অনলাইন ডেস্ক॥
ঢাকা, ১ জুলাই ২০২৫, মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নতুন রূপে আবারও ফিরে আসছে। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুহার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশ করোনার নতুন একটি ঢেউয়ের মুখে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি) পরিচালিত সর্বশেষ কোভিড-১৯ সার্ভিলেন্স ‘ন্যাশনাল ইনফ্লুয়েঞ্জা সার্ভিলেন্স ও পিএইচওসি’ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি বছরের মে মাস থেকে দেশে করোনা সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়তে শুরু করেছে।
জুন মাসে ১ হাজার ৪০৯ জন সম্ভাব্য কোভিড-১৯ রোগীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়, যার মধ্যে ১৩৪ জন পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। এটি পরীক্ষার ৯.৫১ শতাংশ, যা ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে ২০২৩ সালের মে-আগস্ট এবং ২০২৪ সালের জানুয়ারি-আগস্টে সংক্রমণের হার ১.৫ শতাংশের বেশি ছিল।
নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন বিএ ২.৮৬ শনাক্ত
সর্বশেষ পাওয়া করোনাভাইরাসের নমুনাগুলোর জিনোম সিকোয়েন্সিং করে ওমিক্রন বিএ ২.৮৬ ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে, যা এর আগেও দেশে পাওয়া গিয়েছিল। আইসিডিডিআর,বি চলতি বছর সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হিসেবে নতুন দুটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি এবং এক্সএফসি-এর বৃদ্ধির তথ্য তুলে ধরেছে। জুন মাসের প্রথম ১০ দিনে ১৪টি জিনোম সিকোয়েন্স করা হয়, যার মধ্যে ১২টিতেই এই ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এটি ওমিক্রন জেএন.১-এর একটি উপশাখা। সম্প্রতি পাওয়া প্রায় সব নমুনাতেই এক্সএফজি ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাচ্ছে।
সংক্রমণ ও মৃত্যুর হালনাগাদ তথ্য
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের গত ৩০ জুনের বিবৃতি অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ২১ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। চলতি বছর মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫৬৯ জন এবং এ পর্যন্ত দেশে মোট করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৫২ হাজার ১১৪ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যাননি। তবে চলতি বছরে করোনায় মোট ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের সবাই জুন মাসেই মারা যান। দেশে এ পর্যন্ত করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের।
গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৫.৪৭ শতাংশ। এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৩.০৪ শতাংশ। সুস্থতার হার ৯৮.৪১ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১.৪৪ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কতা
হেলথ অ্যান্ড হোপ স্পেশালাইজড হাসপাতালের চেয়ারম্যান ও জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেছেন, “বাংলাদেশে করোনা বাড়ছে। আমার ব্যক্তিগত ধারণা, ছোট কিংবা বড় হোক আমরা করোনার আরেকটি ঢেউয়ের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি। যে প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।” তিনি আরও বলেন, “বর্তমানে আমরা যে সংখ্যক করোনা আক্রান্ত রোগীর তথ্য পাচ্ছি, তা প্রকৃত সংখ্যা নয়, আক্রান্তের একটি মাত্র অংশের তথ্য আমরা জানতে পারছি। বরফ খণ্ড যখন সমুদ্রের পানিতে ভাসমান থাকে, তখন বরফের ১২ ভাগের এক ভাগ পানির উপরে থাকে বাকিটা পানির নিচে থাকে। করোনার যে রোগীগুলোকে আমরা নির্ণয় করতে পেরেছি, সেটা হচ্ছে সেই ভাসমান অংশ। প্রকৃত সংখ্যা অনেক। আমরা নথিবদ্ধ মৃত্যু যে ২২ জন বলছি, আমাদের ধারণা এর বাইরেও অনেকে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। সবমিলে বলা যায়, ছোট বড় কিংবা মাঝারি যাই হোন না কেন, একটি ঢেউয়ের মুখোমুখি হতে যাচ্ছি।”
চিকিৎসক এবং জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার নতুন এই ধরনটির সংক্রামিত করার ক্ষমতা বেশি হলেও রোগের তীব্রতা তুলনামূলকভাবে কম। তবে অসাবধানতা এবং অসচেতনতার কারণে ধরনটি যেকোনো সময় শক্তিশালী হয়ে উঠতে পারে। তাই সবাইকে যথেষ্ট সচেতন থাকতে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে।