আইন-আদালত ডেস্ক॥
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলায় নিম্ন আদালতের বিচার প্রক্রিয়া নিরপেক্ষ ছিল না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। দ্রুত গতিতে সাক্ষ্য গ্রহণ ও রায় ঘোষণা, জুবাইদা রহমানকে যথাযথ নোটিশ না দেওয়া এবং অভিযোগ গঠনে আইনের ব্যত্যয়সহ নানা অসঙ্গতি তুলে ধরেছেন উচ্চ আদালত। এর ফলে তারেক রহমান ও ডা. জুবাইদা রহমান উভয়ই এই মামলায় খালাস পেয়েছেন।
গত ২৮ মে বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় প্রদান করেন। সোমবার (১৪ জুলাই, ২০২৫) এই রায়ের ৫২ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে। রায়ে ডা. জুবাইদা রহমানকে নিম্ন আদালতের দেওয়া তিন বছরের কারাদণ্ড থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে তারেক রহমানও দুই ধারায় মোট নয় বছরের সাজা থেকে খালাসের সুবিধা পেয়েছেন।
হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ: বিচার প্রক্রিয়ার দ্রুততা প্রশ্নবিদ্ধ
হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়েছে, বিচারিক আদালতে মাত্র দুই মাস চার দিনের মধ্যে ৪২ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছিল। এরপর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হওয়ার আট দিনের মধ্যেই রায় ঘোষণা করা হয়। আদালতের মতে, “এত দ্রুত গতিতে বিচারের অগ্রগতি ও সমাপ্তি ব্যাপক বিশ্বাস তৈরি করে যে, বিচার নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়নি।”
নোটিশ প্রদান ও অভিযোগ গঠনে ত্রুটি
রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইনের ২৬(১) ধারা অনুযায়ী জুবাইদা রহমানকে নোটিশ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল, কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। ফলে তাকে দোষী সাব্যস্ত করা ও সাজা আইনত বাতিলযোগ্য। এছাড়াও, আপিলকারীদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল, তা “অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ” ছিল এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ২২১ ধারার বিধানগুলো অনুসরণ করা হয়নি। হাইকোর্ট মনে করেন, এই ধরনের ত্রুটিপূর্ণ অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করা বা সাজা বহাল রাখা যায় না।
তারেক রহমানের খালাস
মামলায় নানা অসঙ্গতি থাকার কারণে ভারত ও বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের নজির অনুসারে পুরো রায়টিই বাতিলযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট। এ কারণে জুবাইদা রহমানের আপিলের প্রেক্ষিতে তারেক রহমানও খালাসের সুবিধা পেয়েছেন, যদিও তিনি নিজে আপিল করেননি।
মামলার প্রেক্ষাপট
২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে তারেক রহমান, জুবাইদা রহমান ও তার মা সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুর বিরুদ্ধে রাজধানীর কাফরুল থানায় মামলা দায়ের করে দুদক। এই মামলার বিচার শেষে ২০২৩ সালের ২ আগস্ট ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের তৎকালীন বিচারক মো. আছাদুজ্জামান তারেক রহমানকে দুই ধারায় মোট নয় বছর এবং ডা. জুবাইদা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেন। সেই রায়ের বিরুদ্ধেই ডা. জুবাইদা রহমান আপিল করেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এই রায় দিলেন।
আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়া
আপিলকারীদের পক্ষে আইনজীবী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন, “আমাদের দেওয়া যুক্তি আইনগতভাবে সঠিক ছিল, যা হাইকোর্ট বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রমাণিত হলো। আমরা বলেছি তারেক রহমান ও জুবাইদা রহমানের সঙ্গে অন্যায় করা হয়েছিল।” তিনি আরও যোগ করেন, “জাস্টিস হারিড, জাস্টিস বারিড। দ্রুত শুধু সাক্ষী নেওয়াই শেষ নয়, এখানে মোমবাতি জ্বালিয়েও সাজা দেওয়ার জন্য দ্রুত বিচার কাজ চালিয়েছিল বিচারিক আদালত।”
এই রায় দেশের বিচার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করার গুরুত্ব আবারও তুলে ধরেছে।