অনলাইন ডেস্ক॥
ঢাকা, ৮ জুলাই ২০২৪: গত বছর জুলাই মাসে বাংলাদেশে ছাত্রনেতৃত্বাধীন বিক্ষোভ দমনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন বলে একটি ফাঁস হওয়া অডিও কলের সত্যতা নিশ্চিত করেছে বিবিসি আই।1 এই অডিওতে হাসিনাকে “প্রয়োজনে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করো। যেখানে পাবে, গুলি করবে” বলতে শোনা যায়।
গত মার্চে অনলাইনে ফাঁস হওয়া এই অডিও কলটি বাংলাদেশ সরকারের টেলিযোগাযোগ নজরদারি সংস্থা এনটিএমসি (NTMC) রেকর্ড করেছিল বলে বিবিসি জানিয়েছে।2 একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে যে কলটি ১৮ জুলাই হাসিনার ঢাকার বাসভবন গণভবন থেকে করা হয়েছিল।
মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ ও বিচার প্রক্রিয়া
জাতিসংঘের তদন্ত অনুযায়ী, গত বছরের বিক্ষোভে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হন।3 এই ঘটনার পর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। তিনি বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন এবং অনুপস্থিত অবস্থায় অভিযুক্ত। তার দল আওয়ামী লীগ সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে বলেছেন, “এই টেপ থেকে কোনো বেআইনি উদ্দেশ্যের প্রমাণ মেলে না। এটি প্রতিক্রিয়া মাত্র।”
তবে বিবিসি এবং ফরেনসিক প্রতিষ্ঠান ইয়ারশট (Earshot) কলটির প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ করে নিশ্চিত করেছে যে এটি কৃত্রিম নয় এবং কোনোভাবে কাটাছেঁড়া বা পরিবর্তন করা হয়নি। বাংলাদেশের পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) জানিয়েছে, হাসিনার কণ্ঠস্বরের সঙ্গে এটি পুরোপুরি মিলে গেছে।
সামরিক-গ্রেডের অস্ত্রের ব্যবহার ও হতাহতের ঘটনা
১৮ জুলাইয়ের এই কলের পর ঢাকার রাস্তায় সামরিক-গ্রেডের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়, যা পুলিশের গোপন নথিতে উল্লেখ রয়েছে। বিবিসি আরও জানিয়েছে, ৫ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে অন্তত ৫২ জন নিহত হয়। এর আগে এই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ছিল ৩০।
ঘটনার দিন সেনাবাহিনী সরে যাওয়ার পরপরই পুলিশ সরাসরি বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালায়। ঘটনাস্থল থেকে সিসিটিভি, ড্রোন এবং প্রত্যক্ষদর্শীর ভিডিও বিশ্লেষণ করে এই তথ্য উঠে এসেছে। ঘটনার পর প্রতিবাদকারীরা যাত্রাবাড়ী থানায় হামলা চালালে ছয়জন পুলিশ সদস্যও নিহত হন।
পুলিশের তদন্ত এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি
বাংলাদেশ পুলিশের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে জানিয়েছেন, গত বছরের সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে ৬০ জন পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং একটি নিরপেক্ষ তদন্ত চলছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং নিরপেক্ষ তদন্ত শুরু করেছে।
শেখ হাসিনার বিচার গত মাসে শুরু হয়েছিল। এই মামলায় তার বিরুদ্ধে গণহত্যা, উসকানি, ষড়যন্ত্র এবং বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে ভারত এখনো তাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে রাজি হয়নি।
জাতিসংঘের তদন্তেও শেখ হাসিনা ও তার সরকারের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের যুক্তিসঙ্গত প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও আওয়ামী লীগ তা প্রত্যাখ্যান করেছে। আওয়ামী লীগের একজন মুখপাত্র বলেছেন, “আমাদের সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। সরকার যে সিদ্ধান্তগুলো নিয়েছে, সেগুলো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এবং প্রাণহানি রোধের উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছিল।” বিবিসি এ বিষয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করলেও কোনো মন্তব্য পায়নি।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং আসন্ন নির্বাচন
এই মুহূর্তে বাংলাদেশ শাসন করছে শান্তিতে নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে দেশে রাজনৈতিক উত্তেজনা বাড়ছে। তবে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না, তা এখনো অনিশ্চিত।