতি পূরণে যত্নবান হওয়াও অপরিহার্য। অন্য এক হাদিসে বলা হয়েছে, “মুমিনের ওয়াদা ওয়াজিব।”
ফিকাহবিদরা বলেছেন, ওয়াদা (প্রতিশ্রুতি)-এর ঋণ হওয়া এবং ওয়াজিব হওয়ার অর্থ হলো, শরীয়তসম্মত কারণ ছাড়া ওয়াদা পূরণ না করা গুনাহের কাজ। তবে ওয়াদা এমন ঋণ নয় যে এর কারণে আদালতের মুখোমুখি হতে হয়, কিংবা জোরাজোরি করে আদায় করা যায়। ফিকাহবিদদের পরিভাষায়, ঋণকে ধর্মের দিক বিবেচনায় ওয়াজিব বলা যায়, তবে বিচারের দিক থেকে ওয়াজিব নয়। (কুরতুবী, তাফসিরে মাআরিফুল কোরআন, ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৩৬)।