সোমবার, ০৭ জুলাই ২০২৫, ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন
২৩শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১২ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি
শিরোনাম :
ছয়বারের চেষ্টায় অবশেষে সফল আরিফা: সংসার সামলেও বিসিএস ক্যাডার! গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২২৪ নমুনায় ৩ জনের করোনা শনাক্ত ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে ফ্লাইট বাতিল দৈনিক একুশের চেতনা পত্রিকার সালথা উপজেলা প্রতিনিধির জন্মদিন উদযাপিত সালথার চর বাংরাইলে ছরোয়ার মাতুব্বরের সাথে জনতার মতবিনিময়: এক নতুন দিগন্তের সূচনা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে জামায়াত আমিরের হুঁশিয়ারি: ‘জনগণই আপনাদের সামলে দেবে’ ভুয়া ও জাল দলিলের মালিকদের বিচারের দাবিতে পাবনার আমিনপুরে বিক্ষোভ মিছিল মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ অস্বীকার করলেন শেখ হাসিনা: ‘লোক দেখানো বিচার’ আখ্যা দিল আওয়ামী লীগ যুক্তরাষ্ট্রের ২৪৯তম স্বাধীনতা দিবস আজ ডেঙ্গুর পাশাপাশি বাড়ছে করোনা: স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

ছয়বারের চেষ্টায় অবশেষে সফল আরিফা: সংসার সামলেও বিসিএস ক্যাডার!

Coder Boss
  • Update Time : রবিবার, ৬ জুলাই, ২০২৫
  • ১ Time View

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক॥
আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বিসিএসে সাফল্য পাওয়া যেন সোনার হরিণ হাতে পাওয়ার মতোই। অনেকেই এই স্বপ্ন পূরণের পেছনে ছুটলেও ক’জনের ভাগ্যেই বা এমনটা জোটে! তবে এবার সেই সোনার হরিণকে জয় করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) গণিত বিভাগের ২০১০-১১ সেশনের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আরিফা সুলতানা। সংসার সামলে তিনি ৪৪তম বিসিএসে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে এক দারুণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

এ দীর্ঘ যাত্রায় পরিবারের অনুপ্রেরণাই ছিল তার সবচেয়ে বড় শক্তি। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক তুলে ধরেছেন আরিফা সুলতানার এই অসাধারণ সাফল্যের গল্প।

শিক্ষাজীবন ও পারিবারিক পটভূমি
আরিফা সুলতানার শ্বশুরবাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার কৃষ্ণপুর গ্রামে। তিনি ২০০৭ সালে মণিরামপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১০ সালে মণিরামপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ২০১০-১১ সেশনে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগে ভর্তি হয়ে সাফল্যের সাথে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।

স্বপ্ন পূরণের আনন্দ
নিজের সাফল্যের অনুভূতি জানাতে গিয়ে আরিফা বলেন, “আল্লাহর রহমত আর শুভাকাঙ্ক্ষীদের শুভকামনায় আমার আজকের এই সফলতা। আমি এর নিয়ামক মাত্র। আমার পরিবারের জন্য এটা অত্যন্ত আনন্দের। ফলাফল দেখে স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছিল। এই অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়।”

মায়ের অনুপ্রেরণা ও স্বামীর অবিচল সমর্থন
আরিফার এই বিসিএস ক্যাডার হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান তার মা এবং স্বামীর। তিনি জানান, “আমার আম্মু অত্যন্ত মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও নানা প্রতিকূলতার কারণে বেশিদূর পড়াশোনা করতে পারেননি। সেই স্পৃহা আম্মু আমাদের ছয় ভাইবোনের মধ্যে জাগিয়ে রেখেছেন। আম্মুই আমাদের অনুপ্রেরণার ভিত্তি।” বিয়ের পর স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির আত্মীয়দের কাছ থেকে পেয়েছেন ইতিবাচক সমর্থন। বিশেষ করে তার স্বামী রবিউল ইসলাম তাকে সবসময় বলতেন, “তুমি তোমার মতো এগিয়ে যাও। আমি অপেক্ষা করছি।” এই আশ্বাসই আরিফাকে নিশ্চিন্ত রাখতো বলে তিনি জানান।

আরিফার স্বামী রবিউল ইসলাম বলেন, “আমার স্ত্রী একজন অধ্যবসায়ী মেয়ে। আমার চেয়ে আমার পরিবার তাকে বেশি সমর্থন করেছে। আমি শুধু হতাশার সময়গুলোতে পাশে থেকেছি। তার সাফল্যে আমি সত্যিই আনন্দিত।”

ভাইয়ের দেখানো পথ
আরিফা জানান, বিসিএস ক্যাডার হওয়া তার নিজের স্বপ্ন ছিল না। এর মূলে ছিলেন তার বড় ভাই। ভাইয়ের পরামর্শেই তিনি প্রথম বিসিএসের প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। “আব্বা প্রাইমারি স্কুলে শিক্ষকতা করলেও মানুষের সম্মান আর ভালোবাসা পেয়েছেন। আমরাও প্রত্যেকে আব্বার মতো সম্মানিত হতে চেয়েছি,” বলেন আরিফা।

আরিফার বড় ভাই, খুলনা পাবলিক কলেজের সহকারী অধ্যাপক তাকদীরুল গনী বলেন, “ভালো কিছু করতে হলে দীর্ঘ সময় প্রয়োজন। এজন্য এইচএসসির সময় থেকেই তাকে সাহস যুগিয়েছি। পরিবারের আগ্রহ ছিল সে ভালো কিছু করুক। আর তার এই সাফল্যে এক্সট্রা কারিকুলার এক্টিভিটিস সহযোগিতা করেছে। আমাদের পুরো পরিবার উচ্ছ্বসিত ও আনন্দিত।”

সংসার সামলে পড়াশোনা: নিয়মিত প্রচেষ্টা ও কৌশল
সংসার এবং প্রায় পাঁচ বছরের সন্তানকে সামলে বিসিএসের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় সফল হওয়া সহজ ছিল না। আরিফা বলেন, “পরিবারের সবার সমর্থনই সফলতায় পৌঁছাতে সাহায্য করেছে। আর আমি নিয়মিত পড়াশোনা করেছি।” তিনি জানান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ রেখে তিনি সিলেবাস ও বিগত সালের প্রশ্ন বিশ্লেষণ করে টপিক ধরে বই শেষ করতেন। অল্প অল্প টার্গেট নিয়ে পড়া শেষ করে ডাইজেস্ট থেকে পড়তেন এবং নতুন বিষয়গুলো মার্ক করে রাখতেন। টপিক শেষ হলে মডেল টেস্ট দিয়ে নিজেকে যাচাই করে দুর্বলতা থাকলে আবার সেভাবে পড়াশোনা করতেন।

ছয়বারের প্রচেষ্টায় কাঙ্ক্ষিত সাফল্য
টানা পাঁচবার ব্যর্থ হলেও আরিফা সুলতানা হাল ছাড়েননি। তিনি বলেন, “আমি ৩৭তম থেকে ৪৪তম বিসিএসে মোট ছয়টি বিসিএস দিয়েছি। পরপর তিনটি বিসিএসে প্রিলি ফেল করেছি। চতুর্থ বিসিএস অর্থাৎ ৪১তম বিসিএসে নন-ক্যাডারে আছি। আবার ৪৩তম বিসিএসে প্রিলি ফেল। সর্বশেষ ৪৪তম বিসিএসে অর্থাৎ ষষ্ঠবারে কাঙ্ক্ষিত সফলতা পেয়েছি।”

নবীনদের প্রতি বার্তা
যারা বিসিএস ক্যাডার হতে চান তাদের উদ্দেশ্যে আরিফা সুলতানা বলেন, “শুধু লক্ষ্য স্থির রেখে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। জীবন থেকে অজুহাত না খুঁজে, আপন হাতে অজুহাতকে দূরে সরাতে হবে। যেহেতু বিসিএস জার্নি বেশ দীর্ঘমেয়াদি, আপনাকে বিকল্পভাবে হলেও অর্থনৈতিকভাবে একটু সচ্ছলতা নিশ্চিত করতে হবে। সচ্ছলতা হয়তো সফলতা নিয়ে আসে না কিন্তু স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে আসবে, যা আপনার মানসিক শক্তি জোগাবে। আপনি আত্মবিশ্বাসী হয়ে আরও ভালো করার প্রয়াস পাবেন।”

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
পেশাগত দায়িত্ব সর্বোচ্চ সুচারুভাবে পালন করতে চান আরিফা। কারণ তার মতে, “সততাই সেবা।” এই সেবার ক্ষেত্র তিনি আরও বিস্তৃত করতে চান ঝরে পড়া শিশুদের কল্যাণে কাজ করার মধ্য দিয়ে।

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2024 Coder Boss
Design & Develop BY Coder Boss
themesba-lates1749691102