আদালত প্রতিবেদক ॥
আলোচিত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপ করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারাকে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়েছে। মঙ্গলবার (৮জুলাই) ১৩৯ পৃষ্ঠার এই পূর্ণাঙ্গ রায় সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে আনা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ও এর কয়েকটি ধারার বৈধতা নিয়ে পৃথক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর এই রায় দেন বিচারপতি ফারাহ মাহবুব (বর্তমানে আপিল বিভাগের বিচারপতি) ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
ঘোষিত রায়ে ওই দুটি (২০ ও ২১) ধারাসহ পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত থাকা ৭ক, ৭খ, ৪৪(২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানের ৫৪টি ক্ষেত্রে সংযোজন, পরিমার্জন ও প্রতিস্থাপন আনা হয়েছিল। তবে, আদালত রায়ে বলেছেন যে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পুরোটা বাতিল করা হচ্ছে না। বরং বাকি বিধানগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব আগামী জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। রায়ে আদালত উল্লেখ করেছেন, জাতীয় সংসদ আইন অনুসারে জনগণের মতামত নিয়ে বিধানগুলো সংশোধন, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করতে পারবে।
আদালত আরও বলেছেন যে গণভোটের বিধান বিলুপ্ত করা হয়, যেটি সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অংশ ছিল। এটি ১৯৯১ সালে দ্বাদশ সংশোধনীতে যুক্ত হয়। সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের গণভোটের বিধান বিলুপ্তিসংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ৪৭ ধারা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় বাতিল ঘোষণা করা হলো। এর ফলে, দ্বাদশ সংশোধনীর ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস হয় এবং ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশিত হয়। এই পঞ্চদশ সংশোধনী আইনকে চ্যালেঞ্জ করে গত বছরের ১৮ আগস্ট সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচজন বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট গত ১৯ আগস্ট রুল দেন এবং রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে এই রায় দেওয়া হলো।