নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি॥
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলেই আলোচিত জুলাই আন্দোলনের হত্যা মামলাগুলোর বিচারকাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। সোমবার (১৪ জুলাই) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার হাজীগঞ্জ এলাকায় দেশের প্রথম ‘জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ’ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই ঘোষণা দেন।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, “জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নারায়ণগঞ্জে ২১ জন শহীদ হয়েছেন এবং সাড়ে ৩০০ মানুষ আহত হয়েছেন। আমি আপনাদের দৃঢ়কণ্ঠে জানাতে চাই, বিচার কার্যক্রম পূর্ণ গতিতে এগিয়ে চলছে। কোনো রকম গাফিলতি থাকবে না। আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান সরকারের শাসনামলেই জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে।”
তিনি আরও জানান, জুলাইয়ে আহত ও নিহতদের ঘটনায় দায়ের করা অনেক মামলার তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। আগামী ৫ আগস্টের আগেই এসব মামলার চার্জশিট জমা দিতে বলা হয়েছে, যা জমা পড়লেই দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রয়োজনে শহীদদের হত্যার বিচার দ্রুত বিচার আইনে করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
আইন উপদেষ্টা তার বক্তব্যে জুলাই আন্দোলনের বিজয়ের মূল কারণ হিসেবে “ফ্যাসিবাদী শক্তিকে বাদ দিয়ে সবার ঐক্যবদ্ধ হওয়া” কে উল্লেখ করেন। তিনি এই ঐক্য ধরে রাখার গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, “আমাদের ওই ঐক্য ধরে রাখতে হবে। ঐক্য অটুট থাকলে আমরা ভবিষ্যতেও বিজয়ী হবো।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোখলেছ উর রহমান, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম, ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম মিঞা এবং পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাখাওয়াত হোসেন, সদস্যসচিব আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জেলা ও মহানগর জামায়াতের সাবেক আমির এবং কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদ সদস্য মাওলানা মাঈনউদ্দিন, মহানগরের বর্তমান আমির মাওলানা আব্দুল জব্বার, গণসংহতি আন্দোলনের নারায়ণগঞ্জের সমন্বয়ক তরিকুল সুজন, ছাত্র ফেডারেশনের জেলার সভাপতি ফারহানা মানিক মুনা, জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির দক্ষিণ অঞ্চলের সমন্বয়ক মোহাম্মদ শওকত আলী এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক নীরব রায়হানসহ অন্যান্য নেতা।
অনুষ্ঠানের শেষে জুলাই আন্দোলনে শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
উল্লেখ্য, জুলাইয়ের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নারায়ণগঞ্জে ৫৬ জন শহীদ ও ৩৫০ জন আহত হয়েছিলেন। নবনির্মিত এই স্মৃতিস্তম্ভে নারায়ণগঞ্জের ২১ জন শহীদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে রয়েছেন: রিয়া গোপ, মো. রোমান, আরমান মোল্লা, মো. ইরফান ভূইয়া, মো. তুহিন, মো. মোহসীন, মো. জনি, ইব্রাহিম, মো. স্বজন, মো. আদিল, পারভেজ হাওলাদার, মোহাম্মদ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া, সোলেমান, ইমরান হাসান, হযরত বিল্লাল, সফিকুল, মো. সজল, মো. মাবরুর হুসাইন, মোহাম্মদ মাহামুদুর রহমান খান, মোহাম্মদ সাইফুল হাসান এবং আহসান কবির।